এইদিন ওয়েবডেস্ক,হাওড়া,২১ অক্টোবর : হাওড়ার শ্যামপুর, বাউরিয়ায় দুর্গাপূজোর সময় ইসলামি হামলা এবং বিগত বছরে রামনবমীর শোভাযাত্রায় পাথরবাজির ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দায়ি করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । পাশাপাশি তিনি বলেন, বাংলায় হিন্দুরা জাগছে এবং হিন্দুদের মধ্যে ধর্মীয় উৎসব পালনের প্রবণতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন । আজ সোমবার বিকেলে হাওড়ার রঘুদেবপুরে জনসভা করেন শুভেন্দু অধিকারী । শ্যামপুর ও বাউড়িয়া সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে মা দুর্গার প্রতিমা ভাঙচুর এবং সনাতনীদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে এদিন স্থানীয় একটি ক্লাবের মাঠে প্রতিবাদ সভা হয় । প্রচুর সাধুসন্ত উপস্থিত ছিলেন ওই সভায় । সভার প্রধান বক্তা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ।
দুর্গাপূজা ও লক্ষ্মীপূজা মণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে দায়ি করে,’সব হচ্ছে একটা জায়গা থেকে । আরজি কর করেছেন যিনি তিনি জয়নগর ঘাটিয়েছেন । শ্যামপুরের ঘটনার জন্য দায়ী তিনি । বাউরিয়ায় পাথর ছোড়ালেন তিনি । সব ঘটনার জন্যই একজন দায়ী । ফালাকাটা মন্ডপে ঢুকে বলছে উলুধ্বনি বন্ধ, শঙ্খ ধ্বনি বন্ধ, ঢাক বাজানো বন্ধ, মামার বাড়ির আবদার নয় ! হিন্দুস্থানে থাকবো আর ঢাক বাজানো উলুধ্বনি বন্ধ করতে যাব । এগুলো সব হয়েছে মমতার জন্য।’ তিনি বলেন,’এই জেলা কেন ক্ষতবিক্ষত হবে ? আমরা তো অন্য সম্প্রদায়কে আঘাত করি না । আমরা তো স্বামীজিকে বিশ্বাস করি স্বামীজীর কথা মানি । স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন নিজে ধর্মে আস্থা রাখো অপর ধর্মকে শ্রদ্ধা করো । এই জেলার শিবপুরে রামনবমীর মিছিলে কেন পাথর পড়বে ? কেন সিএএ-কে এনআরসির নাম দিয়ে সাঁতরাগাছিতে ৩৭ টা বাস পোড়ানো হবে ? কেন করমন্ডল এক্সপ্রেস উলুবেড়িয়া এলে অসুস্থ যাত্রীদের ওপর পাথর মারা হবে ? কেন শ্রীকান্ত রায় শহীদ হবে ? কেন মনসাতলার বিজেপি পার্টি অফিস পুড়বে? কেন পৃথিবীর যে প্রান্তে ছোট ছোট ঘটনা ঘটলেই এখানকার সাধারণ মানুষ, হকার, হিন্দু ক্লাব,হিন্দু মন্দির, হিন্দু ব্যক্তি,রাষ্ট্রবাদী দল বিজেপি, মঠ-মিশন, গেরুয়া কেন টার্গেট হবে ? জানতে চাই পুলিশ মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে । শ্যামপুরের দুর্গা প্রতিমাকে যেভাবে তছনছ করা হয়েছে ভাঙ্গা হয়েছে কেন এটা হবে ? কেন বাউরিয়াতে বিসর্জনী শোভাযাত্রায় বড় বড় ইট পাথর মারবে ? জানতে চাই আমরা । এই অত্যাচার আপনারা কতদিন আর সহ্য করবেন ? এবারও এই উলুবেরিয়ায় তৃণমূল প্রার্থীকে ৩ লক্ষ হিন্দু ভোট দিয়েছে । কেন দেন ? হাওড়ায় যখনই কিছু ঘটনা ঘটে তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ কাউকে দেখা যায় না কেন ? কেন দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন না ? কেন আপনারা এই দুষ্কৃতীদের সমর্থন করেন ?’ এত কিছুর পরেও উলুবেড়িয়ার তৃণমূল প্রার্থী এবারের লোকসভায় ৩ লাখ ভোট পাওয়া তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘কেন তৃণমূলকে ভোট দেন আপনারা ?’
