এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৭ জানুয়ারী : ‘সর্বকালের ব্যর্থ ও এবং নির্লজ্জ স্বাস্থ্যমন্ত্রী’র তকমা দিয়ে মমতা ব্যানার্জিকে গ্রেফতারের দাবি তুললেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ২০১৫ সালের ১১ জুন আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্টকে লেখা একটা আবেদনপত্র নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে পোস্ট করেছেন সুকান্ত । আবেদনপত্রে ছিল একই হাসপাতালের চিকিৎসক ডঃ উদয়ন মিত্রসহ তিন চিকিৎসকের স্বাক্ষর । যেখানে হাসপাতালের ‘সিজারিয়ান সেকশনে কয়েক মাসে হঠাৎ করে প্রসূতি মৃত্যু ও অসুস্থতা’র কথা বলা হয়েছে । উত্তরে স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিরেক্টর ডাঃ উদয়ন মিত্রের বিরুদ্ধে ‘স্ট্যান্ডার্ড লেবার রুম প্রোটোকলের অনুসরণ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী লঙ্ঘন’-এর অভিযোগ আনে এবং “শোকজ” করে । ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের ডিরেক্টরের স্বাক্ষরিত সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও পোস্ট করেছেন সুকান্ত মজুমদার ।
দীর্ঘ ৯ বছর আগের ওই মামলার প্রতিক্রিয়ায় সুকান্ত মজুমদার লিখেছেন,সর্বকালের ব্যর্থ এবং নির্লজ্জ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রেও সর্বত্র দুর্নীতি! মেদিনীপুরে অসহায় প্রসূতি মায়ের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু না ঘটলে জানাই যেত না দুর্নীতি চক্রের মাকড়সার জাল ঠিক কত বছর আগে থেকে পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালগুলিতে ছড়িয়ে রয়েছে। নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহারের ফলে বহু প্রসূতির মৃত্যু ঘটার মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটছে জানিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার কে ২০১৫ সালে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছিলেন ডঃ উদয়ন মিত্র।’
তিনি আরও লিখেছেন,’কিন্তু অদ্ভুতভাবে দুর্নীতির সম্বন্ধে এই অভিযোগ জানানোর কয়েক মাস পরেই ডঃ উদয়ন মিত্র কে রাজ্যের স্বাস্থ্য ভবন থেকে চিঠি পাঠানো হয় শৃঙ্খলা বিরোধী আচরণের জন্য কারণ দর্শানোর জন্য! এটা থেকে কি প্রমাণিত হয় মমতা ব্যানার্জি ? আপনার সরকারে সংরক্ষিত দুর্বৃত্তদের শুরু করা দুর্নীতির বিষয়ে কেউ নূন্যতম জানতে পারলেই তাঁকে আপনি ভাতে মেরে ফেলবেন! আপনার পদলেহনকারী সিআইডি -এর আধিকারিকরা যাদের বাড়িতে মা বোন রয়েছে তাদের নৈতিক কর্তব্য আপনাকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা। নাহলে এই রাজ্যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সুরক্ষিত ভাবে জন্মাতে পারবে না।’
আসলে,মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহারের ফলে এক প্রসুতির মৃত্যু এবং বেশ কয়েকজন প্রসূতি গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে রাজ্যজুড়ে । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই ঘটনার জন্য সরাসরি রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দায়ী করেছেন । গতকাল বৃত্ত প্রসূতির পরিবারের সাথে দেখা করার সময় মমতা ব্যানার্জিকে ‘খুনি’ বলে অভিহিতও করেন তিনি । এর আগে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছিলেন যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজের অপরাধ ঢাকতে মেদিনীপুর হাসপাতালের জুনিয়্র চিকিৎসকদের ‘বলির পাঁঠা’ করার চেষ্টা করছেন । আর হয়েছেও তাই । স্যালাইন কাণ্ডের জেরে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৬ জন জুনিয়র ও ৬ জন সিনিয়র ডাক্তার রয়েছেন। তারই প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারেরা ফের পূর্ণ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন ।
কিন্তু সুকান্ত মজুমদারের শেয়ার করা আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্টকে আবেদনপত্রে ডঃ উদয়ন মিত্ররা হাসপাতালে সরবরাহকৃত সেলাইন ও ওষুধপত্রের মান নিয়ে স্পষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন । ওই আবেদনপত্রে তারা জানিয়েছিলেন,
যথাযথ সম্মানের সাথে আমরা আমাদের G&O ওয়ার্ড সম্পর্কিত একটি গুরুতর বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ শেয়ার করতে চাই। সিজারিয়ান সেকশনের পর গত কয়েক মাসে হঠাৎ করে মাতৃমৃত্যু এবং অসুস্থতা (PPH, ANURIA, JAUNDICE) বেড়েছে। কিন্তু এই দৃশ্যটি সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত হয়েছিল যখন নামী এবং ব্র্যান্ডেড ওষুধ, IV তরল (বিশেষ করে R/L) বাইরের ওষুধের দোকান থেকে কেনা হয়েছিল এবং অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল (যেমন HDU যত্ন)। এই সময়ের মধ্যে একটিও পোস্টোপারেটিভ মৃত্যু বা অসুস্থতা ঘটেনি। তবে কিছু অজানা কারণে ক্রয়কৃত ব্র্যান্ডেড ওষুধ সরবরাহ করা বন্ধ হয়ে গেছে এবং আমরা একই দিনে দুইজন পোস্ট অপারেটিভ মাকে হারিয়েছি (এইচইউডি যত্ন সত্ত্বেও)। এই ঘটনা আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং, আমরা আপনাকে আমাদের আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এবং এই ধরনের অবাঞ্ছিত মৃত্যু রোধ করতে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করতে চাই।’
আর তাদের এই অপরাধের জন্য রাজ্য স্বাস্থ দপ্তর জানিয়েছিল, ডাঃ উদয়ন মিত্র, M.CG&Obs.), জেলা হাসপাতাল, আলিপুরদুয়ার, স্ট্যান্ডার্ড লেবার রুম প্রোটোকলের অনুসরণ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী লঙ্ঘন করেছেন বলে জানা গেছে, এবং যেখানে ডাঃ উদয়ন মিত্র, M.O.(G.&Obs.), অন্যান্য গাইনোকোলজিস্টদের উপরও খারাপ প্রভাব তৈরি করছে, এইভাবে জনসেবাকে পরোক্ষভাবে ব্যাহত করছে। এবং যেখানে ডাঃ উদয়ন মিত্রের উপরোক্ত কর্মকান্ড, M.O. (G.&Obs.), অত্যন্ত অনিয়মিত, দায়িত্বজ্ঞানহীন, অবাধ্যতা এবং কর্তব্যের প্রতি নিষ্ঠার অভাব নির্দেশ করে, যা পশ্চিমবঙ্গ পরিষেবা (সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব, অধিকার ও বাধ্যবাধকতা) বিধি, ১৯৮০-এর বিধি ৩ লঙ্ঘন করে;এবং তাই, ডাঃ উদয়ন মিত্রকে এতদ্বারা কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন তার উপরে উল্লিখিত কার্যকলাপের জন্য তার বিরুদ্ধে (লিভান প্রাপ্তির তারিখ থেকে) দিনের মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।’।