এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৫ নভেম্বর : বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে যেতেই এবারে পশ্চিমবঙ্গের দিকে নজর পড়েছে ইসলামি স্টেট(আইএসআইএস) ও জামাত-উল- মুজাহিদিন(জেএমবি)-এর মত কুখ্যাত ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির । কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এনিয়ে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের সতর্কও করে দিয়েছে বলে খবর । মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী,কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সতর্ক করেছে যে ওই কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি জঙ্গি নেটওয়ার্ক বাড়াতে মূলত পশ্চিমবঙ্গের ৪ টি জেলার কিছু ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে।
প্রসঙ্গত,গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশ ছাড়া করার পর শাসনক্ষমতা কেড়ে নেয় জামাত ইসলামি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির মত ইসলামি জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি (বিএনপি) । শাসনক্ষমতা হাতে পেতেই প্রথমে কারাগারে বন্দি কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীদের মুক্ত করে দেওয়া হয় । এখন তারা পুরনো নেটওয়ার্ক ফের সক্রিয় করে দিয়েছে বলে জানা গেছে । ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা উত্তরপূর্ব ভারতের অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয়, সিকিম এবং পশ্চিমবঙ্গকে ‘বৃহত্তর বাংলাদেশ’ গঠনের ডাক দিয়েছে । সেই লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা প্রচারও শুরু করে দিয়েছে । বাংলাদেশি সন্ত্রাসীদের এই কাজে সহায়তা করেছে পাকিস্থানের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের জামাত-উল- মুজাহিদিন (জেএমবি) এর সঙ্গে পাকিস্থানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই যোগাযোগ শুরু করেছে । ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশের রাজসাহীসহ কয়েকটি জেলার গোপন ডেরায় জেএমবি সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আইএসআই এজেন্ট ও আধিকারিকদের । আইএসআই ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটিকে আর্থিকভাবে মদত জোগাতে শুরু করেছে ।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, আইএসআইয়ের নির্দেশে জেএমবি পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে তাদের নেটওয়ার্ক সক্রিয় করতে উঠেপড়ে লেগেছে । পশ্চিমবঙ্গে আপাতত মালদহ, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুর জেলায় সক্রিয়তা বাড়াচ্ছে । এর আগে এই তিনটি জেলায় জেএমবি মডিউল তৈরি করেছিল। এখনো এই তিন জেলায় জেএমবির পুরনো স্লিপার সেলের সদস্য রয়ে গেছে । তবে তারা এখন নিষ্ক্রিয় । তাদের ফের সক্রিয় করার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশের জামাত-উল- মুজাহিদিন(জেএমবি) ।গোয়েন্দারা যেটা জানতে পেরেছে যে আইএসআই নির্দেশ দিয়েছে, খুব তাড়াতাড়ি এই তিনটি জেলায় নেটওয়ার্ক বাড়াতে হবে এবং পাশাপাশি বীরভূম, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নেটওয়ার্ক তৈরি করতে করতে হবে । জেএমবি ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে ।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষকদের মাধ্যমে ছাত্রদের মগজধোলাই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । তারপর সন্ত্রাসী সংগঠনে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে । সেই সাথে নিষ্ক্রিয় স্লিপার সেলকে সক্রিয় করার কাজ চালিয়ে যেতে হবে । নিয়োগ করা সদস্যদের পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর অথবা আইএসআই-এর গোপন ডেরায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে ঠিক হয়েছে । পাশাপাশি বাংলাদেশেও তৈরি করা হতে পারে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির । প্রশিক্ষণের শেষে সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে নাশকতার জন্য ফের পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হবে ।
এভাবে পশ্চিমবঙ্গে নতুন জঙ্গি জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করেছে জেএমবি । এনিয়ে রাজ্য পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দাদের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা সতর্ক করেছেন বলে জানা গেছে ।
উল্লেখ্য,পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার খাগড়াগড়ে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বিস্ফোরণের ঘটনার পর এরাজ্যে জামাত-উল- মুজাহিদিন(জেএমবি)-এর সক্রিয়তার বিষয়টি সামনে আসে । বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ২ জনের। অভিযুক্ত ৩১ জনের মধ্যে ১৯ জন দোষ কবুল করে। উঠে আসে হাতকাটা সোহেল মাহফুজ ও সাকিল গাজি-সহ একাধিক জেএমবি নেতার নাম। ঘটনার প্রায় সাড়ে ছ’বছরের মাথায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মূল অভিযুক্ত শেখ কওসর ওরফে বোমারু মিজানকে দোষী সাব্যস্ত করে ২৯ বছরের কারাদণ্ডের সাজা দেয় এনআইএ বিশেষ আদালত। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণকাণ্ডেও এই হামলার মাস্টারমাইন্ড শেখ কওসর ওরফে বোমারু মিজানের হাত ছিল বলে জানা গিয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা সহ একাধিক ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছিল।
এই বিস্ফোরণ কাণ্ডে মোট ৩১ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৯ জন ১০ বছরের কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করছে। ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে শেখ রহমতুল্লা, সইদুল ইসলাম ওরফে শামিম, মহম্মদ রুবেল, সাদিক ওরফে সুমন, হবিবুর ওরফে জাহিদুর ইসলাম এবং তারিকুল ইসলামের। আট বছরের কারাদণ্ডের তালিকায় রয়েছে আব্দুল হাকিম, রেজাউল করিম, আবদুল ওয়াহাব মোমিন, হাবিবুল রহমান, নূর আলম, নুরুল হক মণ্ডল, গিয়াসুদ্দিন মুন্সি, শাহানুর আলম ওরফে ডাক্তার, আমজাদ আলি শেখ ওরফে কাজল, এবং মফিজুল আলি। ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে গুলসানা বিবি, আলিমা বিবি এবং সাইকুল ইসলাম খানের। এরা আগে কোনও অপরাধমূলক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত না থাকায় এবং মহিলাদের নাবালক সন্তান থাকায় সাজার মেয়াদ কম রাখা হয় ।।