এইদিন ওয়েবডেস্ক,পাটনা,২৩ অক্টোবর : বিহারের আরারিয়ার বিজেপি সাংসদ প্রদীপ সিং গত ২১ অক্টোবর একটি বিবৃতি দিয়েছিলেন যে আপনি যদি আরারিয়ায় থাকতে চান তবে আপনাকে হিন্দু হতে হবে । বিহারের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব অভিযোগ করেছেন যে বিজেপি সাংসদরা দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। তেজস্বী বলেছেন যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের ‘হিন্দু স্বাভিমান যাত্রা’র মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের পৃথক করার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও তিনি আরারিয়া থেকে বিজেপি সাংসদ প্রদীপ সিং-এর জ্বালাময়ী বক্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘বিহারে মুসলমানদের দিকে কেউ খারাপ দৃষ্টিতে তাকালে ‘ইঁট সে ইঁট বাজিয়ে দেবো’ । তেজস্বী আরও বলেছেন যে বিহারে যদি দাঙ্গা হয় তবে এর জন্য কেবল নীতীশ কুমার দায়ী থাকবেন।
প্রদীপ সিং গত ২১ অক্টোবর গিরিরাজ সিংয়ের ‘হিন্দু স্বাভিমান যাত্রা’ চলাকালীন একটি বিতর্কিত বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে আপনি যদি আরারিয়ায় থাকতে চান তবে আপনাকে হিন্দু হতে হবে। তার বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভাইরাল ভিডিওতে প্রদীপ সিং বলেছেন,’কেউ গর্ব করে বলে যে সে একজন মুসলিম। তাহলে আমরা নিজেদেরকে হিন্দু বলতে লজ্জা পাব কেন? আমরা নির্বাচনে সবাইকে বলি যে আপনি যদি আরারিয়ায় থাকতে চান, তাহলে আপনাকে হিন্দু হতে হবে। যখন আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেবেন তখন জাত খুঁজবেন, পরিবার খুঁজবেন, বংশ খুঁজবেন… কিন্তু যখন ঐক্যের প্রয়োজন হয়, তখন আপনাকে প্রথমে হিন্দু হতে হবে এবং আপনার জাত ত্যাগ করতে হবে।’
এই বক্তব্যের সমালোচনা করছেন রাজ্যের বিরোধী নেতারা। ঝাড়খণ্ড থেকে ফেসবুক লাইভের সময় তেজস্বী যাদবও এই ঘটনার উল্লেখ করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে বিজেপি সাংসদ রাজ্যের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং আজ নীতীশ কুমার সেই সাংসদকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিয়েছেন।
প্রকৃতপক্ষে,২২ অক্টোবর প্রদীপ সিংয়ের বাড়িতে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করা হয় এক যুবককে। এর পর খবর আসে প্রদীপ সিং সহ বিহারের অনেক নেতার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। প্রদীপ সিং ওয়াই ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পেয়েছেন। তেজস্বী যাদব তার ভিডিওতে বলেছেন,’আজ নীতীশ কুমার খুব খুশি। তিনি মহাত্মা গান্ধীর কথা বলছেন কিন্তু গডসের বংশের প্রচার করছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সীমাঞ্চল এলাকায় যে ভাষা ব্যবহার করছেন তা দাঙ্গা উসকে দেওয়ার চেষ্টা। সেখানে মানুষ পিছিয়ে রয়েছে তারা সেখানে যাননি। দারিদ্র ও বেকারত্বের কথা বললেও তারা এক ভাইকে আরেক ভাইয়ের সাথে মারামারি করার কথা বলছে, আমি আরারিয়া এমপি যে ভাষা ব্যবহার করেছি তার বিরোধিতা করছি।’ তেজস্বী আরও বলেন, এদেশের মাটিতে সবারই ভূমিকা আছে এবং স্বাধীনতায় সবার অবদান রয়েছে। তিনি মানুষকে আশ্বস্ত করেন যে যতক্ষণ তিনি বেঁচে আছেন, বিহারকে যে সাম্প্রদায়িকতার আগুনে নিক্ষেপ করবে তার বিরুদ্ধে তিনি শক্তভাবে দাঁড়াবেন।’
উল্লেখ্য, গিরিরাজ সিংয়ের এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ভাগলপুর থেকে গত ১৮ অক্টোবর। আর তা শেষ হয় ২২ অক্টোবর কিষাণগঞ্জে। আরারিয়ায় মুসলমানদের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। গিরিরাজ সিংয়ের যাত্রা ২১ শে অক্টোবর আরারিয়ায় পৌঁছেছিল। গিরিরাজ সিং এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েকবার বলেছিলেন যে এই যাত্রার উদ্দেশ্য হিন্দুদের একত্রিত করা। তিনি আরও দাবি করেন যে সীমান্ত অঞ্চল “লাভ জিহাদের” কেন্দ্র হয়ে উঠছে।।