এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ ডিসেম্বর : টালিগঞ্জের চলচ্চিত্র অভিনেতা, থিয়েটার অভিনেতা, গায়ক এবং পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য ‘বামপন্থী’ বলে পরিচিত রাজনৈতিক মহলে । যদিও তিনি বছর তিনেক আগে আনন্দবাজারের কাছে ‘বামপন্থী’ রাজনীতির সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন,’বামপন্থার সঙ্গে কোনও দিনই আমার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল না। বরং আমি রাজনীতির শিকার, এটা বলা যেতে পারে। গরিব, নীপিড়িত মানুষেরা যাতে ভাল থাকে, এটাই আমার রাজনীতি৷’ কিন্তু তিনি ফের একই সংবাদমাধ্যমে একটা সাক্ষাৎকারে দেশের বর্তমান নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ‘পুঁজিবাদী আর দক্ষিণপন্থী মতবাদ’ বলে কটাক্ষ করেছেন, যে ভাষা সচারাচর বামপন্থীদের মুখেই শুনতে পাওয়া যায়৷ যাই হোক, তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমান তিক্ত সম্পর্কে ‘কষ্ট’ পেয়েছেন এবং এই তিক্ততার দায় উলটে কেন্দ্র সরকারের উপরেই চাপিয়েছেন । তবে তিনি বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর অমানবিক নির্যাতন নিয়ে একটা শব্দ খরচ করেননি । টলিউডের অভিনেতার এই প্রকার ‘ভন্ডামি’র তীব্র নিন্দা করেছেন রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ সভাপতি তথা কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তরুনজ্যোতি তিওয়ারি । তিনি অনির্বাণ ভট্টাচার্যর এই প্রকার মানসিকতাকে ‘সংকীর্ণ চিন্তার পরিচায়ক’ বলে নিন্দা করেছেন ।
পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণের স্ক্রীন শর্ট এক্স-এ শেয়ার করেছেন তরুনজ্যোতি । ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি কষ্ট দেয়, নেতা বেছেছি আমরা, তাই দায় তো আমাদেরই!’ শীরোনামের ওই প্রতিবেদনে অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হয়, ‘ইদানীং ভারত-বাংলাদেশের মিষ্টি সম্পর্কে একটু যেন তিক্ততা। শিল্পী অনির্বাণকে ছুঁয়ে যায়? খারাপ লাগে?’ উত্তরে তিনি বলেন,’হ্যাঁ ছুঁয়ে যায়। খারাপ লাগে। কী বলব? আমরা আমাদের রাজনীতির দায়ভার দক্ষিণপন্থী নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছি। পুঁজিবাদী আর দক্ষিণপন্থী মতবাদ- আমরা এই করতেই তো পৃথিবীতে এসেছি। ঝামেলা বাঁধাতে, হাঙ্গামা তৈরি করতে। রাজনীতির এটা একটা মুখ। এটা করে সমাজের মধ্যে যত রকম অশান্তি, যত রকম ব্যবধান তৈরি করা যায়, করতে থাকো। আর মুনাফা লুটতে থাকো। ভোট লুটতে থাকো। শিল্পপতির টাকা বাড়তে থাকুক। সবাই জানে।’
টালিগঞ্জের ওই অভিনেতার এই প্রকার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তরুনজ্যোতি তিওয়ারি লিখেছেন, ‘অনির্বাণ ভট্টাচার্যের বক্তব্যে ভারতের রাজনীতি এবং দক্ষিণপন্থী নীতির সমালোচনা থাকলেও, বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর নিরবচ্ছিন্ন অত্যাচারের প্রসঙ্গটি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়কে দীর্ঘদিন ধরে হত্যা, ধর্ষণ, মন্দির ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের মতো অপরাধের শিকার হতে হয়েছে, যা একটি ঐতিহাসিক এবং চলমান বাস্তবতা। এই নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছেন, যা কেবলমাত্র তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণেই ঘটছে। কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে অনির্বাণের মতো বুদ্ধিজীবীরা নিশ্চুপ, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং সংকীর্ণ চিন্তার পরিচায়ক। এই বামপন্থী অভিনেতার কথা পড়ে মনে হয় যে বাংলাদেশের যাবতীয় ঘটনার জন্য ভারতবর্ষের সরকার দায়ী। ভাগ্য ভালো বলেনি যে বাংলাদেশের হিন্দু হত্যার পিছনেও ভারতবর্ষ দায়ী। আরেকটু পয়সা পেলে নিশ্চয়ই বলতো।’
তিনি আরও লিখেছেন,’বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপর এই নির্যাতন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি রাষ্ট্রীয় অবহেলা এবং চরমপন্থীদের হাতে নিপীড়িত একটি জনগোষ্ঠীর আর্তনাদ। অথচ এ বিষয়ে যারা সরব হওয়ার কথা, তারা নিজেদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক অবস্থান ধরে রাখতে চুপ থেকেছেন। প্যালেস্টাইনের মতো ইস্যুতে সোচ্চার হওয়া এসব বুদ্ধিজীবীর নিরবতা এই প্রশ্ন তোলে যে, তারা আদৌ সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে আন্তরিক, নাকি এটি শুধুই তাদের রাজনৈতিক বা আদর্শিক স্বার্থরক্ষার হাতিয়ার। বাংলাদেশের হিন্দুদের প্রতি এই বঞ্চনা এবং অবিচারের কথা বলা তাদের নৈতিক দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল।’
উল্লেখ্য,বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের বিষয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরোও একটা বিবৃতি জারি করেছিল । যাতে বাংলাদেশ সরকারকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়ার আবেদন জানানো হলেও হিন্দু নির্যাতনের জন্য ভারতের হিন্দুত্ববাদীদের ওপর যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল সিপিএম । সিপিএমের এই প্রকার মানসিকতার সঙ্গে অনির্বাণ ভট্টাচার্যর মানসিকতার মধ্যে অনেকাংশে মিল খুঁজে পাওয়া যায় । আর সেই কারনেই বাংলার ওই অভিনেতার উপর বারবার বামপন্থী রাজনীতির ছাপ পড়ে ।।