প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২১ জুলাই : বিধানসভা ভোটের সময়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচন কমিশনের ’ব্র্যাণ্ড অ্যাম্বাসেডর’ করা হয়েছিল দুই প্রতিবন্ধী খর্বকায় ভাতৃদ্বয়কে । আর ভোট মিটে যেতেই তারা এখন ’ব্রাত্য’ হয়ে গিয়েছেন । তাই এখনও কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত রয়ে আছেন ভোটে নির্বাচন কমিশনের ’ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ হওয়া সঞ্জীব মণ্ডল ও মানিক মণ্ডল । ভ্যাকসিন পাওয়ার সৌভাগ্য আদৌ হবেকিনা তাও জানেন না দুই খর্বকায় ভাতৃদ্বয় ।
প্রতিবন্ধী খর্বকায় ভাতৃদ্বয় সঞ্জীব মণ্ডল ও মানিক মণ্ডলের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি বিধানসভার কলানবগ্রামে । বাড়িতে রয়েছেন বৃদ্ধা মা আন্না মণ্ডল । মাটির এক কুটুরি বাড়িতেই তাঁরা বসবাস করেন । সরকারী ভাতার সামান্য কয়েকটা টাকা আর দু’চারটে ছগল,গরু ও মুরগি প্রতিপালন করে সামন্য যেটুকু রোজগার হয় তা দিয়েই তাঁরা দিন গুজরান করেন । এমনই এক হতদরিদ্র পরিবারের ’খর্বকায় প্রতিবন্ধী’ ভাতৃদ্বয় সঞ্জীব ও মানিক কে ২০২১ বিধানসভা ভোটে ২৬৫ মেমারি বিধানসভার ‘ভোট আইকন’ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনায় ‘প্রতিবন্ধী’ ও ‘৮০ উর্ধ্ব’ ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করার ব্যাপারে তাঁরাই হয়েছিলেন প্রধান মুখ ।
কোভিড অতিমারির মধ্যেই এইবার এই রাজ্যে হয় বিধানসভা নির্বাচন। তার জন্য নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু নতুন নিয়ম জারি করে ।’প্রতিবন্ধী’ ও ’৮০ উর্ধ্ব’ বয়সী ভোটাররা যাতে ’পোস্টাল ব্যালটে’ ভোট দিতে পারবেন তার ব্যবস্থা করে নির্বাচন কমিশন। এছাড়াও ’কোভিড পেসেন্টরাও‘ যাতে একই সুবিধা পান সেই ব্যবস্থাও কমিশন ধার্য করে । এই সকল ব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন গোটা রাজ্য জুড়ে প্রচার চালানোর উদ্যোগ নেয়। তারই প্রচার কাজে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা মেমারি বিধানসভার আধিকারিকরা ’আইকন’ হিসাবে বেছে নেন খর্বকায় দুই প্রতিবন্ধী ভাই সঞ্জীব মণ্ডল ও মানিক মণ্ডলকে।ভোটের সময় নিঃস্বার্থ ভাবেই এই দুই প্রতিবন্ধী ভাই ট্রাই সাইকেলে চড়ে গণতন্ত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসবে সবাইকে অংশ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানোর কাজও চালিয়ে যান । তাঁদের এই কর্মকাণ্ড ভোটার মহলে যথেষ্ট সাড়াও ফেলে । এখন ভোট মিটে গিয়েছে । আর ভোট মিটে যাওয়ার সাথে সাথেই ব্রাত্য হয়ে গিয়েছেন দুই প্রতিবন্ধী খর্বকায় ভাতৃদ্বয় ।
সঞ্জীব মণ্ডল ও মানিক মণ্ডল বুধবার আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন , ‘ভোট শেষ হয়ে গেছে । তাই এখন আর তাদের কথা কেউ মনে রাখে না। মনে রাখেনি সরকারও। সেই কারণে কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের আগেও তাঁরা কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা পান নি ।ভ্যাকসিন পাবার জন্যে অনেকবার পাল্লারোডের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়েছেন । লাইনে দাঁড়িয়েও ছিলেন । কিন্তু ভ্যাকসিন না পেয়ে তাঁদের হতাশ হয়েই বাড়ি ফিরতে হয়েছে ।’ সঞ্জীব ও মানিক জানিয়েছেন,ভ্যাকসিন পাওয়ার জন্য ব্লকের বিডিও অফিসেও মৌখিক ভাবে তাঁরা জানিয়ে ছিলেন। তাতেও সুরাহা হয় নি । আদৌ কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা পাবেন কিনা তা নিয়েও অন্ধকারে রয়েছেন বলে প্রতিবন্ধী খর্বকায় ভাতৃদ্বয় জানিয়েছেন ।
এই বিষয়ে মেমারি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ বলেন,“তাঁর সঙ্গে ওনারা যোগাযোগ করেন নি।তবে বিষয়টি তিনি জেনেছেন।খুব তাড়াতাড়ি ওনাদের ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করা হবে বলে বিডিও আশ্বাস দিয়েছেন ।।