প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ ডিসেম্বর : কিম্ভূত কিমাকার ছাঁটে মাথার চুল কেটে তাতে লাল বা বাদামি রং করিয়ে স্কুলে আসছে ছাত্ররা।যা দেখে লজ্জায় মুখ লুকোতে হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের।এমত অবস্থায় ছাত্রদের ’বিসদৃশ’ চুলের ছাঁটে লাগাম পরাতে রীতিমত সভা ডেকে নাপিতদের শরণাপন্ন হলেন শিক্ষকরা।তারই সাথে তারা নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরু থেকে ছাত্রদের স্কুল ছাত্র সুলভ চুল কাটিয়ে তবেই স্কুলে পাঠানোর বার্তা অভিভাবকদের দিলেন।শিক্ষক মহাশয়দের অনুরোধ মেনে ছাত্রদের চুলের ছাঁটে ’শোভনতা’ ফেরাতে নাপিত ভাইয়েরা কি করেন, সেদিকেই এখন তাকিয়ে পূর্বস্থলীর বাসিন্দারা।
পারুলিয়া কুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়টি পূর্বস্থলী ২ ব্লকের অন্যতম নামজাদা স্কুল।২০১৩ সালে এই স্কুলের এক পড়ুয়া মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়। ২০১৭ সালে রাজ্যের সেরা স্কুলের স্বীকৃতিও পায় এই স্কুল। এছাড়াও খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে এই স্কুলের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে।বর্তমানে স্কুলে তিন হাজারেরও বেশী পড়ুয়া রয়েছে।এমন এক ঐতিহ্যশালী স্কুলের ছাত্রদের ’বিসদৃশ’ মাথার চুলের ছাঁট বিড়ম্বনায় ফেলেদেয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে।
নতুন শিক্ষাবর্ষে সেই বিড়ম্বনা থেকে নিস্কৃতি পেতে এলাকার নাপিতদের শরণাপন্ন হন শিক্ষকরা। সেই মত সভামঞ্চ তৈরি করা হয়।বৃহস্পতিবারের সেই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য স্কুলের সকল ছাত্রদের অভিভাবক এবং এলাকার সকল নাপিতদের আহ্বান জানানো হয়। সভায় এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত সামন্ত সহ পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর প্রায় পড়ুয়াদের প্রায় দেড় হাজার অভিভাবক এবং প্রায় ত্রিশ জন নাপিত উপস্থিত থাকেন। ছাত্রদের “বিসদৃশ’ কেশ সজ্জায় লাগাম পরাতে স্কুল কর্তৃপক্ষের এহেন পদক্ষেপ গ্রহনকে সাধুবাদ জানান অভিভাবকদের অনেকেই ।
সভায় উপস্থিত হওয়া নাপিতদের কাছে শিক্ষকরা তুলে ধরেন স্কুলের মর্যাদার কথা। ছাত্রদের মাথার চুলের ’বিসদৃশ’ ছাঁট,কতটা স্কুলের ঐতিহ্যের পরিপন্থি এবং অসন্মানজনক তা সভায় তুলে ধরেন শিক্ষকরা।একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত সামন্ত পড়ুয়াদের অভিভাবক ও নাপিতদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন,“স্কুল মানে শুধু ইংরাজী বা অঙ্ক শেখা আর দু-চার পাতা বইপড়া নয়। ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে শিষ্ঠাচার,আচার আচরণ,শৃঙ্খলা বোধ,রুচিশীলতা,সবই তৈরি হয় স্কুল থেকে।তাতে অবশ্যই শিক্ষকদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। তবে কোন ছাত্রের মাথার চুলের ’বিসদৃশ’ ছাঁট বিদ্যালয়ের পরিবেশের পরিপন্থি হয়ে উঠবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই ছাত্রদের চুলের ছাঁটে লাগাম পরারেই এমন ব্যতিক্রমী সভা ডাকাতে হল বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা জানান।।