প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৭ ফেব্রুয়ারী : পুলিশের পর এবার বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকরা আক্রান্ত হলেন তৃণমূলের নেতা সহ তার সাগরেদদের হাতে। তৃণমূল নেতার বাড়ির ‘হুকিং’ কাটতে গিয়েই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকরা তৃণমূল নেতার রোষানলে পড়ে প্রহৃত হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের ঘটে মঙ্গলকোট থানার ইরসোন্ডা গ্রামে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার দাবি,হামলায় তাঁদের ৫ জন আধিকারিক ও কর্মী জখম হয়েছেন।তারমধ্যে সংস্থার স্পেশাল অফিসার তথা অবসরপ্রাপ্ত ডিএসপিও রয়েছেন।তিনি গুরুতর চোট পেয়েছেন ।গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আক্রান্তদের চিকিৎসা শেষে সন্ধ্যায় সংস্থার গুসকরার স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল খালেক মঙ্গলকোট থানায় ওই তৃণমূল নেতা রমজান শেখ-সহ কয়েকজনের নামে মঙ্গলকোট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । যদিও রমজান তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তৃণমূলের মঙ্গলকোটের চাণক অঞ্চলের সভাপতি রমজান শেখ । বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার অভিযোগ রজজান শেখ চুরি করে তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েেছে।চুরি করা বিদ্যুৎতেই তার বাড়িতে এসি, সাবমার্সিবল চলে ,আলোও জ্বলে। এইভাবে বিদ্যুৎ চুরি বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ছ’জনের দল দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে অভিযানে নামে।একটি দল রমজান শেখের সাবমার্শিবলের কাছে চলে যায়। আরেকটি দল রমজানের বাড়িতে যায়।
বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা সাব-মার্শিবলের কাছে গিয়ে দেখেন সেখানে রমজান রয়েছে।অপর দলটি যে ততক্ষণে রমজানের বাড়িতে হানা দিয়ে দিয়েছে সেই খবর রমজানের কাছে পৌঁছে যায়।এর পরেই রমজান লাঠি-কোদাল নিয়ে বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কর্মী ও আধিকারিকদের উপর হামলা চালানো শুরু করে দেয়। মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। সংস্থার বর্ধমান আঞ্চলিক দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার(নিরাপত্তা ও বিদ্যুৎ-চুরি) সুপ্রিয় দে জানিয়েছেন,“তাঁদের আধিকারিক ও কর্মীদের প্রায় ৪০ মিনিট রমজান তাঁর বাড়িতে আটকে রেখেছিল । এই খবর পেয়ে পুলিশ আসজে জানার পর রমজান তাদের ছাড়ে ।
সুপ্রিয় দে আরও জানিয়েছেন,৩০ হাজার টাকা বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় প্রায় এক বছর আগে রমজানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে চুরি করা বিদ্যুতেই রমজানের বাড়িতে আলো জ্বলছে, এসি চলে। সেটা আটকানোর জন্যেই তাঁরা হানা দিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছেন। বিদ্যুৎ বন্টন বিভাগের গুসকরার স্টেশন ম্যানেজার মঙ্গলকোট থানায় জানিয়েছেন,বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে দু’টো নাগাদ সংস্থার কর্মীরা রমজানের বাড়ির বেআইনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।এরপর বিভিন্ন নথি ও তথ্য বাজেয়াপ্ত করে সংস্থার সকলে যখন ফেরার জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখন রমজানের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন তাঁদের ঘিরে ধরে শারীরীক ভাবে নিগ্রহ করে। রড-লাঠি নিয়ে আক্রমণ করে। বাধ্য করে চরি করা বিদ্যুত রমজানের বাড়ির ব্যবহার হওয়ার ছবি ও ভিডিও মুছতে।
তৃণমূল নেতা রমজান অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তিনি জানান, “ঘটনার সময় তিনি ধারেকাছেই ছিলেম না। তাঁর কথায়, সৌর-বিদ্যুতে চলা সাবমার্শিবল বিকল হয়ে যাওয়ায় গ্রামেরচাষিরা বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিল। সেই সংযোগ কাটতে এলে চাষিরা বিক্ষোভ দেখায়।সেই খবর পেয়ে তিনি সেখানে গিয়ে চাষিদের সরিয়ে দিয়েছেন।”বিদ্যুৎ চুরি করে বড়িতে ব্যবহারের অভিযোগও রামজান শেখ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। তবে মঙ্গলকোটের বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী পরিস্কার জানিয়ে দেন,কোন অন্যায় হয়ে থাকলে বিদ্যুৎ দফতর নিশ্চিতভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।আইন আইনের পথে চলবে ।।

