এইদিন বিনোদন ডেস্ক,২০ ফেব্রুয়ারী : মারাঠা সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ছত্রপতি তথা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের পুত্র সম্ভাজি মহারাজের জীবন অবলম্বনে তৈরি হয়েছে লক্ষ্মণ উতেকর পরিচালিত ‘ছাবা’ ছবি । ছবিতে সম্ভাজির ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভিকি কৌশল। তাঁর স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রশ্মিকা মান্দানা। আওরঙ্গজেবের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় খান্না । গত ১৪ ফেব্রুয়ারী প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে এই হিন্দি ছবিটি । বক্স অফিসে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এই ছবিটি ।
ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ ছিলেন একজন প্রকৃত ধর্মবীর, যিনি তাঁর পিতা ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের মতোই হানাদার ইসলামি শাসক আওরঙ্গজেবের সামনে মাথা নত করেননি, আওরঙ্গজেব ৪০ দিনেরও বেশি সময় ধরে সম্ভাজি মহারাজকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছিল । ‘ছাভা’ ছবি তারই ঝলক দেখানো হয়েছে । ছবিটি সপরিবারে ও সবান্ধব প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখে এসেছেন তেলেঙ্গানার ঘোসামহলের (Goshamahal) বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং । ছবিটি দেখার পর ইসলামি শাসক আওরঙ্গজেবের বর্বরতা ও নৃশংসতা দেখে তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে সম্ভাজিনগরে অবস্থিত নিষ্ঠুর আওরঙ্গজেবের সমাধি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলার দাবি তুলেছেন । শুধু তাই নয় ভারত ভূমি থেকে আওরঙ্গজেবের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলার দাবি জানান রাজা সিং ।
বুধবার(১৯ ফেব্রুয়ারী) একটা ভিডিও বার্তায় বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং বলেন,’বন্ধুরা, ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ কে নিয়ে যে ছবি তৈরি হয়েছে তার প্রথম শো আমি আমার বন্ধু এবং পরিবারের সঙ্গে দেখেছি। বন্ধুরা অনেক মানুষ জানেন না যে সম্ভাজি মহারাজের সংঘর্ষ বহুল জীবন কেমন ছিল । মহারাষ্ট্রের মানুষ সেই ইতিহাস জানেন কিন্তু ভারতের অন্যান্য রাজ্যের মানুষরা সেই ইতিহাস সম্পর্কে অবগত নয় । ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের ইতিহাস নিয়ে “ছাভা” নামে যে একটা ছবি তৈরি হয়েছে মানুষ জানতে পারছে ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজের আত্মত্যাগের কাহিনী কথা । কিভাবে আওরঙ্গজেব তাঁকে নৃশংস ভাবে মেরেছিল এই ছবির মাধ্যমে মানুষ জানতে পারছেন । আপনাদের খেয়াল আছে নাকি ভুলে গেছেন তা আমি জানিনা, কিন্তু আজ যারা ‘ছাভা’ ছবি দেখছে তাদের রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে । মানুষ বলছে আমাদের সম্ভাজিকে এত কষ্ট দেওয়া হয়েছিল ? এটা চলচ্চিত্র… সেন্সর বোর্ড আছে.. কেবল পাঁচটা অত্যাচারের কাহিনী ছবিতে বলা হয়েছে । মহারাষ্ট্রের যুবকরা জানে, আমরা যারা ইতিহাস পড়ি তারা জানি যে কিভাবে সম্ভাজি মহারাজকে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছিল ।’
এরপর তিনি মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান,’মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন যে আওরঙ্গজেবের সমাধি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দিন । যে সম্ভাজি মহারাজকে তড়পে তড়পে মেরেছিল, সেই আওরঙ্গজেবের সমাধি মহারাষ্ট্রের জমিতে থাকা উচিত নয় । এই আওরঙ্গজেবের নাম এখনো এদিকে ওদিকে দেখা যাচ্ছে । এই আওরঙ্গজেবের নাম নিশান মহারাষ্ট্রের পবিত্র ভূমি থেকে মুছে দেওয়া দরকার । ওর কবরে বুলডোজার চালানো দরকার । আপনার এটা ভাববেন না যে আওরঙ্গজেবের কোন অবৈধ সন্তানরা তার কবর বাঁচানোর জন্য রুখে দাঁড়াবে । যারা দাঁড়াবে তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়ার জন্য মহারাষ্ট্রের যুবক সামনে এসে প্রতিরোধ করবে । জয় ভবানী ।’
