এইদিন ওয়েবডেস্ক,কললকাতা,১৯ নভেম্বর : মুসলিম অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে ফের হামলার শিকার হতে হয়েছে সেখানকার হিন্দুদের । রবিবার কার্তিক পূজার আবহে হিন্দুদের ওপর ব্যাপক হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ । হামলার প্রথম দিকে কিছু ভিডিও প্রকাশ্যে এলেও পরে পুলিশ ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বর্তমানে কি পরিস্থিতি তা জানা যায়নি । তবে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বেলডাঙ্গায় হিন্দুদের ওপর হামলার ভয়ংকর চিত্র তুলে ধরলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি জানান, বেগুনবাড়ি, হিজুলি, কাপাসডাঙ্গা এলাকায় রাস্তায় বোমাবাজি হয়েছে । বেগুন বাড়ির বাসিন্দা রবি দত্তের বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে৷ তার নাতির বিয়ের অনুষ্ঠান ভন্ডুল করা হয়েছে । ওখানে কামাখ্যা মায়ের মন্দিরে অগ্নিসংযোগ হয়েছে৷ হালদার পাড়া ও ঘোষপাড়ায় সনাতনীদের বাড়ি বেছে বেছে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে ৷ ঘোষপাড়ায় ধর্মীয় স্থান ভাঙচুর হয়েছে । হরেকনগর ভাদুড়ি পাড়াতে ব্যাপক ইট বৃষ্টি হয়েছে এবং প্রচুর মানুষ আহত হয়েছেন । বেনাদহে হিন্দুদের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে । সনাতনীরা আহত হয়েছেন ৫০ জনেরও বেশি । এবং কমবেশি ৫০০ জন প্রভাবিত হয়েছেন ৷ তাদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । এর বাইরেও অন্তত ২০০ বড় বড় দোকানকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে । তিনি বলেন, ‘হিন্দুরা সংখ্যায় কম হলে কি হতে পারে তার প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় দেখতে পেয়েছেন আপনারা।’
দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজো, কালীপূজো,জগদ্ধাত্রী পুজো এবং কার্তিক পুজোতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পূজা মন্ডপে একের পর এক হামলার ঘটনার জন্য তিনি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা রাজ্যে জনবিন্যাসের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানোকে দায়ী করেন শুভেন্দু অধিকারী । এই বিষয় তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে যে আমাদের এই ধরনের ঘটনার মুখোমুখি হতে হবে সেটা আমরা জানতাম৷ তবে আমরা অনুমান করেছিলাম ২০২১ সাল থেকে সনাতনীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এরকম হামলার ঘটনা আমরা দেখতে পাবো। কারণ যেভাবে জনবিন্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে… তবে ততদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হলো না। দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজো, কালী পূজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এবং সর্বোপরি কার্তিক পুজোতে এই চিত্র দেখলাম৷ একটি বিশেষ সম্প্রদায় যারা মমতা ব্যানার্জির ভোটব্যাঙ্ক তারাই কাজ করেছে৷ আর পুলিশের সাহস নেই যে তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করে৷ কারণ এরা পুলিশ গেলেই বলে যে ‘আমাদের সরকার চলছে ৷ আমরা এই সরকারকে রেখেছি৷ আমরা চাইলেই সরকারকে উল্টে দিতে পারি৷ আমাদের সরকার, যান এখান থেকে ।’ সেই কারণে পুলিশ অনুমোদিত পুজোগুলোতে সুরক্ষা দিতে পারেনি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, আমরা পশ্চিমবঙ্গের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে ডিজিপি রাজীব কুমার কে ইমেইল করে ১৬৩ ধারা মেনে এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা করা, ভারতীয় ন্যায়সংহিতা অনুযায়ী তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা বিজেপির একজন প্রতিনিধিকে বেলডাঙায় যেতে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলাম । যেহেতু ইন্টারনেট বন্ধ তাই মেইল করে গতকাল বিরোধী দলনেতার অফিস থেকে আমার পিএ পাঠিয়েছেন । তবে ডিজিপি অথবা মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার এখনো পর্যন্ত কোন প্রতিক্রিয়া জানাননি ।’ তিনি। জানান যে আগামীকাল ফের মুখ্য সচিব মনোজ পন্থের কাছে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় যাওয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি পাঠাবেন৷
দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে কার্তিক পূজা পর্যন্ত একের পর এক পূজা মন্ডপে হামলাকে বাংলাদেশের বর্তমান মৌলবাদী সরকারের এজেন্ডা দেখে শিক্ষা নেওয়া বলে মন্তব্য করছেন বিরোধীদল নেতা ৷ বাংলাদেশের নোয়াখালীতে ২০২২ সালে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা কথা তুলে ধরেন শুভেন্দু অধিকারী৷ তিনি বলেন, ‘সমস্ত দুর্গা মূর্তি ভাঙচুর হয়েছিল৷ অষ্টমীর দিনেই প্রতিমা বিসর্জন করতে হয়েছিল৷ নয়জন হিন্দু শহীদ হয়েছিলেন । অনেক মঠ মন্দিরে আক্রান্ত হয়েছিল৷’
এদের সাংবাদিক সম্মেলনে বেলডাঙ্গার ঘটনায় নবান্নে বসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রতিক্রিয়ার ভিডিও এবং বেলডাঙায় আক্রান্ত হিন্দু মহিলাদের বক্তব্যের ভিডিও সাংবাদিকদের দেখান । তিনি রাজ্য সরকার এবং পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন । এদিন শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বর্ষিয়ান বিজেপি নেতা তাপস রায় এবং রাজ্য বিজেপির যুব মোর্চার সহ-সভাপতি তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি ।।