প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ নভেম্বর : দামোদর যেন মুনাফা অর্জনের পিঠস্থান হয়ে গিয়েছে।কেউ দামোদরে বালি খাদান খুলে মুনাফা অর্জন করছেন।আবার ফেরিঘাটের ইজারাদাররা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য দামোদরের বক্ষে অজশ্র বাঁশ পুঁতে নির্মান করছে সেতু। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এটাই হয়ে গিয়েছে দামোদরের জল ছবি।তবুও অ্যাকশনে অপারগ প্রশাসন ও সেচ দফতর।
নদী মাতৃক জেলা হিসাবে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান। এই জেলার বিস্তির্ণ অংশ জুড়ে দামোদর নদ প্রবাহিত রয়েছে।চাষের সেচের জলেড় সিংহ ভাগ যোগানটাই মেলে দামোদর থেকে।এই নদীকে আঁকড়ে বুহু মৎসজীবীরও জীবন জীবিকা নির্বাহিত হয়।এহেন এক গুরুত্বপূর্ণ নদীর বক্ষে হাজার হাজার বাঁশ পুঁতে সেতু নির্মান কাজ শুরু হতেই ক্ষোভের পারদ চড়েছে মেমারি ১ ব্লকের দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকার বাসিন্দাদের।মুনাফা অর্জনের জন্য সেতু নির্মানের নামে এইভাবে দামোদরে দখলদারি কায়েমের বিষয়টি তাঁরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা দামোদর বক্ষে সেতু নির্মানের কাজ বন্ধের দাবিতে গণ স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ পত্র ব্লকের বিডিওকে জমা দিয়েছেন।
মেমারি ১ ব্লকের বিডিও কে দলুইবাজার এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন,“মেমারি ব্লকের পাল্লা এবং জামালপুর ব্লকের বেরুগ্রাম অঞ্চলের জামুদহ মৌজার মাঝ দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর নদ । জামুদহ থেকে পাল্লা পৌছাতে অনেক লোকজন নামিয়ে জোর কদমে এখন দামোদরে বুকে বাঁশের সেতু তৈরির কাজ চলছে“।এলাকা বাসীর দাবি,’গ্রীণ ট্রাইবুনালের’ নির্দেশ কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দামোদরের বক্ষে এভাবে সেতু নির্মাণ সম্পূর্ণ অবৈধ।তা সত্ত্বেও কারা,কোন দপ্তরের অনুমতি নিয়ে দামোদরের বক্ষে বাঁশের সেতু নির্মান করছে তা নিয়ে তাঁরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। খোঁজ নিয়ে তাঁরা জানতে পারেন,’দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত বা মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতি ,
কেউই দামোদরের বক্ষে বাঁশের সেতু তৈরি করার অনুমতি কাউকে দেয় নি।’ এর পরেই সেতু নির্মান বন্ধের দাবিতে দলুইবাজার এলাকার বাসিন্দারা মেমারি ১ ব্লকের বিডিওকে অভিযোগ জানান।
অভিযোগ পেয়েই বিষয়টি নিয়ে বর্ধমান দক্ষিণের মহকুমা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিডিও শতরুপা দাস।মহকুমা শাসককে চিঠি লিখে বিডিও জানান,দামোদরের বক্ষে বাঁশ পুঁতে যে সেতুটি নির্মাণ হচ্ছে সেটি কখনই নিরাপদ সেতু হতে পারে না। মোটর বাইক বা তার সমতুল্য কোন যানবাহনে চেপে কেউ ওই সেতু দিয়ে যাতায়াত চললে যে কেন সময় বড় দুর্ঘটনার ঘটতে পারেন। বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্যেও মহকুমা শাসককে জানান বিডিও। পাশাপাশি বিডিও ওই চিঠির প্রতিলিপি সেচ দফতরের দামোদর ক্যানেল ডিভিশন সহ একাধীক বিভাগ ও ব্লকের ভূমি দফতর এবং মেমারি থানাতেও পাঠিয়ে দেন ।
