এইদিন ওয়েবডেস্ক,ছত্তিশগড়,২৪ নভেম্বর : চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর ছত্তিশগড়ের বলরামপুর জেলায় এক হিন্দু মহিলাকে তার দুই নাবালক সন্তানসহ খুন করা হয় । গত ১৫ নভেম্বর তিনজনের কঙ্কাল উদ্ধার করে পুলিশ। এই মামলায় মুখতার আনসারি (Mukhtar Ansari) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখতারের পাশাপাশি তার ভাই আরিফ আনসারিও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। মা-মেয়ের সঙ্গে দুই ভাইয়েরই অবৈধ সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে ।
ওপি ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, মূল অভিযুক্ত ঝাড়ফুঁকের কাজ করত। এই বাহানায় সে সুরজদেব ঠাকুরের ৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী কৌশল্যা ঠাকুর নামে মৃত মহিলার বাড়িতে যাওয়া শুরু করে । কিছুদিনের মধ্যেই মুখতার ও কৌশল্যার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সময় মুখতারের ছোট ভাই আরিফও কৌশল্যার বাড়িতে আসা-যাওয়া শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই সে কৌশল্যার ১৭ বছরের নাবালিকা মেয়ে মুসকানকে তার প্রেমের জালে ফাঁসায় ।
আরিফ মুসকানকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও মুসকান তা প্রত্যাখ্যান করেন। আরিফ ভেবেছিল মুসকানের অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মুসকানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে আরিফ। সে তার ভাই মুখতারকেও এই ষড়যন্ত্রে শামিল করে । কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে আরিফের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কে মুখতার মুসকানের উপর ক্ষুব্ধ হয়েছিল । ২৬ সেপ্টেম্বর মুখতার মুসকানের বাড়িতে পৌঁছায় । সে মুসকান, তার ৫ বছর বয়সী ভাই মিন্টু এবং ৩৭ বছর বয়সী মা কৌশল্যাকে বেতলা ন্যাশনাল পার্কে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিল । মোক্তাতার তাদের সবাইকে বাইকে করে কুসুমি থেকে বলরামপুরে তার বাড়িতে নিয়ে আসে । তখন সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল আরিফ । কিছুক্ষণ পর আরিফ কোথাও চলে যায় । রাতে আবার ফিরে আসে । এরপর
রাতে ৩৮ বছর বয়সী মোখতার, আরিফ, কৌশল্যা, মুসকান ও মিন্টু একসঙ্গে ডিনার করে । কৌশল্যা যখন মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, তখন আরিফ সেখানে আসে। সে মুসকানের পেটে ছুরিকাঘাত করে । মুসকানের চিৎকার শুনে তার মা কৌশল্যা জেগে ওঠে । এরপর মোক্তাতার কৌশল্যার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করে। এদিকে কৌশল্যার ছেলে মিন্টুরও ঘুম ভেঙে যায় ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা মুখতার ও আরিফ মিন্টুকে কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তারা তিনজনের মৃতদেহ পাশের মাঠের ড্রেনে ফেলে দেয়। মাঠ থেকে ফিরে ঘরে ছড়িয়ে থাকা রক্ত পরিষ্কার করে মুখতার ও আরিফ। এরপর তারা দুজনই আলাদা আলাদা জায়গায় গিয়ে আত্মগোপন করে । এদিকে অনেক দিন কেউ মাঠে না যাওয়ায় তিন মৃতদেহ জলে গলে যায় এবং শুধু কঙ্কাল অবশিষ্ট থাকে।
পুলিশ কঙ্কাল উদ্ধার করে তদন্ত শুরু করলে অবশেষে এই হত্যার রহস্যের সমাধান হয়। মুখতারের পর এবার তার ভাই আরিফ আনসারিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। উভয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় জাস্টিস কোড (বিএনএস)-এর ১০৩(১),২৩৮,১৪০(৩) এবং ১৩৮(২) ধারার অধীনে মামলা রজু করা হয়েছে । হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কুড়াল ও ছুরিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বলা হয়েছে, গ্রেফতারের পরে,মুখতার আনসারি একটি ভিন্ন গল্প তৈরি করে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিল । সে বলেছিলে যে তার ভাই আরিফ আনসারি মুসকানের প্রতি তার ভালবাসার কারণে বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছেন না। পরিবেশকে আরও আবেগময় করে তুলতে সে এই অর্থ তার অসুস্থ বাবার চিকিৎসায় ব্যবহার করার কথাও বলেছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের নিজস্ব কায়দায় জেরাতে আসল কথা কবুল করে ।
উল্লেখ্য,ছত্তিশগড়ের বলরামপুরে বাসিন্দা সুরজদেব ঠাকুর একজন ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত ছিলেন ৷ সেই সূত্রে মুখতার আনসারির সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে । সুরজদেবের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়তও ছিল মুখতারের । আর সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে বন্ধুর স্ত্রী ৩৫ বছর বয়সী স্ত্রী কৌশল্যাকে প্রেমের জালে প্রথমে ফাঁসায় । এদিকে দাদার দেখাদেখি মুখতারের ভাই আরিফও সুরজদেবের বাড়িতে যাতায়াত শুরু করে । সে দাদার বন্ধুর মেয়ে মুসকান ঠাকুরকে প্রেমের জালে ফাঁসায় । বাবা, মা আর দিদির এই কৃতকর্মের জন্য বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল সুরজের ৫ বছরের ছেলে মিন্টু ঠাকুরকে ।।