প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ ডিসেম্বর : জঙ্গল থেকে অচমকাই উধাও বাঘিনী জিনাত । তার খোঁজে একাধিক রাজ্যের বন দফতরের লোকজন হন্যে হয়ে এক জঙ্গল থেকে আর এক জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।কিন্তু বাঘিনী জিনাতের গতিবিধির হদিশ এখনও অধরাই রয়ে আছে।আর তার কারণেই বাঘের আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল এলাকার বাসিন্দাদের । এমন ভয় ভীতির আবহে বুনো দেশি নেকড়ে অর্থাৎ ’হেরোল’ একের পর মানুষকে কামড়ে জখম করে চলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের বুদবুদের দেবশালার গোবিন্দপুর গ্রামের মানুষজন । সেই আতঙ্ক থেকে নিস্কৃতি পেতে হেরোলটির’ই প্রাণ কেড়ে নিল গ্রামবাসীরা। পিটিয়ে হেরোল হত্যার ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার বর্ধমান রেঞ্জের বনকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে হেরোলটির মৃতদেহ উদ্ধার করে।শুরু হয়েছে হেরোলটি হিংস্র হয়ে ওঠার কারণ নিয়ে তদন্ত ।
জেলার বিভাগীয় বনাধিকারিক সঞ্চিতা শর্মা জানিয়েছেন, মৃত হেরোলটিকে বর্ধমানের রমনা বাগানের বনদফতরে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে হেরোলটির মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে । হেরোলটির হিংস্র হয়ে ওঠার পিছনে ’র্যবিশ’ বা ডিস্টেম্পারের মত রোগ কারণ কী না তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে।একই সঙ্গে তিনি এও বলেন,’মানুষের সঙ্গে ব্যন্য প্রাণীদের সংঘাত কমাতে বনাঞ্চলে পেট্রলিং করা হবে।তার সাথে বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেওয়া হবে। গোবিন্দপুর এলাকার বাসিন্দাদের কথা অনুযায়ী,হেরোলের কামড়ে এলাকার প্রায় ১৫ জন জখম হয়েছে। তাই হেরোলটির উপর এদিন এলাকার বাসিন্দাদের রোষ আছড়ে পড়ে।গ্রামবাসীদের কথায় এও জানা যায়,ইদানিং হেরোল মাঝে মধ্যেই এলাকার লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। শিকার করছে ভেড়া,ছাগল।সাথে সাথে এলাকার মানুষজনকেও কামড়ে জখম করছে। এসবের জন্যই মাংশাসী হেরোলের সঙ্গে মানুষের সংঘাত বাড়ছে।তারই চুড়ান্ত রুপ এদিন প্রকাশ পেয়েছে।

প্রাণী বিশারদদের কথায় জানা গিয়েছে,’হেরোল আসলে হল ’ইণ্ডিয়ান গ্রে উলফ’ অর্থাৎ বুনো দেশি ’নেকড়ে’।ভারতীয় উপমহাদেশেই এদের দেখা মেলে।এটিকে বাঘ বলা হলেও এরা আসলে ’ক্যানাইন’ প্রজাতির প্রাণী।গত কয়েক বছরে এদের সংখ্যা বেড়েছে। দেবশালার সন্নিকটের কাঁকসা ও আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে শিয়ালের পাশাপাশি হায়েনাও আছে। হায়েনাকে আধবাঘা আর নেকড়েকে হেরোল বলা হয়। একটি রিসার্চে উঠে এসেছে,এদের সংখ্যা কম করে পঞ্চাশ থেকে দেড়শোর কাছাকাছি হতে পারে। একসময় জঙ্গল অনেকটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।পরে বনসৃজন প্রকল্পের দৌলতে গাছপালা বাড়লে হেরোল অনুকুল পরিবেশ পায়।কিন্তু বর্তমানে বনাঞ্চলের ঘাটতি তৈরি হওয়ায় খাদ্যের টান পড়তেই হেরোল লোকালয় মুখি হয়ে পড়ছে।
বর্ধমান অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্য অর্ণব দাস জানান, হেরোল পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী। এই হেরোলটি র্যাবিশ আক্রান্ত ছিল কী না, তা হয়তো নিশ্চয়ই দেখা হবে।হেরোলটিকে হত্যার জন্য অনুতাপ প্রকাশ করে তিনি বলেন,এই প্রাণীদের নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সংঘাতের পরিবেশ কমাতে হবে।পিটিয়ে মারায় প্রাণীসম্পদ রক্ষায় পরিকল্পনার অভাব এবং সহাবস্থানের সমস্যাই মুখ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে।।

