বিজ্ঞান বা প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির সাথে সাথেই পরিবর্তন এসেছে মানব ,সমাজ জীবনে। আগে মানুষের সঙ্গে মানুষের আত্মিক যোগাযোগ বা সম্পর্ক ছিল, সেখানে লোক দেখানো সম্পর্কের প্রাধান্য ছিল না। বর্তমান যুগে সময়ের বড় অভাব। ব্যস্ততার সঙ্গেই কাটে সাংসারিক জীবন হোক বা কর্মক্ষেত্র, আর অবসর সময় পরিবারের সদস্যরা সোশ্যাল মিডিয়ায়। একে অপরের সঙ্গে বিভিন্ন আলোচনা, মত আদান প্রদান কমে যাচ্ছে। বাড়ছে সাংসারিক কলহ। মুঠোফোনের আধিপত্যে সোশ্যাল মিডিয়ার যথেচ্ছ ব্যবহার তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে , আর তার নেপথ্যে রয়েছেন অভিভাবকরা। একটি শিশু যার জ্ঞান হয়নি সে অনুকরণ করে তার বাবা ,মা ও পরিবারের প্রতিটি সদস্যের কাছে এ কারো অজানা নয় । সে যেমন দেখবে তেমন শিখবে। নিউক্লিয়ার পরিবারে সংসারের আর্থিক রোজগারে বাবা, মা বা উভয়েই ব্যস্ত পরিবারে গৃহপরিচারিকার সান্নিধ্যে শিশু। মা, বাবার সন্তানের প্রতি অপার স্নেহ আখেরে তাঁর সন্তানের ই ক্ষতি করছে।
বছর দেড়েক এর বাচ্ছা যখন বায়না করছে ,খেতে চাইছে না , গৃহকর্মে ব্যস্ত মা অনায়াসে মোবাইল ফোনটি তুলে দিচ্ছেন শিশুর হাতে। মোবাইল ফোন একটি যন্ত্র যা অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারির নির্দেশ মেনে চলে। ছবি, কার্টুন, বিভিন্ন ভিডিও, গেম দেখে আকৃষ্ট হচ্ছে শিশুরা। মোবাইলের প্রতি আকর্ষণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে তাঁকে মানসিকভাবে সংকীর্ণ করছে । বর্তমানে খোলা মাঠে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলা,মেলামেশার অভাবে মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচছে শিশুদের । শিশু যখন বড় হচ্ছে তখন থেকে তার মধ্যে রাগ, জেদ, চাহিদা বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অধৈর্য্য, অস্থিরতা, অমনোযোগ। বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত মোবাইলের অপব্যবহার তাকে কখনো কখনো চরম বিপদ, সম্মানহানি, জীবনহানির দিকেও ঠেলে দিচ্ছে সোশ্যাল সাইটে ঘন্টার পর ঘন্টা অবাধ বিচরণের কারণে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অ্যপ বা ডেটিং সাইটে অজানা অচেনা বন্ধুর হাতছানিতে সাড়া দিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে কিশোরী থেকে মধ্যবয়স্করাও। বন্ধুত্ব, প্রেমের বা আর্থিক প্রতারণার জন্য ফাঁদ পেতে থাকা অসাধু ব্যক্তিদের ট্রাপে পা দিয়ে অর্থহানি ,সম্মানহানি বা জীবনহানির ঘটনা সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন খবরে প্রায়ই দেখা যায়। কারণ কিন্তু মূলেই লুকিয়ে আছে। অবিভাবকের সন্তানের প্রতি অপার স্নেহ , বিশ্বাস, সর্বোপরি যথেচ্ছ স্বাধীনতা ।
কিশোর বা কিশোরী ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে কি করছে ? পড়াশোনা না অন্যকিছু! সময়ের অভাবে ছেলে বা মেয়ের দিকে নূন্যতম নজরটুকু দিচ্ছেন তো! তার জীবনের খোঁজ খবর রাখছেন তো! কার সঙ্গে মিশছে! পকেট মানিতে ছেলে বা মেয়েটির ব্যক্তিগত প্রয়োজন বা চাহিদা মিটিয়ে নিচ্ছে তো! অন্য কোন পথ অবলম্বনে নিজের রুচি, নিজের বা পারিবারিক সম্মান হানি হচ্ছে না তো!
কেন এ প্রশ্ন?
ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি সাইটে ছবি বা ছোট ছোট ভিডিও ( রিল) জনপ্রিয়তা বাড়ায় এবং একটা সময় ভিউ, লাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে আর্থিক রোজগার হয়। কখনো কখনো ভাইরালও হয়। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই সেই নেশায় ফেসবুক , ইনস্টাগ্রাম ,ইউটিউব এ নিজের আইডি, চ্যানেল খুলে ছবি বা চটুল গানে রিল পোষ্ট এর মাধ্যমে ভিউ বা লাইকের নেশায় বুঁদ হচ্ছে। এবং এর মাধ্যমে টাকা রোজগার এর নেশায় নামমাত্র পোশাকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি বা শালীনতা লঙ্ঘন করে ছবি ,ভিডিও দেখা যায়। এন্টারটেইনমেন্টে আর্থিক রোজগার হয়তো হয় , কিন্তু দৃষ্টিনন্দনে তাঁর ব্যক্তিগত সত্তা, মানসিক অসুস্থতা , দৃষ্টিকটু বা সহজলভ্য বিষয়টি উদ্ভাবন হয় না কি? আধুনিকতার ছোঁয়ায় সমাজ, সংস্কারের অবমূল্যায়ন বা রুচিশীলতায় প্রশ্ন চিহ্ন রাখছে না কি?
সমাজ এমন একটি সময়ের মধ্যে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বিষয়ে প্রতিবাদ এর অভাব রয়েছে। অভিভাবকদের সচেতন করতেও দ্বিধা বোধ করছেন পরিচিতরা যারা হয়তো এসব দেখছেন সোশ্যাল সাইটে। ওই প্রবাদে আছে না- “পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছন্নে যায় তত আনন্দ।” সোশ্যাল সাইট যেমন facebook, instagram, thread, sharechat আরও অন্যান্য অ্যপে ব্যক্তিগত ছবি , তথ্য যদি হ্যাকার বা অসাধু ব্যক্তিদের হাতে চলে যায়। ভবিষ্যৎ এই নিয়ে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না, এইকথা কি হলফ করে বলা যায়! বর্তমানে বিভিন্ন ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তবুও সচেতনতায় উদাসীন হয়ে আর্থিক রোজগার এর নেশায় মজে বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশ, আধুনিকতার ছোঁয়ায়…।।