এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ ফেব্রুয়ারী : ভারতীয়দের হাতে কড়া,পায়ে শিকল পরিয়ে ফেরত পাঠানোর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার কোলকাতায় আমেরিকান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ দেখালো পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস । এসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কুশপুত্তলীকা পোড়ানো হয় । প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শুভঙ্কর সরকার বলেন,’যেভাবে হাতে- পায়ে কড়া এবং শিকল পরিয়ে ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে তাতে আমরা মনে করি মানবিকতা লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে দেশের অপমান হয়েছে ।’ তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে বলেন,’যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রোটোকলের বাইরে গিয়ে ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচার করেছেন সেই নরেন্দ্র মোদী এই লজ্জাজনক এবং মানবধিকার লঙ্ঘনকারী ঘটনার পরে একেবারে নিশ্চুপ কেন ? যেখানে কলম্বিয়ার মতো দেশ আমেরিকার মুখের ওপর জানিয়ে দিতে পারে যে, তাঁরা তাঁদের দেশের নাগরিকদের জাহাজ পাঠিয়ে নিজেরাই ফিরিয়ে আনবে, সেখানে এই চরম বর্বর এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ঘটনার পরেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রী, কিম্বা বিদেশ মন্ত্রক – কোন পক্ষ থেকেই একটা প্রতিবাদ যে হলো না কেবল তা নয়, আমেরিকার সঙ্গে কোনো রকম কূটনৈতিক দৌত্যও এখনো পর্যন্ত চালানো হলো না। মোদি সরকারের এই আমেরিকা – ভীতির কারণ কী?’
তিনি বলেন,’বিজেপি বারম্বার পরিযায়ী শ্রমিকদের কথা বলে। কিন্তু আমেরিকা থেকে যাদের ফিরত পাঠানো হয়েছে তাদের অধিকাংশ মানুষই বিজেপি শাসিত গুজরাট রাজ্যের মানুষ। একথা আজ আবার প্রমাণিত হলো দেশে কংগ্রেসের সরকার না থাকলে দেশের সম্মান বারবার নষ্ট হয়, আর যিনি স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু” তাঁর আমলে নীরব দর্শক হয়ে দেশের অপমান সহ্য করতে হয় আমাদের।’
প্রসঙ্গত,আমেরিকা থেকে বহিষ্কৃত ১০৪ জন ভারতীয়ের অনেকেই গত মাসে অথবা ডিসেম্বরের শেষে মেক্সিকো-মার্কিন সীমান্তে পৌঁছেছিলেন। বেশ কয়েকজন নির্বাসিত ব্যক্তির সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতে এবং পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই তথ্য দিয়েছে। ৫ ফেব্রুয়ারি, আমেরিকার সামরিক বিমান ‘সি-১৭ গ্লোবমাস্টার’ এই প্রবাসীদের বহন করে অমৃতসরে পৌঁছায়।এই ১০৪ জনের মধ্যে ৩০ জন পাঞ্জাবের এবং ৩৩ জন গুজরাটের। এবং তাদের মধ্যে, গুজরাট এবং পাঞ্জাবের কমপক্ষে পনেরো জন লোক রয়েছে যারা মেক্সিকো-আমেরিকা সীমান্তে ধরা পড়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এই ব্যক্তিরা আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন বলে জানা গেছে। বহিষ্কৃত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে ৩০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করেছেন। এর মধ্যে এজেন্টের ফি এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ মানুষ ‘ডাঙ্কি রুট’ দিয়ে আমেরিকা পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। ‘ডাঙ্কি রুট’ হল অবৈধ রুট যেখান দিয়ে অনেকে গোপনে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করে। এই রুটগুলি কেবল অবৈধই নয়, বিপজ্জনক এবং অসুবিধায় পূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই, এই রুটে মানুষ খুন এবং ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এই রুটের প্রতিটি নতুন মোড়ে, নতুন এজেন্টরা যোগ দেয় এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় ।
প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে, কর্মকর্তা বলেন যে ২০ বছরের বেশি বয়সী কিছু যুবক দালালদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল। দালালরা তাদের বন্ধুদের একটি দল হিসেবে কর্মকর্তাদের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। এবং তারপর তাদের বেশিরভাগকেই প্রথমে পর্যটন ভিসায় ইউরোপীয় দেশগুলিতে পাঠানো হয়েছিল। বিদেশী শিক্ষা পরামর্শদাতা বিনয় কুমার হরি বলেছেন যে ১০৪ জন ভারতীয়কে বহিষ্কার করা কেবল শুরু। তিনি বলেন, বর্তমানে ২০,০০০ এরও বেশি ভারতীয় আছেন যাদের কাছে কোনও কাগজপত্র নেই এবং তারা আমেরিকা থেকে নির্বাসনের হুমকির সম্মুখীন।
ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের (ক্রান্তিকরী) সাধারণ সম্পাদক সুখবিন্দর কৌর বলেন,’ডলার এবং রুপির মধ্যে পার্থক্য বিদেশী স্বপ্নের পিছনে ছুটতে বাধ্য করে। মানুষ ‘ডঙ্কি রুট’-এ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে কিন্তু অনেকেই মাত্র এক বছরের মধ্যেই এই খরচ তুলে ফেলে । যেখানে অনেকের দুই-তিন বছর সময় লাগে। তিনি বলেন, দেশকে এই ধরনের লজ্জা থেকে বাঁচাতে হলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।’ লোকভালাই পার্টির সভাপতি বলবন্ত সিং রামুওয়ালিয়া ট্রাভেল এজেন্টদের বিরুদ্ধে মানুষের শোষণের অভিযোগ এনেছেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।।

