প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ ফেব্রুয়ারী : পড়াশুনা লাটে তুলে দিয়ে ক্লাস ঘরের চেয়ারে হেলান দিয়ে দু’পা টেবিলের উপর রেখে গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছেন শিক্ষক।আর পড়ুয়ারা খেলে বেড়াচ্ছে স্কুলের মাঠে।শিক্ষকের এই ঘুমের ভিডিও সামাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে।ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এই ভিডিও যাচাই না করলেও ভিডিওটি তোলপাড় ফেলে দিয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে। কেননা ভিডিওয় যাঁকে ক্লাস রুমে ঘুমাতে দেখা যাচ্ছে তিনি হলেন মেমারি ১ ব্লকের মগলমপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার বিশ্বাস।ক্লাস রুমে তাঁর ঘুম দেওয়ার ভিডিওটি নাকি অতি সম্প্রতি তোলা হয়েছে।এলাকাবাসীর কথায় ,শুধু ক্লাসে ঘুম ডেওয়া শিক্ষকই নয়, জামা খুলে ঘুরে বেড়ানো শিক্ষকও এই স্কুলে রয়েছে ।
সরকারী স্কুলের ক্লাস রুমে প্রধান শিক্ষকের ঘুমানোর ভিডিয়ো দেখে যারপরনাই বিরক্ত জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান তথা মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য। তিনি বলেন,“ কোনও শিক্ষকের এ রকম কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।ওই শিক্ষককে শো-কজ করা হবে। সংসদে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হবে বলেন মধুসূদন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক অবশ্য স্কুলে এসে ঘুমানোর বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন।
এদিকে এই ভিডিয়ো-ছড়িয়ে পড়ার পর মগলমপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মেমারি থানায় একটি অভিযোগ জমা করেন।সেই অভিযোগে তিন দাবি করেছেন,“কয়েকজন দুস্কৃতি গত ৩১ জানুয়ারি তাঁর স্কুলের ভিতরে ঢুকে পড়ে। তারা ক্লাস ঘরের দরজা বন্ধ করেদিয়ে তাঁকে মারতে শুরু করে। এমনকি দুস্কৃতিরা নাকি তাঁর মাথাতে পিস্তল ঠেকিয়ে তাঁর গলায় থাকা সোনার গয়না ও পকেটে থাকা টাকা ছিনতাই করেছে। সরস্বতী পুজোর পাঁচ হাজার টাকার জন্যেই নাকি এমন হামলা হয়েছিল বলে প্রধান শিক্ষকের দাবি ।
যদিও স্কুলের অন্য দুই শিক্ষক এমন অভিযোগের কথা শুনে কার্যত স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন।তাঁরা বলেন ,’’ওই দিন আমরা তিনজনই স্কুলে ছিলাম। স্কুলে ওইদিন কোনও পড়ুয়া আসেনি। আমরা নিজেদের ক্লাস ঘরেই ছিলাম।বহিরাগতরা স্কুলে এসে ওইদিন প্রধান শিক্ষকের উপর হামলা চালিয়েছে, এমনটা তাঁরা এই প্রথম শুনছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তাঁদের মধ্যে একজন হলেন বাসুদের হাজরা। প্রধান শিক্ষকের আনা অভিযোগের বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিন বলেন,’অভিযোগ মিথ্যা। আসলে প্রধান শিক্ষকের জন্যে মগলমপুর প্রাথমিক স্কুলে প্রতিদিন ছাত্র-ছাত্রী কমছে। পড়ুয়ারা পাশের গ্রামের স্কুলে চলে যাচ্ছে। এ সব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেই প্রধান শিক্ষক মিথ্যা অভিযোগ করছেন।মিথ্য অভিযোগ বলেই ,প্রধান শিক্ষকের সহকর্মীরা এমন অভিযোগের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছেন’।অভিযোগে নাম থাকা সুমন্ত ঘোষ নামে অপর আর একজন বলেন,’স্কুলে সরস্বতী পুজো হবে কি না,তা জানতে আমরা দু’জন স্কুল গিয়েছিলাম। এর বাইরে আর কিছুই হয়নি।প্রধান শিক্ষকতো হামেশাই স্কুলের চাবি হারিয়ে ফেলেন। তিনি স্কুলে এসে ঘুমিয়ে থাকেন।
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য লুৎফর বেগমও জানান, প্রধান শিক্ষক মাঝেমধ্যেই স্কুলে ঘুমিয়ে পড়েন। তার এক সহকারী শিক্ষক আবার জামা খুলে স্কুলে পড়ান।এসব না করতে আমরা বার বার বলেছি। শিক্ষকের এ হেন আচরণ কখনই কাম্য নয় । এতে শিক্ষাগুরু প্রতি শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা হারাবে ।।

