এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,২৩ অক্টোবর : বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা বর্তমানে চুড়ান্ত দুর্দশার মধ্যে কাটাচ্ছে ৷ প্রতিদিন ওই ইসলামি রাষ্ট্রের কোথাও না কোথাও হিন্দুদের উপর মুসলিমদের আক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে৷ বাংলাদেশের পটুয়াখালীতে ২১টি হিন্দু পরিবারের প্রায় দেড় একর জমি দখলের চেষ্টা করেছে ২ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তি । ওই দুই ২ মুসলিম যুবদল নেতা বলে জানা গেছে । এবারে বাংলাদেশের লক্ষীপুরের সোনাপুর ইউনিয়নের চরবগা গ্রামের কবিরাজ বাড়ী ও আশেপাশের হিন্দুদের ঘরে ঘরে চিঠি দিয়ে প্রকাশ্যে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য দাওয়াত’ দিয়েছে ইসলামি জিহাদিরা । তারা মূর্তিপূজাকে ইসলাম ধর্মের অবমাননা, ঢাক ঢোল বাজানোকে অপসংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সংগঠনকে ‘ইসকন’কে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসাবে বর্ণনা করে বলেছে ইসলাম গ্রহণ না করলে তাদের নবীর নির্দেশে সকলকে পুড়িয়ে মারা হবে এবং সমস্ত মূর্তি ও ধর্মস্থল ধ্বংস করে দেওয়া হবে । হুমকি চিঠির কথা কোথাও প্রকাশ করলে ভয়ানক পরিণতি হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে ।
জিহাদের পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়েছে :
আস-সালামু আলাইকুম, আশা করি ভালো আছেন পরিবারের সবাইকে নিয়ে। ভালো থাকারই কথা। আমরাও চাই আপনি আপনার পরিবারের সমেত সর্বোচ্চ ভালো থাকেন এবং মৃত্যুর পরে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্বাদ গ্রহন করেন এবং বেহেস্তের সর্বোচ্চ সুখ লাভ করেন। গত ১৭ বছর যেভাবে আওয়ামী লীগের প্রদত্ত দয়ায় আপনারা যেভাবে বনবাস করে আসচ্ছিলেন তখন আপনারা মানুষকে মানুষ হিসেবে গন্য করেন নাই। ৪ নম্বর সোনাপুর ইউনিয়নে আপনারা একটি মাত্র হিন্দু বাড়ী। ভারপরও আপনারা প্রতিনিয়ত ঢাক-ঢোল এবং গান-বাজনা করে যেভাবে আপনাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে আসতেছেন যা একবারে অপসংস্কৃতির সামিল। লক্ষ্মীপূজার নামে আপনারা যে আমদপূর্তি করেন/এইবারও করেছেন তা এক প্রকার অন্যায় এবং ইসলাম ধর্ম অবমাননা করেছেন এবং এতদিন পর্যন্ত করে আসতেছেন । মুসলমানদের আযানের সময়ও আপনারা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার এবং আতশবাজি ফোটানো হয়। বারবার নিষেধ করার পরও আপনারা এইসব কাজ করতেছেন । যা আমাদের নবীজীকে অপমানের সামিল। কারন মূর্তি পূজা, ঢাক-চোল বাজানো, গান গাওয়া এইসব একদম হারাম এবং নবীজী সরাসরি নিষেধ করেছেন এইসব না করার জন্য। মূর্তিপূজার দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার জন্যেই ‘ইসলামী শরিয়াতে’ ছবি অংকন করা বা প্রতিমা, মূর্তি পূজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং এই পাদের জন্যে কঠিন শাস্তি দেওয়া নিয়ে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
জিহাদিরা এরপর লিখেছে,তাছাড়া আপনি এবং আপনার পরিবারের সবাই ইসকন মন্দিরে যাওয়া আসা হয় এক কথায় আপনাদের ইসকন নামক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক রয়েছে। তাই নবীশ্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন সকল প্রাণীর/বাক্তির মূর্তি বিলুপ্ত করি এবং সকল সমাধি-সৌধ ভূমিসাৎ করে দেওয়ার জন্য এবং উক্ত মানুষের হত্যা করে মেরে ফেলার জন্য এবং ইসকনের সাথে জড়িত থাকার জন্য আগুনে পুড়ে মারার কথা বলা হয়েছে।
জিহাদিরা হিন্দুদের হুমকি দিয়ে লিখেছে, ভাই আপনাদেরকে শেষ বারের মত ইসলাম অবমাননা না করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার জন্য দাওয়াত প্রদান করতেছি। কারন ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের মানুষ কিংবা কোন প্রকার নাস্তিক যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তারা কখনো বেহেস্তে যেতে পারবেনা। একমাত্র ও একমাত্রই ইসলাম ধর্মের মানুষ যা মুসলিমরা বেহেস্তের স্বাদ গ্রহণ করবে। তাই আশা করি আপনি ও আপনার পরিবারের সবাই ইসলামের দাওয়াত গ্রহণ করিবেন। তা না হলে অতিসম্বর আপনি ও আপনার পরিবারের মানুষদের হত্যা করে মেরে ফেলা হবে । আরেকটা কথা এই চিঠির কথা আপনি এবং আপনার পরিবার ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি কিংবা পুলিশ কিংবা আইন-আদালতের আশ্রয় নেন তাহলে পরিস্থিতি খুবই ভয়ানক হবে যা আপনার চিন্তা-কল্পনার বাহিরে । ভালো থাকবেন। আশা করি আমার চিঠির প্রত্যক কথা মনোযোগ দিয়ে পড়বেন এবং বুঝবেন।’ জিহাদিরা উর্দুতে কিছু এটা উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছে, ইতি আপনার ও আপনার পরিবারের শুভাকাঙ্ক্ষী।
প্রসঙ্গত,বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর মুসলিমদের নিপিড়নের ঘটনাক্রম কয়েক দশক পুরনো । যা আজও অব্যাহত আছে । ১৯৪৭ সালে আগে পর্যন্ত বাংলাদেশে ৩০ শতাংশের অধিক হিন্দু জনসংখ্যা ছিল । বর্তমানে তা সাত শতাংশের নিচে নেমে এসেছে । দেশ থেকে হিন্দু নিশ্চিহ্ন করতে ইসলামি কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলি ব্যাপক আকারে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে । কথিত ধর্মনিরপেক্ষ বলে পরিচিত শেখ হাসিনার দল আওয়ামিলীগের জমানাতেও এই ধারা অব্যাহত ছিল।
একটা পরিসংখ্যান অনুযায়ী,শেখ হাসিনার জমানায় গত ১৫ বছরে শুধুমাত্র যশোরের চৌগাছার ১১০ হিন্দু পরিবার ভিটে মাটি বিক্রি করে ভারতে চলে এসেছে । বর্তমানে জামাত ইসলামি ও বিএনপি এর মত ইসলামি জঙ্গি দলগুলির হাতে রয়েছে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতা । ফলে সেদেশে হিন্দু নিপীড়নের ঘটনা প্রচুর বেড়ে গেছে ।।