এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৯ জানুয়ারী : সরস্বতী পূজোর প্রস্তুতি নেওয়ার অপরাধে নদীয়া জেলার হরিণঘাটা দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাশীরাম বর্মনকে যুবক আলিমুদ্দিন মন্ডলের “বদলি”র হুমকি দেওয়া নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে রাজ্য জুড়ে । ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার । এবারে নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রতিবাদ জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ৷
তিনি ওই নদীয়ার স্কুলের ওই হুমকি ভিডিওর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ ও এরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের পুরনো ভিডিও সংযুক্ত করে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন । আসলে নির্বাচনী জনসভায় অমিত শাহ দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন ও স্কুলে সরস্বতী পূজো করতে দেওয়া হয়না বলে অভিযোগ তুলেছিলেন । পালটা জনসভায় কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীকে রীতিমতো ব্যাঙ্গ করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘এখানে নাকি সরস্বতী পূজো হয় না ! ওকে(গৃহমন্ত্রীকে) আগে সরস্বতী পূজোর মন্ত্র জিজ্ঞেস কর । আয়, সরস্বতী পূজোর মন্ত্র বল ।’ তিনি উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘সরস্বতী পূজোর মন্ত্র জানো তোমরা ? বলো,আচ্ছা করকে কান খুলকে শুননা । হাম কয়ে রহা হুঁ…আমি বলছি ।’ এরপর তিনি মন্ত উচ্চারণ করেন,’জয় জয় দেবী চরাচর সারে । কুচ শিত ভূইতো মুক্তা হারে ।’
শুভেন্দু অধিকারী হরিণঘাটা দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে হুমকির প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন,’ভিডিওটি দেখে হঠাৎ করে সকলের বাংলাদেশের মনে হতেই পারে, কিন্তু সকলের জ্ঞাতার্থে জানাই ভিডিওটি হরিণঘাটা বিধানসভার নগরউখড়ার দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকদের ইচ্ছায় বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, যে খবরটা চাউর হতেই এলাকার তৃণমূলের বুথ সভাপতি আলিমুদ্দিন মন্ডল ও তার সহযোগীরা প্রকাশ্যে প্রধান শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং বলেন সরস্বতী পুজো করা যাবে না। ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রধান শিক্ষককে বদলি করার হুমকিও দেওয়া হয়।’
তিনি লিখেছেন,’২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় নির্বাচনী প্রচারে দেশের সম্মানীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জি জনগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্য জনসভায় অভিযোগ করেছিলেন রাজ্যে সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না। তখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী সর্বসমক্ষে এই অভিযোগ খন্ডন করে বলেছিলেন “দিল্লির নেতারা বাংলাকে নাকি হিংসা করে আর মিথ্যে কথা বলে” তিনি সম্মানীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর করা ” ইহাঁ স্কুল মে সরস্বতী পুজা করনে নেহি দিয়া যাতা হে” এই মন্তব্যের খিল্লি উড়িয়ে বিকৃত অঙ্গভঙ্গি করে বলেছিলেন এটি নাকি বিজেপির এজেন্ডা।’
তিনি আরও লিখেছেন,’হরিণঘাটার ঘটনা নতুন কিছু নয়, গত বছর দুর্গাপুজোর সময় বা লক্ষ্মীপুজোয় এই একই ঘটনা রাজ্যের মানুষ চাক্ষুষ করেছেন। মমতা ব্যানার্জীর সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য পশ্চিমবঙ্গ এখন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে। ভারতবর্ষের স়ংবিধান দেশের প্রত্যেক নাগরিক কে তার নিজের ধর্ম পালনের অধিকার দিয়েছে। কিন্তু অন্য ধর্মের এক শ্রেনীর মানুষ বার বার হিন্দুদের ধর্মাচরণ, পুজা অর্চনায় বাধা দিচ্ছেন। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হল এদের বিরুদ্ধে কোনো রকম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসন একেবারে নিশ্চুপ। কারণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কথায় এরা দুধেল গাই, তাই এদের লাথি খেতে হবে।’ সব শেষে পিশ্চমবঙ্গের হিন্দুদের সতর্ক করে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’রাজ্যের সনাতনীদের বলব, এখনো বেশী দেরি হয়নি, সকলে একত্রিত হন। সম্মিলিত ভাবে গণতান্ত্রিক ভাবে এই জেহাদিদের তোষণকারী তৃণমূলকে বঙ্গোপসাগরে ছুঁড়ে না ফেলতে পারলে এই পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ হতে আর বেশী দেরি নেই।’
প্রসঙ্গত,এই প্রথম হরিণঘাটা দাসপোল ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক কাশীরাম বর্মন । কিন্তু ঘটনার কথা কানে যেতেই দলবল পাকিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্কুলে চড়াও হয় জিহাদি যুবক আলিমুদ্দিন মন্ডল । স্কুলের সরস্বতী পূজোর উদ্যোগ নেওয়ার অপরাধে সে প্রধান শিক্ষকের উপরে এতটাই ক্ষুব্ধ হয় যে শিক্ষকের দিকে কার্যত তেড়ে যায় এবং আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে,”কোনদিন পূজো হয়নি আজও হবে না। আপনাকে সরাতে ২৪ ঘন্টাও লাগবে না। এখানে হিন্দুদের কোন অনুষ্ঠান হতে পারেনা এবং মুসলমানদেরও কোন অনুষ্ঠান হতে পারেনা । আপনি কি এখানে …ধু সাজতে এসেছেন । কালি ভরে দেবো আপনাকে ।” জানা গেছে,তৃণমূল বুথ সভাপতি আলিমউদ্দিন মণ্ডল । হুমকির পর নগরউখড়া পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ দু’পক্ষকেই থানায় ডাকে । থানায় বসেই পুলিশের তরফে বিষয়টি মিটমাট করার কথা বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।।