রৌনক হাজরা, ০১ নভেম্বর : ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের অনেক ভুল তথ্যের মধ্যেই বড় হয়ে উঠছে বর্তমান প্রজন্ম । পরিকল্পিতভাবে ভারতের মহান বীরদের মহান কীর্তিগুলোকে ঠাঁই দেওয়া হয়নি ইতিহাসের পাতায় । তেমনি একটা নাম হলেন নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু । যাঁকে আমর “দ্য লিবারেটর অফ ইন্ডিয়া” বলে চিনি । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে দেশবাসীকে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ দিয়েছিলে ভারতের এই মহান বীর । অথচ সেই ইতিহাসকে জনমানসের আড়ালে রেখে দিয়েছিলে ‘নেহেরু এন্ড কোং’ ।
ভারতের ইতিহাসে ৩০ ডিসেম্বর দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । যেটা আধুনিক প্রজন্ম জানেই না বলা চলে । ১৯৪৩ সালের এই দিনে, ভারতীয়রা ১৮৫৭ সালের পর প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারত ভূমির একটি অঞ্চল পুনরুদ্ধার করে । যার নেপথ্যে ছিলেন মহানায়ক নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসু । এই দিনে সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ আন্দামান নিকোবর দীপপুঞ্জকে ব্রিটিশদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল । পোর্ট ব্লেয়ারে ভারতের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন নেতাজী নিজের হাতে । অথচ ভারতবাসীকে প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ দেওয়া সেই নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুকেই অন্তরালে থাকতে হয়েছে ব্রিটিশ ও নেহেরুর ষড়যন্ত্রের কারনে ! নেতাজীর অন্তর্ধান আজও প্রহেলিকা হয়ে আছে । আর আজ ভারতবাসী ব্রিটিশ ও জহরলাল নেহেরুর গোপন বোঝাপাড়ায় সম্পন্ন “ট্রান্সফার ওফ পাওয়ার” বা ক্ষমতার হস্তান্তরকে দেশের স্বাধীনতা বলে উদযাপন করে আসছে । তবে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্নেহধন্য জহরলাল নেহেরু যতই নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করুক না কেন দেশবাসীর মন থেকে ভারত মাতার এই সুযোগ্য সন্তানকে কখনো উপড়ে ফেলতে পারেনি । সেই কারনে গান্ধী বা নেহেরু নয়, ভারতে এমন বহু স্থান আছে যেখানে দেবতা রূপে মন্দিরে পূজিত হন নেতাজী ।
এমনই একটা স্থান হল উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মাসকলাইবাড়ি । এই এলাকায় বজরংবলী মন্দিরে নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর প্রতিমাকে দেবজ্ঞানে পূজো করেন এলাকাবাসী । রাম-সীতা-হনুমান,কৃষ্ণ, শিব-পার্বতীর পাশাপাশি রাখা হয়েছে নেতাজীর মূর্তি। বছরে ৩৬৫ দিনই অন্যান্য দেবদেবীর সাথে পূজিত হন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও । ৬৯ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই পুজো । প্রতিবছর ২৩ জানুয়ারী নেতাজির জন্মদিনে বিশেষ পুজো হয়।
জানা যায়, ১৯২৭ সালে দেবভূমি হৃষিকেশ থেকে আশা এক সাধুর হাত ধরে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। তারপর থেকে তিনি মাসকলাইবাড়ি শ্মশান এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন। এলাকার মানুষদের কাছে তিনি “বুড়া বাবা” নামে খ্যাত ছিলেন । পরবর্তীকালে ১৯৫৩ সালে এই মন্দির স্থাপন করেন। হনুমানের সাথে সাথে তিনি নেতাজির একটি মূর্তি বসান । এই বুড়া বাবার হাত ধরে শুরু হয় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পূজার প্রচলম । আজও নিয়ম মেনে ৩৬৫ দিনই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও অন্যান্য দেবদেবীর সাথে পূজিত হয়ে আসছেন ।।