স বেদৈতৎ পরমং ব্রহ্মধাম
যত্র বিশ্বং নিহিতং ভাতি শুভ্রম্।
উপাসতে পুরুষং যে হ্যকামাস্তে
শুক্ৰমেতদতিবর্তন্তি ধীরাঃ॥১
সরলার্থ: যে-ব্যক্তি নিজ আত্মাকে জানেন, তিনি ব্রহ্মকেও জানেন—যে-ব্রহ্ম জগৎকে ধারণ করে রেখেছেন। তিনি একথাও জানেন—এই জগৎকে যে দেখা যায় তার কারণ এ জগৎ ব্রহ্মে আশ্রিত। যে-সকল সাধক নিষ্কামভাবে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষের উপাসনা করেন, তাঁদের আর পুনর্জন্ম হয় না।
কামান্ যঃ কাময়তে মন্যমানঃ
স কামভির্জায়তে তত্র তত্র।
পর্যাপ্তকামস্য কৃতাত্মনস্তু
ইহৈব সর্বে প্রবিলীয়ন্তি কামাঃ॥২
সরলার্থ: যে-সকল ব্যক্তি বাসনা তাড়িত হয়ে ভোগ্য বস্তু লাভের আশায় তার পেছনে ছোটে সেই সব ব্যক্তি কাম্য বিষয়ের মধ্যেই পুনরায় জন্মগ্রহণ করে। অপর দিকে, যিনি আপ্তকাম (অর্থাৎ যে-ব্যক্তির সকল কামনা বাসনা পূর্ণ হয়েছে) তিনি এই জীবনেই নিজ আত্মাকে উপলব্ধি করেন, এবং তাঁর সকল বাসনার নিবৃত্তি হয়।
নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো
ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন।
যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্যস্তস্যৈষ
আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্॥৩
সরলার্থ: পাণ্ডিত্যের দ্বারা আত্মাকে লাভ করা যায় না, বুদ্ধি বা বিচার শক্তির দ্বারাও নয়। আবার শাস্ত্র শ্রবণের দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায় না। সাধকের আন্তরিক ইচ্ছার দ্বারাই তাঁকে লাভ করা যায়। সেই সাধকের কাছে তিনি নিজের স্বরূপ প্রকাশ করেন।
নায়মাত্মা বলহীনেন লভ্যো
ন চ প্রমাদাত্তপসো বাঽপ্যলিঙ্গাৎ।
এতৈরুপায়ৈর্যততে যস্তু বিদ্বাং-
স্তস্যৈষ আত্মা বিশতে ব্রহ্মধাম॥৪
সরলার্থ: দুর্বল ব্যক্তি কখনও আত্মাকে জানতে পারেন না। আবার যাঁরা আত্মনিষ্ঠ নন তাঁরাও আত্মাকে জানতে পারেন না। একই ভাবে বলা যায় যে, ত্যাগ-বৈরাগ্য-হীন কঠোর পরিশ্রমের (দৈহিক অথবা মানসিক) দ্বারাও তাঁকে লাভ করা যায় না। কিন্তু যে-সকল জ্ঞানী ব্যক্তিরা কঠোর পরিশ্রমের সাথে এই সব উপায়গুলিকে অভ্যাস করেন, তাঁরাই আত্মাকে জানতে সক্ষম হন। অর্থাৎ তাঁরা ব্রহ্মধামে প্রবেশ করেন এবং এই নিখিল বিশ্বের সাথে এক হয়ে যান।
সংপ্রাপ্যৈনমৃষয়ো জ্ঞানতৃপ্তাঃ
কৃতাত্মানো বীতরাগাঃ প্রশান্তাঃ।
তে সর্বগং সর্বতঃ প্রাপ্য ধীরা
যুক্তাত্মানঃ সর্বমেবাবিশন্তি॥৫
সরলার্থ: সত্যদ্রষ্টা ঋষিরা জ্ঞান লাভ করে সেই জ্ঞানে তৃপ্ত হন। এর ফলে তাঁদের বিষয়াসক্তি দূর হয় এবং তাঁরা প্রশান্তি লাভ করেন। এই প্রাজ্ঞ ব্যক্তিরা সর্বব্যাপী ব্রহ্মের সঙ্গে একাত্ম বোধ করেন। ব্রহ্মে লীন হয়ে তাঁরা সর্বত্র এবং সর্ববস্তুতে অবস্থান করেন।
বেদান্তবিজ্ঞানসুনিশ্চিতর্থাঃ
সন্ন্যাসযোগাদ্যতয়ঃ শুদ্ধসত্ত্বাঃ।
তে ব্রহ্মলোকেষু পরান্তকালে
পরামৃতাঃ পরিমুচ্যন্তি সর্বে॥৬
