অধর্মের অন্ধকারকে সরিয়ে সত্যের বহিঃপ্রকাশ করতে আলোর উৎসবে মাতলো পৃথিবী। হিন্দু শাস্ত্র এবং কালীকা পুরাণ অনুযায়ী দেবী পার্বতীর উগ্ররূপ হচ্ছেন দেবী কালীকা । শুম্ভ,নিশুম্ভ, চন্ড,মুন্ড এবং রক্তবীজ কে হত্যা করেন দেবী কালীকা। কালীর কথা উঠলে প্রথম যে কথা মাথায় আসে তা হলো ভগবান মহাদেব শুয়ে আছেন কালীর পায়ের তলায় কিন্তু এর পেছনে থাকা বিশেষ এক কারণ হলো মাতার ক্রোধকে শান্ত করার জন্য ভগবান শিব মাতার পায়ের তলায় শুয়ে পড়েন যাতে এই গোটা ব্রহ্মাণ্ড দেবীর ক্রোধাগ্নির প্রলয় থেকে রক্ষা পায়।
কালী শাক্ত ধর্মের আরাধ্যা হিসেবে পরিচিত, শাক্তধর্ম মনে করে দেবী কালীকার মাধ্যমে এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয়েছে, বাংলার বুকে কালী সাধনার জন্য বিখ্যাত অনেক মনীষীদের বা মহাপুরুষদের জন্ম হয়েছে যেমন, শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সাধক আগমবাগিশ, সাধক কমলাকান্ত ও সাধক রামপ্রসাদ এবং অন্যান্য। সৃষ্টি যখনই সংকটে পড়েছে তখনই শিবের অর্ধাঙ্গিনী মাতা পার্বতীর উগ্ররুপ দেবী কালীকা আবির্ভূত হয়েছেন।
কালীকা পুরাণে বর্ণিত আছে যখন ধর্ম এবং অধর্মের সময় আসে ঠিক সেই মুহূর্তে দেবী কালীকা আবির্ভূতা হন প্রচন্ড উগ্ররূপে। অঞ্জনি পুত্র সংকটমোচন মহাবলী হনুমান ধর্মের ধ্বজা হাতে সামনের দিকে হাঁটেন এবং জোরে জোরে চিৎকার করে সবাইকে সাবধান করেন “মাতা আসছেন” বলে। দেবী বাহনের উপর বসে খড়গ হাতে এক এক করে অসুরদের ধর থেকে মাথা আলাদা করে তাদের বধ করেন। দেবীর ঠিক পেছনে দেবীর গণ অর্থাৎ ৬৪ যোগিনীগন সেই অসুরের রক্তপান করেন এবং বীভৎস শব্দের সাথে উলুধ্বনি দেন। যোগিনীগণকে সামাল দেওয়ার জন্য, জগতপিতা মহাদেবের উগ্রূরূপ ৬৪ ভৈরব তাদের পিছনে হাঁটেন, ভৈরবের বাহন কালো কুচকুচে কুকুরগুলো অসুরের পড়ে থাকা দেহের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়।
দেবী কালীকা’কে নানান রূপে পুজো করা হয়, যেমন – দক্ষিণা কালী,গুহ্য কালী,শ্যামা কালী,বামা কালী, শ্মশান কালী, কৃষ্ণকালী এবং অন্যান্য নামে ডাকা হয়। তবে তন্ত্রসাধনায় কালীকে প্রধান দেবী হিসেবে বিবেচিত করা হয়।
দেবী কালীকা যা কলিযুগের জ্যান্ত দেবী হিসেবে বর্ণিত আছেন। তিনি ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন এবং ভক্তদের উপর আশা বিপদ থেকে রক্ষা করেন। ভক্তদের বিশ্বাস কোন তন্ত্র-মন্ত্র তাদের উপর প্রয়োগ করলে স্বয়ং কালীকা আছেন তাদের রক্ষার্থে। পুরানো সনাতন ধর্ম গ্রন্থ থেকে জানা যায় শ্রীধর নারায়ণের অবতার কল্কি যখন পৃথিবীতে আসবেন ধর্ম রক্ষার্থে কল্কির সাথ দেওয়ার জন্য মাতা কালীকা সাহায্য করবেন।।