এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,২০ নভেম্বর : রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন আগামী বছর ভারত সফরে আসতে পারেন, মঙ্গলবার কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে।কর্মকর্তারা বলেছেন যে উভয় পক্ষই একটি বৈঠকের সম্ভাবনা দেখছে তবে এখনও কিছু চূড়ান্ত হয়নি। জুলাই মাসে মস্কোতে দুই নেতার শীর্ষ বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। মঙ্গলবার, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ একজন সিনিয়র ভারতীয় সম্পাদকের সাথে একটি ভিডিও কথোপকথনে ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে পুতিনের ভারত সফরের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র কোনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেননি বা সফরের কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা করেননি ।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এর আগে একাধিকবার দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি দেশে সফর করেছেন। বিশেষ করে প্রভাবশালী ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে এসব সফর করেন তিনি।বর্তমান সময়ের এই উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক উদ্যোগের পেছনে দুই দেশেরই গুরুত্বর্পূণ ভূমিকা রয়েছে। ভ্লাদিমির পুতিন ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ভারত সফরকে রুশ পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখেন। তিনি বিভিন্ন সময় ভারত সফর করেছেন। ২০১০ সালে মস্কো এবং নয়াদিল্লির মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব জোরদার করার লক্ষ্যে সফর করেন তিনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে ভারত সফর করেন পুতিন। এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, পরমাণু প্রযুক্তি, এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক দৃঢ় করতে পুতিন সবসময় জোরালো পদক্ষেপ নেন।
পুতিনের দক্ষিণ এশিয়া সফরের গুরুত্ব: দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার উপস্থিতির নেপথ্যে কারণ মূলত ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা এবং এই অঞ্চলে চীনের প্রভাববলয়ে ভারসাম্য নিশ্চিত করা। পুতিন এই অঞ্চলে তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা এবং সম্পর্কোন্নয়নে বেশ সক্রিয় থেকেছেন। পুতিনের দক্ষিণ এশিয়া সফর বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করার চেষ্টা এবং সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে রাশিয়ার অবস্থানকে স্পষ্ট করা।
পুতিনের এই সফর সম্ভবত চলতি বছরের শেষ দিকে হতে পারে এবং এতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব, প্রতিরক্ষাসহ অভিন্ন এবং আন্তর্জাতিক ইস্যু প্রাধান্য পাবে। ভারতের প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে রাশিয়া এবং এই সহযোগিতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। নয়াদিল্লি মস্কোর কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনে, তাই নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে।
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ: দুই দেশই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে। ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে দেখে মস্কো এবং চীনের বিকল্প বাজার হিসেবে ভারতকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
ব্রিকস ও আন্তর্জাতিক ইস্যু : পুতিন ও মোদির মধ্যে আন্তর্জাতিক বিষয় বিশেষ করে ব্রিকস জোট এবং জাতিসংঘে দুই দেশের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
ইউক্রেন যুদ্ধ: যদিও শুরু থেকেই ভারত ইউক্রেন সংকট নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে, তবে এই সফরে পুতিন হয়তো এই ইস্যুতে ভারতের সমর্থন চাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। এই সফরে রাশিয়া ও ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত ও রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে।
সর্বোপরি, পুতিনের এই সফর রাশিয়ার জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ, যেখানে ভারতকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাববলয় থেকে সরিয়ে নিতে চাইবে মস্কো। ইতিমধ্যে ভারতে পুতিনের এই সফর নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সফরকে অনেকেই দুই দেশের সম্পর্ককে আরও জোরালো করার গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখছেন।।