এইদিন ওয়েবডেস্ক,তেল আবিব,১৭ ফেব্রুয়ারী : ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী রবিবার নিশ্চিত করেছে যে তারা লেবাননের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালিয়েছে এবং বলেছে যে তারা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর স্থাপনাগুলিকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে যেখানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যকলাপ চিহ্নিত করা হয়েছিল।
সামরিক বাহিনীর মতে, হিজবুল্লাহর লক্ষ্যবস্তুতে রকেট লঞ্চার এবং অন্যান্য অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত ছিল।আইডিএফ জানিয়েছে,’এই স্থানগুলিতে সন্ত্রাসী কর্মীদের কার্যকলাপ ইসরায়েল এবং লেবাননের মধ্যে সমঝোতার লঙ্ঘন ।’ লেবাননের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে যে ইসরায়েলি বিমান দেশটির পূর্বে বেকা উপত্যকায় তিনটি হামলা চালিয়েছে। লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তার দুই দিন আগে এই খবর সামনে এলো।
লেবাননের সরকারি জাতীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে,’শত্রু যুদ্ধবিমানগুলি বেকা উপত্যকার উত্তরে হারবাতা শহরের উপকণ্ঠে দুটি এবং হালবাতা শহরে তৃতীয় হামলা চালিয়েছে।’ হারবাতা ইসরায়েল সীমান্ত থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।লেবাননের গণমাধ্যম আরও জানিয়েছে যে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে দক্ষিণ লেবাননের শহর হুলাতে ইসরায়েলি গুলিতে একজন মহিলা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আইডিএফ জানিয়েছে যে তারা হুলায় জড়ো হওয়া কয়েক ডজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে শনাক্ত করেছে, যাদের মধ্যে অনেকেই লেবাননের সেনাবাহিনীর বাধা ভেঙে ইসরায়েলি সৈন্যদের কাছে পৌঁছেছিল।
সন্দেহভাজনদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য সৈন্যরা গুলি চালায়, এবং কেউ কেউ তা করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, আইডিএফ বলেছে যে তারা একটি “গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া” শুরু করেছে, যার মধ্যে সাধারণত সন্দেহভাজনের পায়ে গুলি চালানো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সেনাবাহিনী আরও জানিয়েছে, ঘটনার সময় বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একটি সামরিক সূত্র জানিয়েছে যে, ওই এলাকায় একজন বেসামরিক মহিলা নিহত হওয়ার দাবি সম্পর্কে আইডিএফ অবগত নয়। লেবাননের সরকারি সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে যে আইডিএফ শহরে তিনজন বেসামরিক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যে দক্ষিণ লেবাননে এখনও যেসব এলাকায় সেনা মোতায়েন রয়েছে, সেখানে না যাওয়ার জন্য লেবাননের নাগরিকদের বারবার সতর্ক করে দিয়েছে আইডিএফ। ১৮ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ লেবাননের বেশিরভাগ এলাকা থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে এখনও সেনা মোতায়েন রয়েছে, এবং পাঁচটি কৌশলগত অবস্থানে থাকবে বলে জানা গেছে। চুক্তির অধীনে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের সাথে সাথে লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের পাশাপাশি নিজের সেনা মোতায়েন করবে । ইসরায়েল বলেছে যে যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী অনুসারে লেবাননের সেনাবাহিনী দক্ষিণ লেবাননে কার্যকরভাবে মোতায়েন করেনি এবং হিজবুল্লাহকে পুনর্গঠন থেকে বাধা দিচ্ছে না। হিজবুল্লাহকে লিটানি নদীর উত্তরে – সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে – পিছু হটতে হবে এবং দক্ষিণে অবশিষ্ট যেকোনো সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলতে হবে বলে শর্ত দিয়েছে তেল আবিব ।
হিজবুল্লাহর প্রধান রবিবার বলেছেন, চুক্তি অনুসারে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দেশ থেকে প্রত্যাহার নিশ্চিত করা লেবানন সরকারের দায়িত্ব।হিজবুল্লাহর নাইম কাসেম টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে বলেছেন,
‘১৮ ফেব্রুয়ারি ইসরায়েলকে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করতে হবে, তাদের আর কোনও অজুহাত মেনে নেওয়া হবে না ।’ তিনি আরও বলেন,ইসরায়েলকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো লেবাননের রাষ্ট্রের দায়িত্ব ।’
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে বিনা উস্কানিতে ইসরায়েলে প্রায় প্রতিদিনই হামলা শুরু করে লেবাননের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি হিজবুল্লাহ । ইরান-সমর্থিত হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে পনবন্দি করার একদিন পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ক্রমাগত রকেট হামলা বন্ধ করার লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে ইসরায়েল লেবাননে সেনা পাঠায়, যার ফলে প্রায় ৬০,০০০ উত্তরাঞ্চলীয় মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। দুই মাসের স্থল ও বিমান অভিযান নভেম্বরের যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়, হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ নেতৃত্ব নিহত হওয়ার এবং এর ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার পর এই যুদ্ধবিরতি মেনে নেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ।।