প্রসঙ্গত, ছত্রপতি সম্ভাজি মহারাজ একাই ৯ বছর ধরে আওরঙ্গজেবের বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি এবং তার পরবর্তী মারাঠা শাসকরা আওরঙ্গজেবকে ২৭ বছর ধরে মহারাষ্ট্রে বন্দী রেখেছিলেন, যার ফলে অবশেষে উত্তর ভারতে হিন্দু শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সম্ভাজি মহারাজ গোয়ায় পর্তুগিজদের সাথেও যুদ্ধ করেছিলেন, কারণ তারা হিন্দুদের গণ-ধর্মান্তরিত করার পরিকল্পনা করছিল এবং গোয়ায় হিন্দু মন্দির ভেঙে দিয়েছিল।তিনি ১৬ বছর বয়সে রামনগরে তাঁর প্রথম যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং জয়লাভ করেছিলেন। ১৬৭৫-৭৬ সালে তিনি গোয়া এবং কর্ণাটকে সফল অভিযান পরিচালনা করেছিলেন।সম্ভাজি মহারাজ তাঁর স্বল্প জীবনে যে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছিলেন, তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব সমগ্র ভারতবর্ষে পড়েছিল।
১৬৮৯ সালের গোড়ার দিকে, সম্ভাজি মহারাজ কোঙ্কনের সঙ্গমেশ্বরে একটি কৌশলগত বৈঠকের জন্য তার সেনাপতিদের ডেকে পাঠান। একটি সুপরিকল্পিত অভিযানের মাধ্যমে, গণোজি শিরকে (সম্ভাজি মহারাজের স্ত্রী যিশুবাইয়ের ভাই) এবং আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মুকাররব খান, যখন সম্ভাজি মহারাজ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন, তখন সঙ্গমেশ্বর আক্রমণ করেন। একটি ছোট আক্রমণের পর, ১৬৮৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মুঘল সৈন্যরা সম্ভাজি মহারাজকে বন্দী করে। তাকে এবং তার উপদেষ্টা কবি কলশকে বাহাদুরগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আওরঙ্গজেব তাদের ভাঁড়ের পোশাক পরে কুচকাওয়াজ করে অপমান করেন। পরে, সম্ভাজি মহারাজ এবং কবি কলশকে উটের সাথে উল্টো করে বেঁধে মুঘল সৈন্যরা তাদের দিকে পাথর, কাদা এবং গোবর ছুঁড়ে মারে।
যখন তাদের আওরঙ্গজেবের মুখোমুখি করা হয়, তখন সম্ভাজি মহারাজ সমস্ত মারাঠা দুর্গ সমর্পণ করলে, তার সমস্ত লুকানো ধনসম্পদ ফিরিয়ে দেন এবং তাকে সাহায্যকারী সকল মুঘল কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেন তাহলে তাকে জীবিত থাকতে দেওয়ার প্রস্তাব দেন । সম্ভাজি মহারাজ তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং পরিবর্তে মহাদেবের (ভগবান শিবের) প্রশংসা করেন। আওরঙ্গজেব তাকে এবং কবি কলশকে নির্যাতন করে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সম্ভাজি মহারাজ এবং কবি কলশকে এক পক্ষকাল ধরে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের মধ্যে তাদের চোখ এবং জিহ্বা উপড়ে ফেলা হয় এবং তাদের নখ উপড়ে ফেলা হয়। পরবর্তী অংশে তাদের চামড়া তুলে ফেলা হয়। ১৬৮৯ সালের ১১ মার্চ, সম্ভাজি মহারাজকে অবশেষে হত্যা করা হয়, জানা গেছে যে তাকে ‘ওয়াঘ নাখে’ (‘বাঘের নখ’, এক ধরণের অস্ত্র) দিয়ে সামনে এবং পিছনে ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং একটি কুড়াল দিয়ে শিরশ্ছেদ করা হয়। পুণের কাছে ভীম নদীর তীরে ভাধুতে তাকে এই নৃশংস বর্বরোচিতভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
প্রতিটি নির্যাতনের পর, আওরঙ্গজেব তাকে জিজ্ঞাসা করতেন যে তার কি যথেষ্ট হয়েছে এবং তিনি ধর্মান্তরিত হতে চান কিনা – কিন্তু সাহসী রাজা বারবার তা প্রত্যাখ্যান করতেন। এর মাধ্যমে তিনি ধর্মবীর (ধর্মরক্ষক) উপাধি অর্জন করেন যার নামে তিনি আজও পরিচিত। আওরঙ্গজেব সম্ভাজি মহারাজের দেহ টুকরো টুকরো করে নদীতে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ‘ভাধু’ নামক নিকটবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা তাঁর দেহের যত টুকরো পাওয়া সম্ভব তা সংগ্রহ করে, সেগুলি একসাথে সেলাই করে তাঁর দেহের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে। এই গ্রামবাসীরা পরবর্তীতে ‘শিবলে’ বা ‘শিবলে’ উপাধি ব্যবহার করতে শুরু করে, যার অর্থ মারাঠি ভাষায় ‘সেলাই’।।