এইদিন ওয়েবডেস্ক,নবীগঞ্জ(বাংলাদেশ),২১ জানুয়ারী : বিয়ের পিঁড়িতে বসতে জমানো টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ১৮ বছরের এক হিন্দু তরুণী। কিন্তু অটোরিকশা করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি গনধর্ষণের শিকার । অটো রিকশা সহ কয়েকজন তাঁকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি পাশবিক অত্যাচার চালায় । তরুনীর সঙ্গে থাকা অপর এক কিশোরীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়।গত বুধবার রাতে বাংলাদেশের হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় এই নারকীয় ঘটনাটি ঘটে । শনিবার এই ঘটনায় চুনারুঘাট থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পারভেজ মিয়া (২৫) নামের এক তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী জেলার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
পুলিশ ও মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা নির্যাতিতা তরুনী ও তার খুড়তুতো বোন ঢাকায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। নির্যাতিতার বয়স ১৮ এবং তার বোন ১৭ বছর বয়সী । নির্যাতিতার সম্প্রতি বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ে উপলক্ষে দুই তরুণী গত বুধবার ছুটি নিয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাত ১১টার দিকে তাঁরা একটি যাত্রীবাহী বাসে করে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের এসে পৌঁছান। পরে তাঁরা নবীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশা ভাড়া করেন।
কিন্তু শায়েস্তাগঞ্জের নতুন ব্রিজ এলাকায় আসতেই চালক অটোরিকশার গতি কমিয়ে আরও তিনজন তরুণকে অটোরিকশায় তুলে নেন। সেই সময় তরুণীরা চালকের কাছে জানতে চান তাঁদের ভাড়া করা অটোরিকশায় কেন অতিরিক্ত লোকজন ওঠানো হলো। তখন চালক বলেন, ওরা সামনে গিয়ে নেমে যাবে। এই কথা বলে কিছুক্ষণ পরে অটোরিকশার চালক ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে থেকে নেমে অন্য রাস্তা দিয়ে অটো নিয়ে যায় । কিন্তু অটোরিকশাটি কোন পথে যাচ্ছে, তা আঁচ করতে পারেননি দুই তরুণী । এরপর চালক চুনারুঘাট উপজেলার একটি স্থানে গিয়ে অটোরিকশাটি থামিয়ে দেন। তরুণীরা কিছু বোঝার আগেই চালক ও সঙ্গে থাকা অপর তিনজন ১৮ বছরের তরুণীকে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে উপর্যুপরি পাশবিক অত্যাচার চালায় । সঙ্গে থাকা ১৭ বছরের অপর তরুণীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ধর্ষণের চেষ্টা করে। এই সময় ওই তরুণী চিৎকার করে দৌড়ে পালাতে থাকলে ধর্ষকারীরা ভয়ে নিজেরাও ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় ।
এর কিছুক্ষণ পরেই যৌন নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ওই তরুণী পুনরায় ঘটনাস্থলে এসে তাঁর খুড়তুতো বোনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে দুই তরুণী ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। তাঁরা মধ্যরাতে গ্রামবাসীদের তাঁদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিষয়টি জানালে দল বেঁধে লোকজন ঘটনাস্থলে এসে কাউকে পাননি। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে তাঁরা তাঁদের বাড়ি পৌঁছান।
জানা গেছে, বাড়িতে গিয়ে পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের জানালে মানসম্মানের ভয়ে দুই দিন তাঁরা নীরব থাকেন। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীর চাপে তাঁর মা বাদী হয়ে শনিবার চুনারুঘাট থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এ মামলায় অটোরিকশার চালকসহ চারজনকে আসামি করা হয়। নির্যাতিতা তরুণীর মা বলেন,’তাঁর মেয়ের বিয়ের দিন–তারিখ ঠিক হয়েছিল। তাঁর মেয়ে ঢাকায় একটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা জমিয়েছিল । সেই টাকা সঙ্গে করে নিয়ে বাড়িতে ফেরার পথে এই ঘটনার শিকার হয় । আমাদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে ওই নরপশুর দল ।’
চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আলম বলেন, এ ঘটনায় জড়িত অটোরিকশা চালককে শনাক্ত করা গেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় চারজনের নামে মামলা করেছেন তার মা। এ মামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে পারভেজ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসাধীন।।