এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২৭ ডিসেম্বর : প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডাঃ মনমোহন সিং বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুর পর শুক্রবার সমস্ত সরকারি কর্মসূচি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সরকার ৭ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। সূত্র জানায়, আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ডঃ মনমোহন সিংকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাহ করা হবে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে এআইএমএস-এ ভর্তি করা হয়েছিল, যেখানে তিনি মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছিলেন। এর আগেও স্বাস্থ্যজনিত কারণে বহুবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে কংগ্রেস তাদের সমস্ত আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিও বাতিল করেছে ।
কংগ্রেস সাংসদ কেসি ভেনুগোপাল বলেছেন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিংয়ের সম্মানে প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন সহ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমস্ত আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি আগামী সাত দিনের জন্য বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে সমস্ত আন্দোলন এবং প্রচার কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২৫ সালের ৩ জানুয়ারী, থেকে দলীয় কর্মসূচি পুনরায় শুরু হবে। শোকের এই সময়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন । তিনি এক্স-এর একটি পোস্টে লিখেছেন যে ভারতের সবচেয়ে বিশিষ্ট নেতা ডঃ মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ। তিনি একটি নম্র পটভূমি থেকে একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন। তিনি অর্থমন্ত্রীসহ বিভিন্ন সরকারি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং বছরের পর বছর ধরে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিতে গভীর ছাপ রেখে গেছেন। সংসদে তার হস্তক্ষেপও ছিল খুবই বাস্তব, আমাদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
শোক প্রকাশ করে, প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন যে ডঃ মনমোহন সিংজি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন নিয়মিত কথা বলতাম। শাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের গভীর আলোচনা হতো, তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও বিনয় সর্বদাই প্রকট হতো। আমার সমবেদনা ডঃ মনমোহন সিং জি-এর পরিবার, তাঁর বন্ধুবান্ধব এবং অসংখ্য ভক্তদের সঙ্গে রয়েছেন৷
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর, দেশের অর্থমন্ত্রী এবং তারপরে দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত তাঁর ১০ বছরের যাত্রা অসাধারণ । ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে, তার সরকার ৫ টি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়তা করেছে । আমরা যদি মনমোহন সিং সরকারের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংস্কার দেখি তাহলে এটি ছিল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (MNREGA)। এই একটি আইন দেশের অভিবাসন সমস্যা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। শুধু তাই নয়, এই আইনে গ্রামীণ, দরিদ্র ও অদক্ষ লোকদের ১০০ দিনের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।মনমোহন সিংয়ের সরকারে তথ্যের অধিকার আইন পাস হয়েছিল। এই একটি আইন অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা আনয়নে দারুণ কাজ করেছে। এটি সরকারের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি ভাল পদক্ষেপ বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মনমোহন সিং সরকারের আরেকটি বড় কাজ ছিল ‘খাদ্যের অধিকার’। এর আওতায় দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর সুবিধা ছিল দেশের বৃহৎ জনসংখ্যা ক্ষুধা নিয়ে চিন্তা না করেই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারত। দেশে আজ যে প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ আন্না যোজনা চলছে, তা এই আইনের কারণে। এই আইন কোভিডের সময় দেশের দরিদ্র মানুষকে অনেক সাহায্য করেছে।মনমোহন সিংয়ের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে দেশের মহাকাশ অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছিল। একই সময়ে, দেশটির মহাকাশ সংস্থা ইসরো চাঁদ ও মঙ্গলে তাদের মহাকাশযান পাঠিয়েছে। এই পদক্ষেপ ভারতকে বহির্জাগতিক মহাকাশ অভিযান পাঠানোর শক্তি দিয়েছে। মনমোহন সিং সরকারের আমলে ভারতের মনুষ্যবাহী মহাকাশ মিশনের রূপরেখা বাস্তবায়িত হয়েছিল।
দেশের অর্থনীতি, যুব ও ভবিষ্যতের চাহিদা উপলব্ধি করে মনমোহন সিংয়ের সরকার দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করেছে। তাঁর আমলেই দক্ষতা উন্নয়ন মিশনের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, যা আজ দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রকের রূপ নিয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির পদক্ষেপ হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে তার সরকারের এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।।

