প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০২ জুলাই : করোনার থাবা থেকে রেহাই পায়নি রাজ রাজার শহর হিসাবে পরিচিত বর্ধমান। তাই করোনার প্রভাবের জেরে গত বছরের মতো এবছরও বর্ধমানে রথের চাকাতে পড়লো বেড়ি । সোমবার বর্ধমানের ঐতিহাসিক লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে সমস্ত ধর্মীয় আচার প্রথা মেনে রথের পুজো হল ঠিকই । কিন্তু বহু ভক্তের সমাগমে রথের রশিতে টান পড়লো না । বন্ধ থাকলো রথের উৎসব ও মেলা ।
কথিত আছে বর্ধমান রাজ পরিবারের লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের রথযাত্রার পুজোর সূচনা হয় রাজা মহতাবচাঁদের আমলে। সেই সময়ে রথের দিন বিকালে রথযাত্রা হত কাঞ্চননগরে। আর লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ বাড়ির রথযাত্রা হত সকালে। রাজ-আমলে লক্ষীনারায়ণ জিউ বাড়ির রথ ছিল রুপোর । সেই রথে নারায়ণ শিলা চাপানো হত। পরবর্তীকালে নারায়ণ শিলা একটি কাঠের রথে এবং পিতলের রথে গোপাল মূর্তি বসানো শুরু হয় ।এখানকার দুটি রথই মন্দির চত্বরে থাকে। পথ পরিক্রমায় রথ বের হয় না। ১৯৮৪-র ১০ অক্টোবর প্রয়াত হন উদয়চন্দ। জমিদারি উচ্ছেদের পরও সেই সময় পর্যন্ত লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের রথের উৎসবে জাঁকজমক ছিল।কিন্তু পরবর্তীকালে উৎসবে খানিকটা হলেও ভাটা পড়ে।তবে এখন রাজ ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রেখেছেন জেলার বাসিন্দারাই। রথের দিন মেলা বসে।প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।শুধু বর্ধমান শহর নয়,গোটা জেলা তো বটেই।এতকাল ভিন জেলার বহু মানুষও রাজবাড়ির রথযাত্রা দেখতে জমায়েত হয়েছেন । শাধুমাত্র দুই বছর হল করোনা আবহে সবকিছু উলোট-পালোট ঘটে গেছে । এদিন শুধুমাত্র নিয়ম মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পুজো হল ।পূর্বে রাজার আমলেও মহামারী, খরা, বন্যা অনেক কিছুই হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে রথের পুজো বা উৎসবে কোনদিনই ভাটা পড়েনি।করোনাই এবছর ঐতিহ্যের রথযাত্রায় ছেদ ঘটালো ।।