তবে এরাজ্যে হিন্দুরা ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে বলে মনে করছেন শুভেন্দু । ভিড়ে ঠাসা জনসভা দেখিয়ে তিনি বলেন,’রাষ্ট্রবাদী হিন্দুরা বেরিয়েছে । আবার অনেকে দূরে দাঁড়িয়ে শুনছেন । যদি আমার লক্ষ্মীর ভান্ডার কেটে দেয় । যদি আমার বার্ধক্য ভাতা কেটে দেয় । যদি লম্বা পুলক আমায় এসে ফাঁসিয়ে দেয় । তবে জাগছে… ভালো লক্ষণ । হরিয়ানা জিতবে বলেছিল… জন্মাষ্টমীর দিন যোগীজি বললেন ‘বাটে গা তো কাটে গা এক রহেগা তো নেক রহেগা’ । বলল হিন্দু তুমি জাতপাত করোনা । হিন্দু তুমি নিজেকে ভাগ করোনা । ওরা চাইছে আমাদের ভাগ করতে । তোমরা এক থাকো… আমরা এক থাকলে নেক থাকবো । হরিয়ানা জম্বুতে আমরা বাটিনি বাংলাতেও আগামী দিনে বাটবে না । কান খুলে ভালো করে শুনে রাখুন আমরা বাটবো না আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো । ৬৪ শতাংশ হিন্দুকে আমি নন্দীগ্রামে এক করেছিলাম । মমতা ব্যানার্জিকে দু হাজারে হারিয়ে দিয়েছিলাম । এবারে ৭২ শতাংশ হিন্দু এক হল । অভিজিৎ গাঙ্গুলীকে একা নন্দীগ্রাম থেকে ৮ হাজার ভোটে লিভ দিল । হচ্ছে আস্তে আস্তে হচ্ছে । পরবর্তী মহারাষ্ট্র নয় বাংলার হিন্দুও এক হচ্ছে ।’
তিনি বলেন,’গণপতি উৎসব শুধু মহারাষ্ট্রের নয় বাংলারও । রামনবমী শুধু এখন উত্তর প্রদেশ নয় । রামনবমী পাঁচলা, ধুলাগড়, উলুবেরিয়া,বাগনান … আমাদেরও । এই যে ছট উৎসব আসছে দেখবেন শুধু ঝাড়খন্ড বা বিহারের লোক করবে না। বাঙালির মা-বোন দিদিরা ও ছটের উপবাস করবে… সূর্য প্রণামও করবে । এই জাগরণ বাংলায় হচ্ছে । গীতা পড়ার অভ্যাস হচ্ছে । তুলসী যারা স্থাপনের মহৎ কর্ম প্রত্যেক বাড়িতে হচ্ছে । শঙ্খ বাজানো, দীপদান, অমাবস্যা- পূর্ণিমা পালন করা, কার্তিক মাস দামোদর মাস হিসেবে পালন করা এই জিনিস বাংলায় অনেক বেড়েছে । আরো খানিকটা বাড়াতে হবে। তারপরে শ্যামপুর, বাউড়িয়ায় যারা করেছেন না আমরা এলে উল্টো করে ঝোলাবো তারপরে সোজা করব ।’
বাংলাদেশের নোয়াখালী ও কলকাতার দ্য গ্রেট ক্যালক্যাটা কিলিংসের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’শ্রীকান্ত রায় মারা গেছে, বলছে শুভেন্দু অধিকারীকে খুন করে দেবে! তাতে ১১০ কোটি ভারতবাসীকে থেমে থাকবে নাকি? ১৯৪৬ সালের লক্ষ্মীপুজোর দিন নোয়াখালীতে দশ হাজার হিন্দু কেটেছ । বাংলাদেশে হিন্দু শেষ করতে পেরেছ ? না, রমনা কালীবাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে ? ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট কলকাতাতে দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা ফিলিংস করেছো, দশ হাজার হিন্দুকে কেটেছ, কলকাতা কি হিন্দু শূন্য হয়েছে ? ওসব হয়না । আমরা সবচেয়ে পুরনো ধর্ম করি… সনাতন । যার আদিও নাই অন্তও নেই । পাঁচ-ছয়-সাত হাজার বছরের পুরনো । ব্রহ্মাণ্ড যেদিন সৃষ্টি হয়েছিল সনাতনের সেদিন জন্ম হয়েছে ।’
