হিন্দুদের উৎসব নিয়ে ভারতের তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ বামপন্থী মনস্কদের যত আপত্তি ! দুর্গাপূজো এলেই “তোমার দুর্গা আমার দুর্গা” নামে একটা ছড়া শোনাতো বামপন্থীরা । যদিও মানুষ মানুষ বামপন্থীদের এই একঘেঁয়ে বাণীতে বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ায় ওই ছড়া আর বিশেষ শোনা যায় না । পূজোয় পশুবলি নিয়েও হঠাৎ করে তাদের পশুপ্রেম জেগে ওঠে এবং ‘অবলা পশুদের’ জন্য মড়াকান্ন জুড়ে দেয় । কিন্তু মুসলিমদের কুরবানি নিয়ে তারা টুঁ’শব্দ পর্যন্ত করে না । এরাই আবার দীপাবলি উপলক্ষ্যে আতশবাজি নিয়ে আপত্তি জানায় । তাদের কথায় আতশবাজির কারনে নাকি পরিবেশ সবচেয়ে বেশি দূষিত হয় । আলিয়া ভাটের মত বলিউডের অভিনেত্রীদের কথায় দীপাবলি উপলক্ষ্যে আতশবাজির কারনে পথকুকুরদের খুব অসুবিধা হয় । অরবিন্দ কেজরিওয়াল তো দীপাবলি উপলক্ষ্যে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা পর্যন্ত জারি করে দিয়েছিল ।
তবে বামপন্থী, আলিয়া ভাট বা কেজরিওয়াল নয়, দীপাবলি উপলক্ষ্যে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞার প্রচলন শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে । মুঘল আক্রমণকারী আওরঙ্গজেব তখন দেশের শাসন ক্ষমতায় । ১৬৬৭ সালে আওরঙ্গজেব আতশবাজি ফাটানো নিষিদ্ধ করেছিলেন। সেই কারনে কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন যে দীপাবলিতে আতশবাজির উপর নিষেধাজ্ঞা কি মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের কাছ থেকেই শেখা কথিত ধর্মনিরপেক্ষদের ?
চলতি দীপাবলির আবহ এবং বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, এটি জানা গুরুত্বপূর্ণ যে আওরঙ্গজেব, যিনি হিন্দু মন্দিরগুলি ধ্বংস করেছিলেন, তার সময়েও পটকা ফোটানো নিষিদ্ধ করেছিলেন। তার আদেশ বিকানের রাজ্য আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। আদেশটি জারি করা হয়েছিল ১৬৬৭ সালের ৮ এপ্রিল তারিখে। আদেশে লেখা আছে,’আতশবাজি নিষিদ্ধ করার জন্য রাজার প্রদেশের কর্মকর্তাদের লিখুন। শহরে একটি ঘোষণা করুন যে কোনও আতশবাজি করা চলবে না।’ তবে এই আদেশে কোনো উৎসবের উল্লেখ নেই। সময়ের উল্লেখও নেই। এ থেকে বোঝা যায় যে তিনি আতশবাজি নিষিদ্ধ করেছিলেন এই আদেশ অনুসারে, আতশবাজি নিষিদ্ধ করার প্রচলন শুরু হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে। দৈনিক ভাস্করের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজস্থানের আর্কাইভস ডিরেক্টর মহেন্দ্র সিং খড়গাওয়াত বলেছেন, ‘আওরঙ্গজেবের আমলে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আওরঙ্গজেবের আমলের ১৬৬৭ সালের এপ্রিলের চিঠিটি আমাদের কাছে সংরক্ষণাগারে সুরক্ষিত রয়েছে। সেই চিঠিতে দীপাবলির কোনও উল্লেখ নেই, তবে চিঠিটি সঠিক।’ মানুষ এই ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে চলেছে। লোকেরা বলে যে আওরঙ্গজেবও পটকা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কি মহান পরিবেশবাদী এবং দূরদর্শী এই মুঘল হানাদার !
দীপাবলি আসার সাথে সাথেই বামপন্থী-মৌলবাদীরা আতশবাজির ধোঁয়ায় নাকি খুব কষ্টে থাকে । এই তালিকায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো নাম রয়েছে যাদের সিগারেট বা সিগার ধূমপানে কোনো সমস্যা হয় না কিন্তু তিনি দিওয়ালি উপলক্ষে শ্বাসকষ্টে ভোগেন। একইভাবে রোশনি আলীকে নিয়েও সাম্প্রতিক বিতর্কের সৃষ্টি হয় । তাঁর আবেদনের শুনানি করে, কলকাতা হাইকোর্ট দিওয়ালি/কালী পূজার সময় সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে সব ধরনের আতশবাজি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল । অনেককে তখন আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, ভারতের এটাই দুর্ভাগ্য যে বিচারব্যবস্থাতেও রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে । আর তার একতফা কুফল ভোগ করতে হচ্ছে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের ।।