সরলার্থ: যাঁরা বেদান্তশাস্ত্রের মর্মার্থ জেনেছেন, ত্যাগ বৈরাগ্য অভ্যাসের ফলে যাঁদের চিত্তশুদ্ধি হয়েছে এবং যাঁদের স্বার্থবুদ্ধি চিরতরে ঘুচে গেছে সে সকল সাধকরা এই জীবনেই আত্মাকে উপলব্ধি করেন এবং মৃত্যুকালে মুক্ত হয়ে ব্রহ্মে লীন হন।
গতাঃ কলাঃ পঞ্চদশ প্রতিষ্ঠা
দেবাশ্চ সর্বে প্রতিদেবতাসু।
কর্মাণি বিজ্ঞানময়শ্চ আত্মা
পরেঽব্যয়ে সর্ব একীভবন্তি॥৭
সরলার্থ: তখন দেহের পনেরটি অংশ তাদের মূল কারণাবস্থায় ফিরে যায়। ইন্দ্রিয়গুলিও তাদের অধিষ্ঠাত্রী দেবতায় লীন হয়। কেবলমাত্র সঞ্চিত কর্ম যা এখনও ফল দিতে শুরু করেনি এবং বিজ্ঞানময় আত্মা অব্যয় পরব্রহ্মে একত্ব লাভ করে।
যথা ন্যঃ স্যন্দমানাঃ সমুদ্রে-
ঽস্তং গচ্ছন্তি নামরূপে বিহায়।
তথা বিদ্বান্নামরূপাদ্বিমুক্তঃ
পরাৎপরং পুরুষমুপৈতি দিব্যম্॥৮
সরলার্থ: বহমান নদীগুলি নিজেদের নামরূপ ত্যাগ করে অবশেষে সমুদ্রে মিশে যায়। অনুরূপভাবে ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ নামরূপ থেকে মুক্ত হয়ে জ্যোতিস্বরূপ পরমাত্মায় লীন হয়ে যান।
স যো হ বৈ তৎ পরমং ব্রহ্ম বেদ
ব্ৰহ্মৈব ভবতি নাস্যাব্রহ্মবিৎ কুলে ভবতি।
তরতি শোকং তরতি পাপ্মানং
গুহাগ্রন্থিভ্যো বিমুক্তোঽমৃতে ভবতি॥৯
সরলার্থ: যিনি পরব্রহ্মকে জানেন, তিনি ব্রহ্মই হয়ে যান, এবং তাঁর বংশে কেউ ‘অব্রহ্মবিদ্’ জন্মায় না। তিনি সব শোকদুঃখের পারে চলে যান। হৃদয়ের অজ্ঞানতাজনিত বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে তিনি অমৃতত্ব লাভ করেন।
তদেতদৃচাঽভ্যুক্তম্—
ক্রিয়াবন্তঃ শ্রোত্রিয়া ব্ৰহ্মনিষ্ঠাঃ
স্বয়ং জুহ্বত একৰ্ষিং শ্রদ্ধয়ন্তঃ।
তেষামেবৈতাং ব্রহ্মবিদ্যাং বদেত
শিরোব্রতং বিধিবদ্ যৈস্তু চীর্ণম্॥১০
সরলার্থ: শাস্ত্র বলেন : যিনি শাস্ত্রের নিয়ম মেনে কর্ম করেন, শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন, ব্রহ্মনিষ্ঠ হন, একৰ্ষি যজ্ঞানুষ্ঠান করেন এবং শাস্ত্রীয় বিধি অনুযায়ী মস্তকে অগ্নি ধারণ করেন, তিনিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ্যালাভের পক্ষে উপযুক্ত; অন্যরা নয়।
তদেতৎসত্যমৃষিরঙ্গিরাঃ পুরোবাচ নৈতদচীর্ণব্রতোঽধীতে।
নমঃ পরমঋষিভ্যো নমঃ পরমঋষিভ্যঃ॥১১
সরলার্থ: পুরাকালে ঋষি অঙ্গিরা শৌনককে পরম সত্যের অর্থাৎ এই ব্রহ্মতত্ত্বের শিক্ষা দান করেছিলেন। যে সব মানুষ যাগযজ্ঞ করেন না, তাঁরা উপনিষদও পাঠ করেন না। যাঁরা এই জ্ঞান দান করেন সেই পরম ঋষিদের বারবার নমস্কার করি।
।। মুণ্ডক উপনিষদের তৃতীয় মুণ্ডকের দ্বিতীয় অধ্যায় এইখানে সমাপ্ত ।।
ওঁ ভদ্রং কর্ণেভিঃ শৃণুয়াম দেবা
ভদ্রং পশ্যেমাক্ষভির্যজত্রাঃ।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তুষ্টুবাংসস্তনূভি-
র্ব্যশেম দেবহিতং যদায়ুঃ॥
ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ॥
Mundaka Upanishad – III Mundaka Chapter II

