এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,২৮ জুলাই : স্বাধীনতার পর থেকে এযাবৎ নদীর উপর পাকা সেতু নির্মান হয়নি । গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে একটি বাঁশের সেতু নির্মান করেছেন । ৮-১০ টি গ্রামের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ওই অস্থায়ী সেতুটি । সেটি কোথাও কমজোর হয়ে পড়লে মেরামতির জন্য গ্রামবাসীরাই উদ্যোগী হন । ১৯৪৭ সালের পর থেকে এইভাবেই বংশপরম্পরায় টিকে আছে ওই অস্থায়ী সেতুটি । কিন্তু সোমবার টানা কয়েক ঘন্টার প্রবল বৃষ্টিপাতের কারনে বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়ের ব্লকের শালী নদীর উপর ওই সেতুটি জলের তোড়ে ভেসে যায় । ফলে ওই সমস্ত গ্রামগুলির বাসিন্দারা জনজীবন থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ।
এদিকে নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে চুড়ান্ত সমস্যায় পড়ছেন গ্রামবাসীরা । এই অবস্থায় পরিবারের কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কি হবে, তা নিয়ে আশঙ্কিত সকলে । গ্রামবাসীদের দাবি, অবিলম্বে সেতুটি সংস্কারের ব্যাবস্থা করুক প্রশাসন । পাত্রসায়ের ব্লকের বিডিও নিবিড় মন্ডল বলেন ‘ওই সাঁকোটি মেরামতের জন্য আমরা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছি ।আশা করছি দ্রুত মেরামতির কাজ শুরু হয়ে যাবে ।’ পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, ওই স্থানে শালী নদীর উপর একটি পাকা সেতু নির্মানের বিষয়ে তিনি উদ্যোগী হবেন ।
বাঁকুড়া জেলার প্রান্তিক ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম পাত্রসায়ের । এই ব্লকের অন্তর্গত বেলুট-রসুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপর দিয়েই বয়ে গেছে শালী নদী । বাজার-হাট,অফিস-কাছারি,ব্যাঙ্ক ও স্কুল-কলেজ যেতে গেলে বেলুট,রসুলপুর,গোস্বামীগ্রামসহ ৮-১০ টি গ্রামের বাসিন্দাদের শালী নদী অতিক্রম করতে হয় । গোস্বামীগ্রামের কাছে শালী নদীর উপর রয়েছে একটি বাঁশের সেতু । নদী পারাপার করার একমাত্র ভরসা ওই সেতুটি । স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বছরের অনান্য সময়ে নদীতে জল থাকে না । তখন নদীর চরের উপর দিয়েই চলাচল করা যায় । কিন্তু বর্ষায় ভয়ঙ্কর রূপ নেয় শালী নদী । তখন বাঁশের সেতুটিই যাতায়তের একমাত্র ভরসা ।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সোমবার বিকেল থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয় । চলে টানা কয়েক ঘন্টা । ফলে শালী নদীর জলস্তর প্রচুর বেড়ে যায় । শেষে জলের তোড়ে ভেসে যায় ওই অস্থায়ী সেতুটি ।
এদিকে সেতুটি ভেসে যাওয়ায় প্রায় দশটি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ বিপাকে পড়ে গেছেন । বিকল্প হিসেবে রয়েছে ৪-৫ কিলোমিটার ঘুর পথ । তবে সেখানেও রয়েছে সমস্যা । ঘুরপথে রয়েছে একটি ভাসাপুল । বর্ষায় সেটাও থাকে জলের তলায় । ফলে চতুর্দিকে জলবেষ্টিত হয়ে পড়েছে ওই সমস্ত গ্রামগুলি । ফলে বাড়ছে ক্ষোভ ।
এদিকে ওই সেতুটি ভেসে যাওয়াকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে বিজেপি-তৃণমূল চাপানউতোর । উল্লেখ্য, এলাকাটি সোনামুখী বিধানসভার অন্তর্গত । এবারে ওই আসনে বিজয়ী হয়েছেন বিজেপির দিবাকর ঘরামি । সেতু ভাঙাকে কেন্দ্র করে বিজেপি বিধায়ককে নিশানা করেছেন পাত্রসায়ের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘বিগত বিধানসভা নির্বাচনে এলাকার মানুষ বিজেপি প্রার্থীকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করেছেন । এনিয়ে ওনার কোনও পদক্ষেপ আমাদের চোখে পড়ছে না । এটা আমাদের দূর্ভাগ্য । সেতু ভাঙার পর থেকে আমরা বিডিও ও পুলিশের সহায়তায় মানুষদের রিলিফ ক্যাম্পে নিয়ে গেছি । তাঁদের খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা করেছি । কিন্তু এযাবৎ একবারও বিজেপি বিধায়কের দেখা মিললো না ।’ পাশাপাশি তিনি জানান, গোস্বামীগ্রামে পাকা ব্রিজ নির্মানের জন্য পঞ্চায়েত সমিতি,জেলা পরিষদ ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্কিম পাঠানো আছে । খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন ।
অন্যদিকে শাসকদলকে পালটা নিশানা করেছেন বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামি । তিনি বলেন, ‘তৃণমূল সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষমতায় রয়েছে । বিগত ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও কেন ওখানে পাকা সেতু হয়নি ? এখন আমরা চাইলেও কিছু কাজ করতে পারবো না । কারন তৃণমূল আমাদের কোনও উন্নয়নমূলক কাজই করতে দেবে না ।’।