এইদিন ওয়েবডেস্ক,বর্ধমান,৩০ ডিসেম্বর : এক রেলকর্মীর স্ত্রী ও শিশুকন্যার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে বর্ধমান শহরে । আজ সোমবার সকালে শহর লাগোয়া বাদশাহী রোড এলাকার একটা ভাড়া বাড়ি থেকে মা ও শিশুকন্যাকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ । মাকে গামছা এবং মেয়েকে ওড়নার ফাঁসে সিলিং ফ্যানে থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায় । পুলিশ জানিয়েছে,মৃতদের নাম মামনি সাউ বর্মণ(৩০) এবং তার মেয়ে প্রজ্ঞা বর্মণ(৪)। তাদের বাড়ি দক্ষিণ২৪ পরগণার পাথরপ্রতিমার রাখালপুর এলাকায় । এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক প্রতিবেশীরা । প্রাথমিকভাবে তাদের অনুমান যে মেয়ের হাত বেঁধে তাকে মেরে মা নিজেই গলায় গামছার ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন । কিন্তু তিনি কেন এই চরম সিদ্ধান্ত নিলেন তা নিয়ে ধন্দ্বে রয়েছেন সকলে । কারন পরিবারটির সঙ্গে প্রতিবেশীদের যথেষ্ট সুসম্পর্ক ছিল । কখনো পারিবারিক ঝামেলাও হয়নি বলে জানান প্রতিবেশীরা।
জানা গেছে,মৃতা মামনি সাউ বর্মণের স্বামী প্রভঞ্জন বর্মন রেলের সিগন্যালম্যানের কাজ করতেন । কর্মসূত্রে তাকে বর্ধমান শহরে থাকতে হত । বিগত প্রায় ২ বছর ধরে বর্ধমান শহর লাগোয়া বাদশাহী রোড এলাকার একটা বাড়িতে পরিবার নিয়ে তিনি ভাড়া থাকছিলেন ।
বাড়ির মালিক তপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন,’মৃতার স্বামী রেলে কাজ করেন । আজ সকালে ডিউটি থেকে এসে কোনো সাড়াশব্দ বা ফোনে উত্তর না পেয়ে আমাকে ডাকেন । পুলিশ এসে দরজা ভাঙতে বলে। দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে একটি দড়িতে মা মেয়েকে সিলিং ফ্যানে ঝুলতে দেখা যায়। মেয়ের হাত বাঁধা ছিল।’ তিনি বলেন,’আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। কাল রাতেও প্রতিদিনের মত শিশুটি আমায় ডাকে,কথা বলে।’ তিনি জানান, ২০২২ এর ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে তারা এখানে ছিল। দম্পতির মধ্যে কোনদিন কোনোও গোলযোগ দেখেননি ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, রবিবার রাতে স্বামী কাজে গিয়েছিলেন । আজ সোমবার সকাল কাজ থেকে ফিরে দেখেন তাদের ভাড়া ঘরের দরজা বন্ধ । প্রথমে তিনি ফোন করেন এবং স্ত্রীকে অনেক্ষণ ধরে ডাকাডাকি করেন । কিন্তু তাতেও দরজা না খোলায় বিষয়টি বাড়ির মালিককে জানান । ইতিমধ্যে লোকজন জড়ো হয়ে যায় । খবর পেয়ে আসে পুলিশ৷ শেষে পুলিশের অনুমতিক্রমে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই মাকে গামছা এবং মেয়ের ওড়নার ফাঁসে সিলিং ফ্যানে ঝুলতে দেখে সকলে ৷ বর্ধমান থানার পুলিশ তাদের দেহ উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা । মৃতের পরিবারের কেউ উপস্থিত না থাকায় ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায়নি।
দুই প্রতিবেশী জানান, ছোট্ট মেয়েটি খুব ফুটফুটে ছিল। তাদের পরিবারে কোনো ঝামেলা তারা দেখেননি । কাল রাতেও মেয়েটি কার্টুন দেখছিল। হঠাৎ এতবড় সিদ্ধান্ত কেন নিল তা ভেবে পাচ্ছেন না তারা ।প্রভঞ্জন বর্মনের সহকর্মী ও প্রতিবেশী জয়ন্ত রায় বলেন,উনি আমার সহকর্মী। ছেলে হিসেবে অত্যন্ত ভাল। ফুটফুটে বাচ্চা । পারিবারিক কী বিষয়ে এতবড় ঘটনা ঘটে গেল তা বুঝতে পারছি না।পুলিশ জানিয়েছে,ঘটনার তদন্ত চলছে । মৃতার স্বামী প্রভঞ্জন বর্মনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ ।।