প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ নভেম্বর : পাঁচ লক্ষ টাকা না দিলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে নাবালিকার অশ্লীল ছবি ! এমন হুমকি দিয়ে ফোন করা যুবকের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ব্যাপক মারধর হজম করতে হয় নাবালিকার বাবাকে। এই ঘটনা মেনেনিতে না পেরে মাত্র ১৩ বছর বয়সেই নিজের জীবনের ইতি ঘটিয়ে দেয় নাবালিকা।এই ঘটনা জানাজানি হতেই শুক্রবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েপড়ে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কাঁটাগড়িয়া গ্রামে । মেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার তাঁর পরিবারের সকলে দায়ী করেন ভিন রাজ্যে বসে হুমকি ফোন করে মোটা টাকার দাবি করা এলাকার যুবক হাসিনুর রহমান ওরফে বান্টিকে । তার বিরুদ্ধে জামালপুর থানায় এফআইআর দায়ের করেন নাবালিকার বাবা।দায়ের হওয়া সেই অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজুকরে তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্ত যুবকের বাবাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর ছেলের নাগাল পেতে চাইছে ।
পুলিশ জানিয়েছে,অভিযুক্ত হাসিনুর রহমানের বাবার নাম শেখ মশিয়ার রহমান।শনিবার ভোর রাতে কাঁটাগড়িয়া গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । এসডিপিও(বর্ধমান দক্ষিণ) অভিষেক মণ্ডল জানিয়েছেন, নাবালিকার বাবার আনা অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়া সহ একাধিক অপরাধের ধারার মামলা রুজু হয়েছে।ধৃত শেখ মশিয়ার রহমানকে এদিনই পেশ করা হয়েছে বর্ধমান আদালতে । ভিন রাজ্যে কর্মরত অভিযুক্ত যুবক হাসিনুরের নাগাল পেতে ও ঘটনার তদন্তের স্বার্থে মশিয়ার রহমানকে ৭ দিন পুলিশি হেপাজতে নিতে চেয়ে আদলতে আবেদন জানানো হয়েছে । অভিযুক্ত যুবক হাসিনুরের গ্রেপ্তার হওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র বলে এসডিপিও জানিয়েছেন।
নাবালিকার বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন,তাঁর নাবালিকা মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পাঠরত ছিল।ফোন করে তাঁর মেয়েকে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্ত্যক্ত করছিল এলাকার যুবক হাসিনুর রহমান । শুধু উত্ত্যক্ত করাই নয়। নাবালিকার বাবার দাবি ,’ভিন রাজ্যে বসেই তাঁর মেয়ের ছবি ও এলাকার অপর আর এক যুবকের ছবি কোন ভাবে জোগাড় করে হাসিনুর । তারপর সেই ছবি সম্পাদিত(Edit) এডিট করে হাসিনুর অশ্লীল ছবি তৈরি করে।’নাবালিকার বাবা পুলিশকে এও জানিয়েছেন,বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ তাঁর বাড়ির ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ওই অশ্লীল ছবি পাঠায় হাসিনুর । সাথে সাথে সে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে । ৫ লক্ষ টাকা না দিলে ওই অশ্লীল ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলেও হাসিনুর হুমকি দিয়েছে।
গ্রামের যুবকের এমন হুমকি দেওয়ার বিষয়টি
কিছুতেই মেনে নিতে পারে না নাবালিকার পরিবার । নাবালিকার বাবা এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে যুবকে হাসিনুরের বাড়িতে যান । তখন ছেলের কীর্তির জন্য অনুশোচনা করার পরিবর্তে যুবক হাসিনুরের পরিবার নাবালিকার বাবাকে ব্যাপক মারধর করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ । এদিকে বাবাকে মারধরের ঘটনার কথা জানতে পেরে খুবই কষ্ট পায় নাবালিকা। মানসিক কষ্ট নিয়ে আর থাকতে না পেরে নাবালিকা চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে । শুক্রবার সকালে গলায় ওড়নার ফাঁস লাগিয়ে বাড়ির দোতলার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে পড়ে নাবালিকা।সেই খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ নাবালিকার বাড়িতে পৌছে তার দেহ উদ্ধার করে জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক নাবালিকাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।শুক্রবারই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ মর্গে নাবালিকার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়।
অভিযুক্ত যুবক ভিন রাজ্যে থাকলেও তাকে জালে পুরতে পুলিশি তৎপরতা এখন তুঙ্গে উঠেছে। পুলিশের এটি সূত্র মাধ্যমে জানা গিয়েছে,অভিযুক্ত যুবক মহারাষ্ট্রে রয়েছে বলে তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা জানতে পেরেছেন। সেখান থেকে তাকে পাকড়াও করে আনতে পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। অভিযুক্ত যুবক হাসিনুরের গ্রেপ্তার হওয়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।।