বিডিওর চিঠির ভিত্তিতে প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত শুরু হতেই সামনে চলে আসে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির কীর্তি।জানাযায়,’জামুদহ এলাকায় ’ফেরিঘাট’ কারার জন্য চলতি বছরেও নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে ’লিজ’অনুমোদন করেছে জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি।২০২৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৫ সালের ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ওই ফেরিঘাট চালানোর লিজ অনুমোদনের দরুন জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি ওই সংস্থার কাছ থেকে নগদে ৬২ হাজার টাকা নিয়েছে।জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির একজিকিউটিভ অফিসারের স্বাক্ষর ও শীল মোহর দেওয়া বাৎসরিক লিজ চুক্তিপত্রে শুধুমাত্র ’জামুদহ ফেরিঘাটের’ জন্য লিজের কথা উল্লেখ করা রয়েছে।কিন্তু জামুদহ থেকে কোন জায়গা পর্যন্ত যাওয়ার জন্য ’ফেরিঘাটের লিজ“ অনুমোদন করা হল,সেই সংক্রান্ত কোন কিছুরই উল্লেখ নেই লিজ চুক্তিপত্রে
।শুধু তাই নয়,’ফেরি ঘাটের’ লিজ গ্রহিতা দামোদরের বক্ষে হাজার হাজার বাঁশ পুঁতে ’সেতু’ নির্মাণ করতে পারবেন,এমন কোন অনুমতি দানের উল্লেখও কিন্তু চুক্তিপত্রে নেই।তাহলে দামোদরের বক্ষে বাঁশ পুঁতে সেতু নির্মানের অনুমতি ওই সংস্থাকে দিল কে ?এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ নিয়ে জেলাপরিষদের (পূর্ব বর্ধমান) ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন ’সেচ দফতরের’ ছাড়পত্র না নিয়েই দামোদরের বক্ষে বাশ পুঁতে সেতু নির্মান কাজ চলছে।’ শুধু তাই নয়,এই ব্যাপারে মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েত কোন ছাড়পত্রও কাউকে দেয়নি।এই সব জেনেও জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতি কি করে নির্দিষ্ট একটি সংস্থাকে লিজ অনুমোদন করলো এবং দামোদরের বক্ষে বাঁশ পুঁতে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে জেনেও নিশ্চুপ রয়েছে, সেটাই আশ্চর্য্যের’! জামালপুর নিবাসী
জেলা বিজেপি নেতা জীতেন্দ্রনাথ ডকাল বিষয়টি জানতে পেরে বলেন,’জামালপুর ব্লকে দামোদর বক্ষে এমন সেতু অনেক কটাই রয়েছে ।’ আদৌ সেচ দপ্তরের অনুমতি নিয়ে ওই সব সেতুগুলি তৈরি হয়েছে কিনা তারও তদন্ত হওয়া জরুরী বলে জীতেন্দ্রনাথ বাবু দাবি করেছেন।
জেলাপরিষদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষের দাবির বিয়টি নিয়ে বিডিও (জামালপুর) পার্থ সারথী দে’র কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেচ দপ্তরের ছাড়পত্র বিষয়ে স্পষ্ট কোন উত্তর দিতে পারেন নি।তিনি শুধু বলেন,’এই ভাবেই তো অনেক দিন ধরে ফেরি ঘাটটি চলে আসছে। তবুও কি হয়ে আছে সেই বিষয়ে আমি খোঁজ নেব।’ যদিও রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,’স্থায়ী হোক বা অস্থায়ী ,দামোদরের বক্ষে কোন নির্মাণ কাজ করতে হলে সেচ দপ্তরের অনুমতি নিতেই হবে। এই ক্ষেত্রে সেচ দপ্তরের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না, তার এনকোয়ারি তিনি করাবেন।’।