প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৯ নভেম্বর : রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শুরুকরে সাংসদ,সবার কাছেই পুলিশ যেন এখন চক্ষুঃশূল । বলিষ্ঠ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে পাঁচ বারের সাংসদ সৌগত রায়ের মুখেও শোনা যাচ্ছে পুলিশের সমালোচনা। ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবির তো আবার পুলিশ মন্ত্রী বদলের দাবি তুলে বসেছেন। এমন আবহে পথে নেমে বিনা হেলমেটে বাইক চালানো তিন তরুণকে ধরে পুলিশে সামনে কান ধরে ওঠবোস করিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কার্যত যেন পুলিশকেই খোঁচা দিয়ে বসলেন। আর মন্ত্রীর এই আচরণ প্রকাশ্যে আসতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।চুপ নেই বিরোধীরা।দেশে আইন ও বিচার ব্যবস্থা থাকতে একজন মন্ত্রী কি করে বিনা হেলমেটে বাইক চালানো তরুণদের শাস্তিদাতা বেনে গেলেন, সেই প্রশ্ন তুলে বিরোধীরা সরব হয়েছে।
বিনা হেলমেটে বাইক চালানো তরুণদের কান ধরে ওঠবোস করানোর ঘটনাটি সোমবার ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের কালনায় । প্রলাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ‘সিটি স্ক্যান’ মেশিনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল । সেই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ।অনুষ্ঠান শেষে হাসপাতালের ভিতর থেকে বাইরে বেরিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ দেখতে পান মাথায় হেলমেট না পরে বাইকে চেপে তিন তরুন হাসপাতালে ঢুকছে। এমনটা দেখে মন্ত্রী বেজায় চটে যান। তিনি বাইক আরোহী ওই তিন তরুণকে দাঁড় করিয়ে ভৎসনা করা শুরু করেন। তা দেখে হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা সেখানে ছুটে যান। বহু মানুষের ভিড়ও জমে যায় সেখানে। মাথায় হেলমেট না পড়ে বাইক চালানো তিন তরুণকে পুলিশের সামনেই দাঁড় করিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ প্রথমে পথ সচেতনতার পাঠ দেন।একটি বাইকের দামের চাইতেও একজন মানুষের জীবনের মূল্য কতটা, তার তুলনা ওই তিন তরুণের কাছে তুলে ধরেণ মন্ত্রী ।অভিযোগ,এর পরেই মাথায় হেলমেট না পড়ে বাইক চালানোর জন্য মন্ত্রী মশাই পুলিশ ও হাসপাতাল চত্ত্বরে থাকা সকলের সামনেই ওই তিন তরুণকে কান ধরে ওঠবোস করান।সেই দৃশ্য বহু মানুষ তাদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরাতেও বন্দি করেন।
বিনা হেলমেটে বাইক চালানো তরুণদের এইভাবে শাস্তি দেওয়ার কি কারণে,তার ব্যাখ্যা অবশ্য মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ দিয়েছেন।এ নিয়ে তিনি বলেন,অতি সম্প্রতি কালীপুজোর রাতে বাইক থেকে পড়ে গিয়ে পূর্বস্থলী ১ ব্লকের চার যুবকের একসঙ্গে মূত্যু হয় । মৃতদের মধ্যে তিনজন ছিল স্থানীর পারুলডাঙ্গা নসরতপুর হাই স্কুলের ছাত্র ।এর কিছুদিন পর রাসউৎসবের রাতে বাইক থেকে পড়ে দুই যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কয়েকজন আহতও হয় । এত কিছুর পরেও লেখাপড়া জানা ছেলেরা ’সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচীকে বুডো আঙুল দেখিয়ে বিনা হেলমেটে বাইক চালাচ্ছে। এটাই সবথেকে আক্ষেপের বিষয় । তাই হেলমেট মাথায় না দিয়ে বাইক চালানোর জন্য তিন তরুণকে এদিন তিনি সচেতনতার পাঠ দিয়েছেন। পাশাপাশি মাথায় হেলমেট পড়ে বাইক চালানোর জন্য অনেককে অনুরোধও করেছেন বলে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানান ।
তিন তরুণকে প্রকাশ্যে কানধরে ওঠবোস করানোর নিয়ে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ যাই ব্যাখ্যা দিন না কেন, বিবোধীরা নেতৃত্ব এর তীব্র সমালোচনা করেছে। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যূঞ্জয় চন্দ্র বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিম ও সৌগত রায়ের পথে হেঁটে পুলিশকে খোঁচা দেওয়ার কাজটা মন্ত্রী স্বপ্নন দেবনাথ এদিন মাথায় হেলমেট না পড়ে বাইক চালানো তিন তরুণকে ঢাল করে সেরে ফেললেন। পুলিশের সামনে কনধরে ওঠবোস করালেন মন্ত্রী । এটা মন্ত্রী মশাই করতে পারেন না। দেশে আইন ও বিচার ব্যবস্থা থাকতে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ কাউকে শাস্তি দেওয়ার কে ?’ এই প্রশ্ন তুলেছেন মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র। আর সিপিএমের কালনা শহর এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রকাশ্যে পড়ুয়াদের কান ধরে ওঠবোস করিয়ে মন্ত্রী ঠিক কাজ করেন নি। কেউ হেলমেট না পড়ে বাইক চালালে আইন অনুযায়ী পুলিশ তার ব্যবস্থা নেবে।’এমন কাজ করে মন্ত্রী মশাই আদতে কি ঘুরপথে পুলিশকে তাদের কর্তব্য বোঝাতে চাইলেন ? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বহু মানুষের মুখে মুখে।।