কংগ্রেসের জমানায় বহু কুকর্ম ঘটেছে যেগুলি ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছে । এমনই একটা ঘটে যাওয়া মারাত্মক ঘটনা হল রাজস্থানের আজমির গণধর্ষণ মামলা । তবে ঘটনাটি এতটা মারাত্মক যে সেটা ধামাচাপা দেওয়া কংগ্রেসের পক্ষে সম্ভব হয়নি । সেই মামলার ন্যায় বিচার পেতে সময় লেগে গেছে দীর্ঘ ৩২ বছর,কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস উচ্ছেদ হলে । কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকলে আদপেই ন্যায়বিচার হত কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে । চলতি বছরের আগস্ট মাসে একটি বিশেষ আদালত আজমির গণধর্ষণ- ব্ল্যাকমেল মামলায় ছয় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং এই জঘন্য অপরাধের ৩২ বছর পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয় । আদালত নাফিস চিশতি, সেলিম চিশতি, ইকবাল ভাটি, নাসিম সৈয়দ, জমির হুসেন এবং সোহিল গনিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। যৌন নিপীড়ন ও ব্ল্যাকমেইল মামলায় মোট ১৮ জন আসামি ছিল, যার মধ্যে নয়জনকে ইতিমধ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ফারুক চিশতি । খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বংশ বলে মনে করা হয় ফারুক চিশতিকে ।
ঘটনাটি ১৯৯২ সালের । ফারুক চিশতি ও তার দলের বিরুদ্ধে ১০০ জনেরও অধিক হিন্দু মেয়েকে যৌন শোষণ ও গনধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল । ওই সমস্ত মেয়েদের গণধর্ষণ করে এবং তারপরে তাদের অশ্লীল ছবি প্রচার করে ফারুক চিশতি ও তার দলবল । নির্যাতিতাদের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে । ফারুক চিশতি, তার সহযোগী নাফীস এবং তার সহযোগীরা ফার্মহাউস পার্টি এবং রেস্তোরাঁয় ছাত্রীদের আমন্ত্রণ জানাত ৷ যেখানে তাদের নেশাগ্রস্ত করে গণধর্ষণে লিপ্ত হত । শুধু তাইই নয়, ফারুক চিশতিরা নির্যাতিতাদের অশ্লীল ছবি তুলে রেখে দিত যাতে তারা তাদের ব্ল্যাকমেইল করে সেই পার্টিতে অন্য মেয়েদের নিয়ে আসতে পারে । এই মামলায় ফারুক চিশতিকে ২০০৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল । কিন্তু ২০১৩ সালে রাজস্থানে কংগ্রেসের শাসনের সময় রাজস্থান হাইকোর্ট তাকে মুক্তি দিয়েছিলেন কারণ তিনি নাকি তার সাজা যথেষ্ট পূরণ করেছেন । তারপর থেকে ফারুক চিশতি সেই আজমীরে সুখে বসবাস করছেন কারণ তিনি একটি খাদিম পরিবার থেকে এসেছেন যাকে খাজা মঈনুদ্দিন চিশতীর বংশ বলে মনে করা হয়। এই লোকেরা কেবল তাদের ধর্মীয় দিক থেকে শক্তিশালী ছিল না,কংগ্রেসের মধ্যে ফারুক চিশতীদের ব্যাপক প্রভাব ছিল ।
জানা যায় যে নির্যাতিতা মেয়েদের মধ্যে, আইএএস এবং আইপিএস মেয়েরাও ছিল এবং তবুও ১ বছর ধরে কেউ এই বিষয়ে একটি খবরও প্রকাশ করেনি। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিক নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করার পর এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তারপরও পুলিশ মামলা করতে রাজি হয়নি এবং অজুহাত দেখিয়েছিল যে এটি সম্প্রতির পরিবেশ নষ্ট করবে। পরে জনগণের চাপে মামলা দায়ের করে জেল হাজতে পাঠানো হয়, যেখান থেকে এই ধর্ষক ও জিহাদীদের কেউ কেউ মুক্ত হয়ে আজ সুখে জীবন যাপন করছে।
সেই ফারুক চিশতি এবং তার পরিবার এখনও সেই একই আজমির দরগা পরিচালনা করছেন যেখানে শুধুমাত্র হিন্দুরাই চাদর চড়াতে যায়। চিশতির সম্প্রদায় তার অপকর্মের পরোয়া করে না। আজও তাকে মাথায় নিয়ে ঘুরছে । আর শুধু তার সম্প্রদায়কে কি বলবেন, যেখানে হিন্দুরাই এমন জায়গায় চাদর চড়াতে যাচ্ছে যেখানে তাদের মেয়েদের ধর্ষক অপারেটর হয়ে হিন্দুদের টাকায় জীবন উপভোগ করছে। আজও তার রাজনৈতিক প্রভাব আগের মতোই রয়ে গেছে ।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্লা বলেছিলেন যে তাদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে, পূর্ববর্তী কংগ্রেস সরকারগুলি একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অপরাধীদের ক্লিন চিট দেওয়া নিশ্চিত করেছিল । তিনি বলেন, আজমীর ধর্ষণ মামলায় আদালতের রায় অপরাধীদের এবং কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে জোট প্রকাশ করেছে ।
