এইদিন ওয়েবডেস্ক,কোয়েম্বাটুর,২৭ ডিসেম্বর : নিজেকে প্রকাশ্যে চাবুক মেরে ধর্ষিতা ছাত্রীর পরিচয় প্রকাশকারী পুলিশের শাস্তির দাবি জানালেন তামিলনাড়ু বিজেপি সভাপতি কে আন্নামালাই । চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর পরিচয় প্রকাশ করার জন্য তিনি পুলিশকে অভিযুক্ত করেছেন এবং বলেছিলেন যে এর প্রতিবাদে তিনি নিজেকে ছয়বার বেত্রাঘাতও করবেন । যথারীতি আজ নিজের বাড়ির সামনে আদুল গায়ে নিজেকে ৬ বার চাবুক মারেন । সপ্তমবার মারতে গেলে একজন বয়স্ক বিজেপি নেতা ছুটে গিয়ে আন্নামালাইকে জড়িয়ে ধরে বাধা দেন । পরে বিজেপির সভাপতি কে আন্নামালাই বলেছেন,’যে কেউ তামিল সংস্কৃতি বোঝে তারা সর্বদা জানবে যে এগুলি সবই দেশের অংশ । নিজেদেরকে চাবুক মারা, নিজেদেরকে শাস্তি দেওয়া এবং নিজেদেরকে কঠিন ছন্দের মধ্য দিয়ে ফেলা এই সংস্কৃতির অংশ । এটি কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় । কিন্তু আন্না ইউনিভার্সিটিতে যে একটা অবিরাম অন্যায় হচ্ছে, সেটা যদি আপনি দেখেন, তাহলে সেটা হল বিগত ৩ বছর ধরে চলা সাধারণ মানুষ, নারী, শিশুর বিরুদ্ধে ক্রমাগত অবিচার এবং উচ্চ দুর্নীতি…গতকাল আমরা ঘোষণা করেছি এবং আমি সেই পথ বেছে নিয়েছি যে পথে আমার অনেক পূর্বপুরুষ হেঁটেছেন, নিজেদেরকে চাবুক মেরেছেন…।’ আগের দিন কে আন্নামালাই বলেছিলেন, ‘যখন একটি মেয়ে ধর্ষিত হয়, এটি কেবল তার ব্যথা নয়। এটি আমাদের সমাজ এবং সরকারের ব্যর্থতা যদি এটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ।’
বৃহস্পতিবার(২৬ ডিসেম্বর),কোয়েম্বাটোরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়, আন্নামালাই বলেছিলেন,’আমি আগামীকাল সকাল ১০ টায় আমার বাড়ির সামনে নিজেকে ছয়বার বেত্রাঘাত করব। ডিএমকে সরকার ক্ষমতা থেকে সরে না যাওয়া পর্যন্ত আমি জুতো পরব না… ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আমি ছয়টি অরূপদাই ভিদুস (ভগবান মুরুগানের ছয়টি প্রধান স্থান) পরিদর্শন করব এবং তামিলনাড়ুর পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের কাছে অভিযোগ করব।’ আন্নামালাই বলেন, এখন বিজেপি কর্মীরা বাড়ির বাইরে বসে বিক্ষোভ দেখাবে।
গত ২৩ ডিসেম্বর,চেন্নাইয়ের আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আন্নামালাইয়ের এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে রাস্তার বিক্রেতার দ্বারা ধর্ষণের শিকার ১৯ বছর বয়সী এক প্রকৌশল ছাত্রী। সে প্রথমে একটি মেয়ের ভিডিও করে,মেয়েটি তার বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল এবং তারপর তার বন্ধুকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় ওই হকার । এরপর সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে এবং তার ফোন নম্বর নিয়ে তাকে যেখানেই ডাকে সেখানে আসতে বলে। মেয়েটি ঘটনাটি বাড়িতে জানালে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত জ্ঞানশেকরনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জ্ঞানসেকরন(৩৭), ক্যাম্পাসেই বিরিয়ানি বিক্রি করত । আন্নামালাই অভিযোগ করেছেন যে জ্ঞানসেকরন ক্ষমতাসীন ডিএমকে-র একজন কর্মকর্তা ছিল । ডিএমকে-র বড় নেতাদের সঙ্গেও তাঁর ছবি রয়েছে। যদিও ডিএমকে এর থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। ২০১১ সালে একই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছিল জ্ঞানসেকরন। তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা রয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, ডিএমকে-র আশীর্বাদ থাকায় জ্ঞানশেখরনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ ।
এই বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপি প্রধান আন্নামালাই। তিনি অভিযোগ করেন যে পুলিশ এই মামলার এফআইআর ফাঁস করেছে, যার কারণে নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে। এমনকি তার ফোন নম্বর ও ঠিকানাও প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এফআইআরও এমনভাবে লেখা হয়েছে যাতে নির্যাতিতাকে অপমান করা হয়। তিনি বলেন যে ডিএমকে শাসনের অধীনে, তামিলনাড়ু অপরাধীদের স্বর্গে পরিণত হয়েছে এবং পুলিশকে আইনশৃঙ্খলার জন্য নয়, বিরোধীদের নীরব করতে ব্যবহৃত হয়।
এ নিয়ে আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র সংগঠনগুলো। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবের অভিযোগ করেছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব ক্যামেরা লাগানো হয়েছে তা শুধু দেখানোর জন্য, কেউ সেগুলো মনিটর করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে বলে অভিযোগ ছাত্রদের। আন্না বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের পর অনেককে আটক করা হয়। মহিলা কমিশনের কাছেও বিষয়টিতে হস্তক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে।।