প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জানুয়ারী : এক ঝলক দেখলে মনে হবে এ যেন এক অন্য গঙ্গা সাগর । ধর্মীয় রীতি মেনে মকর সংক্রান্তির পরদিন অর্থাৎ মাঘ পয়লায় পূণ্যস্নান ও পিতৃ পুরূষের উদ্দেশ্যে তর্পন সারতে হাজার হাজার আদিবাসী পূণ্যার্থী সমবেত হলেন দামোদরের ’তেলকুপি গয়া ঘাটে’।পূণ্যস্নান ও তর্পণ সেরে আদিবাসীরা পুজো দিলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের ’তেলকুপি গয়া ঘাটে’ থাকা “মারাংবুরু’ মন্দিরে।মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গা সাগর যেমন ভরে গিয়েছিল হিন্দু পূণ্যার্থী সমাগমে,তেমনই মাঘ পয়লায় দামোদর ঢাকা পড়লো আদিবাসী পূণ্যার্থীদের ভিড়ে ।
দামোদরের ’তেলকুপি গয়া ঘাট’ আদিবাসী মানুষ জনের কাছে মহাপূণ্য স্থান হিসাবে পরিচিত।১ মাঘ হল আদিবাসীদের কাছে পূণ্য দিন। তাই প্রতি বছর ১ মাঘ জামালপুরের ’তেলকুপি গয়া ঘাটে’ পূণ্যস্নান ও পিতৃ পুরূষের অস্থি বিসর্জন সমারোহে অংশ নেন এই রাজ্য সহ বিভিন্ন ভিন রাজ্যের আদিবাসী পূণ্যর্থীরা।ঝাড়খণ্ড ,বিহার ও ওড়িষ্যা রাজ্যের বহু পূণ্যার্থীও এদিন পূণ্য স্নান সরতে ’তেলকুপি গয়া ঘাটে’ সমবেত হন। এই পূণ্য স্নান পর্ব নির্বিঘ্নে সমাপ্ত করতে তাই গঙ্গাসাগরের মতো তেলকুপি গায়া ঘাট চত্ত্বরে মোতায়েন রাখা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। নির্বিঘ্নে এই পূণ্যস্নান পর্ব সমাপ্ত করতে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ছাড়াও প্রশাসনের আধিকারিকরা এদিন সকাল থেকেই তেলকুপি ঘাটে উপস্থিত হয়ে গিয়েছেন। বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে দামোদরে। এমনকি দামোদরের চরে মেডিকেল ক্যাম্পেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।
পূণ্যস্নান ও তর্পন উৎসব আয়োজকদের তরফে রবীন মাণ্ডি জানান ,“বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে “গঙ্গা“ সবথেকে পবিত্র জলাশয় । কিন্তু সুপ্রাচীন কালথেকেই দামোদর নদকেই পবিত্র জলাশয় হিসাবে মান্যতা দিয়ে আসছেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। দামোদরের “তেলকুপি গয়া ঘাট’ এই দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ পূণ্য তীর্থভূমি।বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন মহালয়ার দিন গঙ্গায় পিতৃপুরুষের উদ্দ্যেশ্যে তর্পন সারেন এবং মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গায় পূণ্যস্নান সারেন। কিন্তু আদিবাসীরা প্রতিবছর ১ মাঘ দামোদরের “তেলকুপি গায়া ঘাটে“ পূণ্যস্নান সারার পাশাপাশি পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পনও সারেন। তর্পন সেরে আদিবাসীরা “তেলকুপি গয়া ঘাটে“ থাকা আরাধ্য দেবতা “ শিব তথা ”মারাং বুরুর” মন্দিরে পুজো দেন।
আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ , কবি , সাহিত্যিক ও শিল্পীরা এদিন পূণ্য তীর্থ তেলকুপি ঘাটে সমবেত হয়েছেন। ধর্মীয় উপাচার সেরে আদিবাসী পুরুষ ও মহিলারা এদিন দামোদরের বালির চরে নাচ গানে মাতোয়ারা হন । বালির চরেই হয় রান্না করে স্বপরিবার খাওয়া দাওয়া। আদিবাসী তর্পন উৎসব উপলক্ষে দামোদরের বালির চরে বসা মেলাও জমজমাট রুপ পেয়েছে।আয়োজকরা জানিয়েছেন, রীতি মেনে সূর্যাস্তের প্রাক্কালেই পূণ্যার্থীরা দামোদর ছেড়ে যে যার নিজের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেবেন’।।