এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৭ ফেব্রুয়ারী : ‘ডাঙ্কি’ রুট দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশকারী ভারতীয়দের নির্বাসন অব্যাহত রয়েছে। ফের আমেরিকা থেকে ১১২ জন অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত শনিবারও, একটি বিমানে ১১৯ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তাদের বেশিরভাগই হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গুজরাটের বাসিন্দা ছিলেন। ফ্লাইটে ফিরে আসা লোকেরা অভিযোগ করেছিলেন যে তাদের হাতকড়া পরানো হয়েছিল, শিকল পরানো হয়েছিল এবং তাদের পাগড়ি খুলে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু কেন ? এর উত্তর নির্বাসিতরাই দিয়েছেন ।
এর আগে,গত ৫ ফেব্রুয়ারি, আগত একটি ফ্লাইটের যাত্রীরাও একই রকম অভিযোগ করেছিলেন। তবে, এখন যাকে নির্বাসিত করা হচ্ছে তিনি নিজেই এর কারণ প্রকাশ করেছেন। ২৫ বছর বয়সী মনদীপ সিং, যাকে আমেরিকা থেকে নির্বাসিত করা হয়েছিল, তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন যে নিরাপত্তার স্বার্থে শেকল এবং হাতকড়া ব্যবহার করা হয়েছিল। মনদীপ সিং বলেন, আমেরিকা থেকে বহিষ্কারের সময় অনেকেই খুব বিষণ্ণ থাকেন এবং তারা বিমানের ভেতরে কিছু করতে পারেন, তাই তাদের থামাতে এই শেকল এবং হাতকড়া পরা হয়েছিল। মনদীপ সিং বলেন,আমাদেরও হাতকড়া পরিয়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল, ঠিক যেমন ৫ ফেব্রুয়ারি পাঠানো হয়েছিল। আমরা প্রায় ৬৬ ঘন্টা ধরে নরকে বাস করেছি। কিন্তু এটা ছিল নির্বাসিত মানুষের নিরাপত্তার জন্য কারণ কেউ অন্যদের মানসিক অবস্থা অনুমান করতে পারে না, এবং বিষণ্ণতার মধ্যে যেকোনো কিছু ঘটতে পারে।’ মনদীপ সিং বলেন,’নির্বাসনের পর আমাদের মানসিক অবস্থা ভালো নেই। আমাদের অনেকেই বিষণ্ণতায় ভুগছি… এই ধরণের বিষণ্ণতা কেবল আমাদের জন্যই নয়, বিমানের সকলের জন্যই বিপজ্জনক হতে পারত। তাই, কোনও ক্ষতি এড়াতে, কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের শেকল দিয়ে আটকে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত একজন শিখ যুবক এক যুবক জসবিন্দর সিং পাগড়ি খুলে ফেলার বিষয়ে সত্য কথা বলেছেন। তিনি বলেন,’আমাকে ২৭ জানুয়ারী আটক করে একটি আটক কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তারা আমাকে আমার পাগড়ি সহ সমস্ত পোশাক খুলে ফেলতে বলে ।’ জসবিন্দর বলেন,’আমি এবং অন্যান্য শিখ যুবকরা তাদের অন্তত আমাদের পাগড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছিলেন ‘যদি তোমাদের কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে, তাহলে এর জন্য কে দায়ী থাকবে?’
আজ সোমবারেও আমেরিকান বিমান বাহিনীর একটি বিমান ১১২ জনকে অমৃতসরে নিয়ে এসেছে। এই লোকদের বেশিরভাগই হরিয়ানা, পাঞ্জাব এবং গুজরাটের বাসিন্দা । আমেরিকায় অনুপ্রবেশকারীদের এই তৃতীয় দলটি রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫) সন্ধ্যায় অমৃতসরের গুরু রামদাস বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এই ১১২ জনের মধ্যে ৪৪ জন হরিয়ানার, ৩৩ জন গুজরাটের ৩১ জন পাঞ্জাবের,২ জন উত্তরপ্রদেশের, ১ জন উত্তরাখণ্ডের এবং ১ জন হিমাচল প্রদেশের। নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত ১১২ জনকে সংক্ষিপ্তভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল এবং আজ ১৭ ফেব্রুয়ারী সোমবার সকালে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । হরিয়ানা তার লোকদের জন্য একটি বাস পাঠিয়েছিল, অন্যদিকে পাঞ্জাবও কিছু যানবাহনের ব্যবস্থা করেছিল।
উল্লেখ্য,এখনও পর্যন্ত আমেরিকা থেকে তিনটি ফ্লাইট ভারতীয়দের নির্বাসন দেওয়া হয়ে ছে। এর মধ্যে একটিতে ১০৪ জন ভারতীয়কে, দ্বিতীয়টিতে ১১৯ জনকে এবং তৃতীয়টিতে ১১২ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩৫ জন ভারতীয়কে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আগামী দিনে আরও ভারতীয়কে নির্বাসিত করা হতে পারে ।।

