এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৮ ডিসেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার বাজারের রবীন্দ্রপল্লি এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ নিঃসন্তান দম্পতি অভিজিৎ যশ (৭২) এবং সবিতা যশ (৬৫) খুনের ঘটনার কিনারা করে ফেললো জেলা পুলিশ । মঙ্গলবার(১৭ ডিসেম্বর) দম্পত্তির দেহ উদ্ধারের ২ ঘন্টার মধ্যেই মৃত অভিজিৎ যশ ওরফে অভির সেজ শালীর মেয়ে ও তার দুই সন্তানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । পুলিশ জানিয়েছে,ধৃতদের নাম, মহুয়া সামন্ত ওরফে কেয়া এবং তার দুই ছেলে অরিত্র সামন্ত(২২) এবং অনিকেত সামন্ত(১৮) । ধৃতরা বর্ধমান শহরের বাসিন্দা । পুলিশ জানিয়েছে,মহুয়া সামন্ত বিভিন্ন সময়ে মেসো ও মাসির কাছে টাকার দাবি করত ৷ কিন্তু তারা অপমান করে তাড়িয়ে দিতেন । আর সেই আক্রোশেই দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে মাসি-মেসোকে খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল মৃত সবিতাদেবীর গুনধর বোনঝি ।
ভাতার গ্রামে আদি বাড়ি অভিজিৎ যশের । পেশায় ব্যবসায়ী অভিজিৎ যশ এলাকায় অভি নামে পরিচিত । প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হওয়ায় এলাকার মানুষ তাকে এক ডাকে চিনত । অভিজিৎবাবুর শ্বশুরবাড়ি ভাতার গ্রামের পার্শ্ববর্তী পালাড় গ্রামে । তিনি নিঃসন্তান ছিলেন । আগে বাজারের কদমতলায় তার বাড়ি ছিল । বাড়ির নিচের তলায় ছিল তার দোকান । বছর দুয়েক আগে কদমতলার বাড়ি বিক্রি করে রবীন্দ্রপল্লীতে নতুন বাড়ি তৈরি করে স্বামী-স্ত্রী মিলে বসবাস করছিলেন । বয়সের কারণে ব্যবসাও বন্ধ করে দেন তিনি । নিরীহ স্বভাবের ওই দম্পতির সঙ্গে আশপাশের বাসিন্দাদের যথেষ্ট সুসম্পর্কও ছিল । সাধারণত তারা বাড়ির ভিতরেই কাটাতেন । তবে মিশুকে অভিজিৎবাবু দুবেলা বাজারহাট করতে বেরিয়ে পরিচিতদের সঙ্গে গল্পগুজব করতেন। পাশাপাশি শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তার । শনিবার সন্ধ্যা থেকে আচমকা উধাও হয়ে যান দম্পত্তি । বাড়ির গেটের বাইরে থেকে তালা ঝোলানো । দম্পতির ফোনেও যোগাযোগ করতে পারেনি পরিবারের লোকজন,কারন সুইচ অফ ছিল ।
রাজ্য পুলিশ একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে,মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে বর্ধমানের বাসিন্দা সুপর্ণা চৌধুরী নামে একজন মহিলা ভাতার থানায় এসে জানান যে ওনার মেসো অভিজিৎ যশ এবং মাসি ছবিরাণী যশের সঙ্গে গত তিনদিন ধরে ফোনে কোন যোগাযোগ করে উঠতে পারছেন না এবং ভাতার রবীন্দ্রপল্লীতে ওনাদের বাড়িটিও বাইরে থেকে তালা দেওয়া আছে। আত্মীয়-স্বজন এবং স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ভাতার পুলিশের উপস্থিতিতে বাড়ির তালা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন মেসোমশাই এবং মাসীমা দুজনেই রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝের উপর মরে পড়ে আছে। ঘরের মধ্যে সমস্ত জিনিসপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
জানা গেছে,ঘটনার তদন্তের জন্য পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপারের নির্দেশে একটা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম(সিট) গঠন করা হয় । পুলিশ কুকুরের সাহায্যে তদন্ত করা হয় । বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে,টেকনিক্যাল সাপোর্টস টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায় । সোর্সের মাধ্যমে জানা যায় যে মৃত অভিজিৎ বাবুর সেজ শালীর মেয়ে মহুয়া সামন্ত ওরফে কেয়া সামন্ত বিভিন্ন সময়ে এদের কাছে টাকার দাবি করত কিন্তু এনারা অপমান করে তাড়িয়ে দিতেন । আর এতে প্রাথমিক সন্দেহ গিয়ে পড়ে মহুয়া সামন্তর উপরে । এরপর রাতেই পুলিশের একটা দল বর্ধমানে হানা দিয়ে মহুয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে । প্রথমে সে খুনের কথা অস্বীকার করলেও পুলিশের ম্যারাথন জেরায় সে নিজের অপরাধ কবুল করে এবং এই ঘটনায় তার দুই ছেলে অরিত্র ও অনিকেতের জড়িত থাকার কথা জানায় । এরপর পুলিশ মা ও দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেন ।
পুলিশের জেরায় ঘাতক মহিলা জানিয়েছেন যে মেশোমশাই অভিজিৎ যশের কাছে প্রায়ই দাবি টাকার দাবি করত । কিন্তু তার মেশো ও মাসি অপমান করে তাড়িয়ে দিত । সেই আক্রোশেই তিনি তার দুই ছেলেকে সাথে নিয়ে তাদের খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন । ধৃত মহিলা পুলিশের জেরায় জানিয়েছেন,শনিবার(১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মহুয়া সামন্ত এবং তার দুই ছেলে অরিত্র এবং অনিকেতকে সাথে নিয়ে মেশোমশাই অভিজিত যশ ও মাসি ছবিরানী যশকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং ঘরে থাকা মূল্যবান জিনিসপত্র এবং টাকা নিয়ে চলে যায় । যাবার সময় বাড়িটির বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে চলে যায় । মঙ্গলবার বিকেলে দম্পতির দেহ উদ্ধারের আগে মহুয়ার দুই ছেলে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এসেছিল বলেও খবর ।
আজ বুধবার ধৃতদের বর্ধমান অপরাধীদের আদালতে পেশ করা হবে এবং পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ । এছাড়াও আজ পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের তরফ থেকে ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে তদন্তে আসবে বলে জানা গেছে ।।