এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),২০ জানুয়ারী : পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামে প্রকাশ্যে এল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব । প্রকাশ্য সভায় দলীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আব্দুল লালন । নাম না করেই তিনি জানিয়ে দিলেন যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আউশগ্রাম বিধানসভায় দলীয় প্রার্থী হিসাবে অভেদানন্দ থান্ডারকে তারা কিছুতেই মেনে নেবেন না । এনিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে আবেদনও জমা দেবেন বলে আব্দুল লালন জানিয়েছেন । ফলে ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভার ভোটের আগে চরম অস্বস্তিতে পড়ে গেছে জেলার শাসকদল নেতৃত্ব ।
রবিবার আউশগ্রাম ২ ব্লকের অভিরামপুরে দলীয় কর্মী সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় আব্দুল লালন বলেছেন, ‘আমরা বিধানসভা ভোটে আরও বেশি ব্যবধানে দলকে জেতাব। তবে দলের কাছে আমরা একটাই দাবি রাখব যাতে বহিরাগতকে প্রার্থী করা না হয়। আমরা দলের প্রতিটি সদস্য,বুথ সভাপতিরা মিলে নেত্রীর কাছে পিটিশন দেব আউশগ্রামে যেন আমাদের জেলার (পূর্ব বর্ধমান) ভূমিপুত্রকেই আমরা প্রার্থী হিসাবে পাই।’ এদিকে আবদুল লালনের এই মন্তব্যের পরেই দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে । প্রসঙ্গত, বীরভূম জেলার বোলপুরের বাসিন্দা অভেদানন্দ থাণ্ডার। তিনি আউশগ্রাম থেকে দুবারের বিধায়ক। অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি মতবিরোধের জেরে তাঁকে আর প্রার্থী হিসাবে চাইছেন না দলেরই একাংশ। একথাই প্রকাশ্যে বুঝিয়ে দেন আব্দুল লালন। যা নিয়ে দলের মধ্যেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর।
উল্লেখ্য,রাজ্যের অনান্য ব্লকের পাশাপাশি আউশগ্রামেও তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের পুরনো ইতিহাস আছে । বিশেষ করে আউশগ্রাম ২ ব্লক এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মধ্যে সংঘাত চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে । এমনিতেই আউশগ্রাম ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি আব্দুল লালনের সঙ্গে প্রাক্তন ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সদস্য রামকৃষ্ণ ঘোষের সংঘাত ছিল। তবে বিধায়কের সঙ্গে আব্দুল লালনের মধ্যে তেমন তিক্ত সম্পর্ক ছিল না । তবে বিগত কয়েকমাস ধরেই বিধায়কের সঙ্গে দুরত্ব তৈরি হচ্ছিল লালনের । সাম্প্রতিক সময়ে দুই একটি কর্মসূচিতে ওই দুজনকে একমঞ্চে দেখা গেলেও সম্প্রতি আব্দুল লালনের ডাকা দলীয় কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছিল না বিধায়ককে । আর এতেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয় ।
রবিবার আউশগ্রাম ২ ব্লকের এড়াল অঞ্চলের পর রামনগর অঞ্চলের পাণ্ডুক গ্রামেও আব্দুল লালনকে আক্রমনাত্মক মেজাজে দেখা যায় । তিনি বলেন, ‘২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে আমরা ১১৯৬৫ ভোটে জিতেছিলাম। গত লোকসভা ভোটে ৩৩৫৩৫ ভোটে লিড করেছি। সামনের বিধনসভা নির্বাচনে আরও বেশি ভোটে জিতব।’ এরপর দলের বর্তমান বিধায়ককে ‘বহিরাগত’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন,মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যেমন বলেন,’বহিরাগত হতে সাবধান।’ আমরাও দলের কাছে আবেদন রাখব যাতে বহিরাগতকে প্রার্থী না করে জেলার কোনও ভূমিপুত্রকে করা হয়।’ তিনি বলেন,’আমাদের কার্যালয় ঠিক সময়ে খোলা হবে। মাননীয় জেলা সভাপতি আমাকে তার চাবি যখন দেবেন তখন আমি সেই চাবি স্থানীয় নেতৃত্বের হাতে তুলে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিধায়ক, সাংসদ বা পঞ্চায়েত প্রধান তাঁরা অতিথি, প্রশাসনের লোক। তারা পার্টির কেউ নন। পার্টির লোক হলাম আমরা। তাই দলের নেতৃত্বই ঠিক করে দেবেন দল কিভাবে দলবে। দলের সিদ্ধান্ত কি হবে।’
যদিও বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডার দলের ব্লক সভাপতির ওই মন্তব্যকে আমল দিতে নারাজ। তিনি বলেন,’দল কাকে প্রার্থী করবে সেটা দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত। কে কি মন্তব্য করল তাতে গুরুত্ব দিতে চাই না।’।