তিনি বলেছিলেন,আজমীরের দুষ্ট ‘খাদিম’রা ১০০ জনেরো বেশি নিষ্পাপ মেয়েকে ধর্ষণ করে ব্ল্যাকমেইল করছিল। কংগ্রেসের সব সরকারই সেই ধর্ষকদের রক্ষা করার জন্য কাজ করেছে। তাদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে, কংগ্রেস সরকারগুলি মুসলিম তুষ্টিতে লিপ্ত হয়েছিল এবং তাদের ক্লিন চিট দেওয়া হয়েছিল । তিনি অভিযোগ করেন,’ফারুক চিশতি তখন আজমির যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন, নাফিস চিশতি ছিলেন আজমির যুব কংগ্রেসের সহ-সভাপতি এবং আনোয়ার চিশতি ছিলেন আজমির কংগ্রেসের সম্পাদক ।’
শুক্লা কংগ্রেস এবং তার জোটসঙ্গীদেরকে “ধর্ষকদের বাঁচাও জোট” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসকে তাদের এই কৃতকর্মের জন্য সর্বসমক্ষে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান ।
তিনি বলেন, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস নির্যাতিতাদের মর্যাদার চেয়ে ভোটব্যাংকের রাজনীতি নিয়ে বেশি চিন্তিত। বিজেপি নেতা আজমির মামলা নিয়ে কংগ্রেসের “নিরবতা” নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন,’যখন একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্ষকদের মুখোশ খুলে দেওয়া হয়, তখন কেন ভারত জোটের নেতারা নীরবতা পালন করেন? সমাজবাদী পার্টির মাদ্রাসা শাখার সভাপতি যদি ধর্ষণের মামলায় ধরা পড়ে, তাহলে তারা নীরবতা পালন করে, কেন?’ তিনি প্রশ্ন করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে কলকাতা ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা করার অভিযোগও করেছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক ভাস্করে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,গগনধর্ষণ ও ব্ল্যাকমেইল কেলেঙ্কারির প্রধান আসামি নাফীস চিশতী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও অপরাধ জগতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার বাড়ি, পান্নিগ্রান চকের একটি হোটেলের পঞ্চম তলায় অবস্থিত, একটি প্রধান ক্রিকেট বেটিং হাব ছিল এবং গ্যাংটি একটি আন্তর্জাতিক বেটিং নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ছিল। পাঁচ বছর আগে, তৎকালীন এসপি বিকাশ কুমারের বিশেষ পুলিশ দল নাফিসের বাড়ি থেকে ৫.২০ কোটি টাকার টাকা বাজেয়াপ্ত করেছিল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাফীস চক্র এই কালো ব্যবসায় টাকা লেনদেন করত। নাফীস গ্যাং থেকে ফটকাবাজদের ক্রেডিট লাইনও দেওয়া হচ্ছিল। দুবাইয়ের বুকি বান্টির সঙ্গে এই চক্রের যোগসূত্র পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থল থেকে ১৫টি মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ফোন রেকর্ডার, ডায়েরি এবং ২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। নাফীস চিশতীর বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা দায়ের করা হয়, যা জরিমানা শেষে নিষ্পত্তি হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,১৫ বছর আগে, গুজরাট পুলিশ নাফিস এবং ফারুক চিশতিকে আজমের থেকে গুজরাটে পাঠানো ২৪ কোটি টাকার মাদক পাচারের অভিযুক্ত হিসাবে বিবেচনা করেছিল। দরগা এলাকায় তাদের সঙ্গে জড়িত এমপি পাচারকারীরা ধরা পড়ে। মাদক চোরাচালানে ব্যবহৃত গাড়িটিও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এই গাড়িটি এখনও গঞ্জ থানায় দাঁড়িয়ে আছে। মূল অভিযুক্ত নাফীস চিশতী দরগাহ থানার খাতায় ২০২৩ পর্যন্ত পলাতক ছিলেন। বোরকা পরে পালাতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। অভিযুক্ত ইকবাল ভাট ২০০৫ সালে গ্রেফতার হন। সুহেল গনি চিশতি ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আজমির আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অভিযুক্ত আলমাস এখনও পলাতক। তিনি আমেরিকা যেতে পারেন বলে সন্দেহ ছিল। তার বিরুদ্ধে রেড কর্নার নোটিশ জারি করেছিল সিবিআই।
আজমির সহকারী পরিচালক (প্রসিকিউশন) বলেছিলেন,’নির্যাতিতারা আদালতে এলে তারা ভয় পায়। এমনকি কেউ তাকে চিনতে পারলে জীবন আরও কঠিন হয়ে যাবে, এই ভয়ে তারা তাদের মুখ থেকে নিজের নিজের ওড়না সরাতেও দ্বিধা করে ।’ তার এই বক্তব্যেই স্পষ্ট যে কংগ্রেসের শাসনকালে ইসলামি জিহাদিরা ঠিক কতটা বেপরোয়া ছিল । অনেকে অভিযোগ করেন যে কংগ্রেস, বামপন্থী, তৃণমূল কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি ও আম আদমি পার্টির মত তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলির ভোটব্যাংকের লোভে তোষামোদি রাজনীতির কারনে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন ও জিহাদি কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারন ।।