এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১০ জানুয়ারী : পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে পশ্চিমবঙ্গের সৈকত শহর পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় একটি মন্দির নির্মান করিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি । উদ্দেশ্য পুরীতে যাওয়া পর্যটকদের দিঘামুখি করা । কিন্তু দিঘায় যেটি মমতা ব্যানার্জি নির্মাণ করিয়েছেন সেটিকে মন্দির বলতে নারাজ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তার কথায়, সেটি আদপে ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র’ । তিনি বলেছিলেন, হিডকো কাজের জন্য যে বরাত দিয়েছে সেই ওয়ার্ক অর্ডারেই লেখা আছে, দিঘায় ‘জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র’ হচ্ছে। কোনও সরকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী ভণ্ডামি, মিথ্যাচার করছেন বলে তার অভিযোগ । শুভেন্দু অভিযোগ করেছেন যে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হিন্দু নির্যাতনে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এরাজ্যের হিন্দুরা । তাই মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এপার বাংলার হিন্দুরা । এই কারনে মন্দির নির্মানের কথা বলে আদপে তাদের মন জয় করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী ।
ফের একবার এনিয়ে বোমা ফাটালেন শুভেন্দু অধিকারী । আজ শুক্রবার তমলুক ডিভিশনের এক্সজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারে ৭ জানুয়ারী ইস্যু করা ই-টেন্ডার এক্স-এ পোস্ট করে মমতা ব্যানার্জিকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, ‘দিঘায় “জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র” নামটি সংশোধন করে “জগন্নাথ মন্দির” করে দেখান মমতা ব্যানার্জি । তিনি টেন্ডারের দু’জায়গা লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দিয়েছেন । কাজের নাম সংক্রান্ত ওই ঘরে প্রথমে লেখা আছে, ‘সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ- ছোট জলাশয়ের দক্ষিণ পাশের (অংশ) পাকা পথ, রেলিং। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দিঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের জলাশয়ের সামনে টাইলস এবং ম্যাক্সিকান ঘাসের কার্পেট।’ আর দ্বিতীয় চিহ্নিত জায়গায় লেখা হয়েছে,’পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দীঘায় জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে ০৩ নম্বরে ম্যাক্সিকান গ্রাস কার্পেট ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জমি উন্নয়নের কাজ।’
প্রতিক্রিয়ায় শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’আমি বারবার উল্লেখ করেছি যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিঘায় “জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র” তৈরি করছে। এই সাথে সংযুক্ত দরপত্রের নথি আমন্ত্রণ জানানো বিজ্ঞপ্তিটি আমার দাবিকে প্রমাণ করে। বাংলাদেশের পরিস্থিতির কারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাপের মধ্যে রয়েছেন এবং সেই কারণেই তিনি “জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র”কে জগন্নাথ মন্দির হিসাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন, যাতে পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটাররা তাদের নরম অবস্থানের কারণে তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে না রাখে। বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর অত্যাচার এবং তুষ্টির রাজনীতির ভারসাম্যমূলক কাজ। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি সংশোধনী প্রকাশ করতে এবং টেন্ডার নথিতে “জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্র” নামটি সংশোধন করে “জগন্নাথ মন্দির” করার জন্য চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, যদি তিনি সৎ হন ।’
উল্লেখ্য,দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় একটি জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কথা ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালে নিউ দিঘার রেল স্টেশনের ধারে ভোগীবহ্মপুর মৌজায় ২৫ একর জমিতে জগন্নাথ ধাম ও সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়। রাজ্য সরকারের তরফে এ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় হিডকোকে। এর জন্য ১৮০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সমান উচ্চতা বিশিষ্ট দিঘার জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। ভিন রাজ্য থেকে পাথর এনে ধাপে ধাপে বসানো হয়েছে। মূল মন্দির-সহ নাট মন্দিরে পড়েছে রঙের প্রলেপ। জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার মূর্তিও এসে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যে পুরীর জগন্নাথ মন্দির দ্বারা অনুপ্রাণিত মন্দিরটি ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল, উদ্বোধন করা হবে।।