উপস্থিত সাধুদের উদ্দেশ্যে হাওড়া জেলায় ধর্মরক্ষা কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘মহারাজ, ধর্ম রক্ষা কমিটি গঠন করুন । হাওড়া জেলা দগ্ধ ক্ষতবিক্ষত । ধর্ম রক্ষা কমিটি হলে আমরা পতাকা ছাড়া যোগ দেবো । এছাড়া বাঁচার কোন রাস্তা নেই । জোট বাঁধার জন্য তৈরি হন । যোগীজির শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমীর দিন ওই কথা স্মরণ করুন … ভাটেগা তো কাটেগা এগ রয়েগা তো নেক রাহেগা । যেটা বাংলাতে খুব দরকার। আমার জাতি কি আমার সম্প্রদায় কি পরে বলব । আমি আগে বলবো আমি ভারতীয়, আমি সনাতনী, আমি রাষ্ট্রবাদী ।’ তিনি বলেন,’ভাবতে পারবেন না মহারাজ ১৯ সালে ছত্রিশ ঘন্টা অবরোধ করে রেখেছিল । গর্ভবতী মা কলকাতাতে প্রসব যন্ত্রণা সামলাতে পারেননি। সাঁতরাগাছিতে লাইন দিয়ে ৩৭ টা বাজ পুড়িয়েছে, বাইশটা সরকারি বাস । করমন্ডল এক্সপ্রেস ভেলোর থেকে রোগী নিয়ে ফিরছিল, উলুবেরিয়া স্টেশনে একটা কাঁচও অস্তিত্ব রাখেনি । এই অত্যাচার কতদিন চলবে মমতা তুমি জবাব দাও ।’
পাশাপাশি তিনি শ্যামপুরে দুর্গাপ্রতিমা ভাঙচুর ও মন্ডপে আগুন ধরানোর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের কাছে এন আই এ তদন্তের জন্য আবেদন জানাবেন বলেও জানিয়েছেন । এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আমি এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা । আমি আপনাদের কথা দিতে পারি, ২০২২ এ লক্ষী পূজোর দিন মমিনপুর ইকবালপুরে হামলা করেছিল । আমি কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে এনআইএ করেছিলাম । ২৫ জন জেলে । আর ওখানে কোন ঝামেলা হয় না । আপনাদের বিরোধী দলনেতা শিবপুর, ডালখোলা রিষড়ায় ২০২৩ সালে রাম নবমীর শোভাযাত্রায় হামলা হয়েছিল আমি কলকাতা হাইকোর্টে গিয়েছিলাম । প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এনআইএ দিয়েছিল । মমতা ব্যানার্জির সরকার সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল । সুপ্রিম কোর্ট আমার আবেদন রক্ষা করে মমতা ব্যানার্জির সরকারের আবেদন বাতিল করে । ডালখোলা, শিবপুর, রিষড়ার ৭৬ জন গুন্ডা এখনো জেলে আছে ।
শ্যামপুর, বাউরিয়ার ঘটনা আর যাতে না হয়, এখানে আপনারা যা সহ্য করার করেছেন.. যাতে শেষ অত্যাচার হয়…আইনি পথে যথাযথ ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমি আমার কাঁধে তুলে নিলাম ।’শুভেন্দু অধিকারী জানান যে কালী পূজার পরে শ্যামপুরে ঐতিহাসিক সমাবেশ হবে ।।