‘
এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১২ ফেব্রুয়ারী : বিগত সরস্বতী পূজোর আবহে দেবী সরস্বতীকে ‘কামের দেবী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন এরাজ্যের বামপন্থী অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য । একটি বাংলা সংবাদপত্রের পোর্টালের সাক্ষাৎকারে এই প্রকার বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি । অম্বরীশের সেই মন্তব্যের জের ধরে শ্রীজা মুখার্জি (Sreeja Mukherjee)নামে একজন সিপিএমের ক্যাডার সরাসরি হিন্দুদের দেবদেবীর পূজো বন্ধ করার দাবি তুলেছেন । মূর্তি পূজাকে তিনি ‘কু প্রথা’ বলে মনে করছেন । তিনি ওই পোর্টালের প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাগ করে লিখেছেন,’আচ্ছা কারো মনে একবারও প্রশ্ন ওঠে না,ধর্মনিরপেক্ষ একটা রাষ্ট্রে সরকারি স্কুলে কেন সরস্বতী পুজো হবে ? শুধুমাত্র সংখ্যার জোড়ে, সংখ্যা গুরু বলে আমরা কেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচরণ করব? কেন স্বাধীনতার ৭৭ বছর পরেও দেশের সংবিধানকে সম্মান দেব না? কেন মূর্তি পূজোর মতন কু প্রথা থেকে আমাদের সন্তানদের দূরে রাখবো না?’
তার এই মন্তব্যের স্ক্রীন শর্ট ‘দ্য সনাতনী এম্পেরর (@gaudiya_emperor)-এ শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘কমিউনিস্টের নেংটি ছানা বা বলতে পারেন মো*#র বিছা# গরম করা ছেঁকুলার বা বলতে পারেন ফাঁকা ফ্ল্যাটে মো*#র লেনিন শেখানো মাকুনি।এদেরকে ০ করতে হবে ভোটের শতাংশে তবেই আমাদের সমাজ পরিষ্কার থাকবে।জয় মা সরস্বতী ।’
অবশ্য সৌমেন কয়াল নামে একজন কমেন্ট সেকশনে লেখেন, ‘কমরেড যা শুরু করেছেন শেষে না গৌরী লঙ্কেশ হয়ে যান ৷’ উত্তরে শ্রীজা মুখার্জি লেখেন, ‘এটা কি থ্রেট ? আমার কি পুলিশে জানানো উচিত আপনি ওপেন থ্রেট দিচ্ছেন ?’
সৌমেন কয়াল ও শ্রীজা মুখার্জির ওই বার্তালাপের স্ক্রীন শর্ট ফেসবুকে ভাগ করে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের ফেসবুক পেজে জগন্নাথ চক্রবর্তী নামে একজন লিখেছেন,’নারীবিদ্বেষী বিজেপি এবার খুনের হুমকি দিচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে শ্রীজা মুখার্জি কে । এফ আই আর হলো । এবার আরএসএস-এর পুলিশ কি করছে সেটাই দেখার।নাহলে সরাসরি কোর্টে যেতে হবে।’
যদিও জগন্নাথ চক্রবর্তীর এই পোস্টের কমেন্ট সেকশনে আয়ূষী রায় নামে একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন,’বলি তোদের এসএস গুলো ছাড়ব নাকি রে ? রেপ থ্রেটের কেসে জেলে যাবি তো ?’
প্রসঙ্গত,বামপন্থী অভিনেতা অম্বরীশ ভট্টাচার্য সেই সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছিলেন,’বাবা কড়া বামপন্থী। বাড়িতে পুজোপাঠ নেই। আমারও মন্ত্রতন্ত্রে একটুও আস্থা নেই। কিন্তু পুজোর দিন সকালে ধোপদুরস্ত হয়ে পাড়ার প্যান্ডেলে থাকতে কোনও আপত্তি নেই। অঞ্জলি দিইনি কোনও দিন। পুজোর আগেই কুল খেয়ে নিতাম। মাথায় সারা ক্ষণ ‘দুষ্টু সরস্বতী’র বাস। ফলে, পড়াশোনায় অষ্টরম্ভা। কিন্তু সকাল সকালে স্নান সেরে হলুদ শাড়িতে নিজেকে সাজিয়ে মেয়েরা যখন বসে ফল কাটত, মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। সরস্বতী পুজোর দিন সমস্ত নারী আমার চোখে মারকাটারি সুন্দরী!’ এরপরই সেই বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন ওই অভিনেতা৷ তিনি বলেছেন,’দেবীর কাছে কোনও দিন কিচ্ছু চাইনি। না চাইতেই, বাগ্দেবী এত প্রেম দিয়েছেন জীবনে! তাই তো পুরাণ ওঁকে কামের দেবীও বলে। কূপমণ্ডুক বাঙালির কাছে তো আবার ‘কাম-কলা’ শব্দগুলো নিষিদ্ধ! দেবীও তাই পুঁথির ভারে চোখ নামিয়ে শুধু বিদ্যা বিলিয়ে গেলেন।’
তার এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি প্রতিক্রিয়ায় এক্স-লিখেছিলেন,’আমাদের সমাজে ধর্ম ও দেব-দেবীদের প্রতি শ্রদ্ধা একটি ঐতিহ্যবাহী এবং সংবেদনশীল বিষয়। দেবী সরস্বতী শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের নয়, ভারতীয় সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি জ্ঞান, বিদ্যা, সঙ্গীত ও শিল্পকলার দেবী হিসেবে সম্মানিত। পুরাণে বা শাস্ত্রগ্রন্থে সরস্বতীকে কামের দেবী হিসেবে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মতো বামপন্থী অভিনেতারা নিজেদের মতামত বা ব্যঙ্গাত্মক দৃষ্টিকোণ থেকে দেব-দেবীদের নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিন্তু তা যেন অপমানজনক ও বিভ্রান্তিকর না হয়। ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঘাত করা বা অবমাননাকরভাবে উপস্থাপন করা শিল্পের নামে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এটি স্পষ্ট যে, দেবী সরস্বতীকে বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী হিসেবে উপস্থাপন করাই হিন্দু পুরাণ ও ধর্মগ্রন্থের মূল বার্তা। অম্বরীশ ভট্টাচার্যের মন্তব্য একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার সামিল। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, কিন্তু সেই স্বাধীনতা যেন কারও ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার মাধ্যম না হয়। এই ধরনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং যদি লেখক ক্ষমা না চায় এই মন্তব্যের জন্য তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব । আনন্দবাজার আপনাদের থেকে এর থেকে বেশি কিছু আশা করা যায় না। কিন্তু দয়া করে এই বেকার লোক গুলোর লেখা ছাপা বন্ধ করুন ৷’।