এইদিন ওয়েবডেস্ক,হরিয়ানা,১৬ অক্টোবর : রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমদের প্রতি কংগ্রেস,বামপন্থী, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি (আপ) ও সমাজবাদী পার্টি (এসপি) প্রভৃতি রাজনৈতিক দলগুলি কেন এত উদার হস্ত হরিয়ানার সাম্প্রতিক বিধানসভার ভোটে কিছু আসনের ফলাফলে প্রমান পাওয়া গেছে । মুসলিম অধ্যূষিত হরিয়ানার নুহ এলাকার আসনগুলিতে কার্যত একশ শতাংশ মুসলিম ভোট পড়েছে কংগ্রেসের ঝুলিতে । এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা । তাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের মত যাবতীয় ভারতীয় পরিচয়পত্র করে দিয়েছে কংগ্রেসের মুসলিম নেতারা । কংগ্রেসের ওই সমস্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে এলাকায় জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটানোর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে ।
মেওয়াত জেলার ৫ টি বিধানসভা আসন রয়েছে । তার মধ্যে নুহ(Nuh) পুনাহানা(Punahana), ফিরোজপুর ঝিরকা(Ferozepur Jhirka) আসন রয়েছে । ওই তিন বিধানসভা এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের ব্যাপক হারে বসতি গড়ে তোলা হয়েছে । ভোটব্যাঙ্কে তার সুফলও পেয়েছে কংগ্রেস । নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, নুহতে ১,৫৪,৯৫৭ টি ভোটের মধ্যে কংগ্রেস পেয়েছে ৯১,৮৩৩ টি ভোট,সেখানে বিজেপি পেয়েছে মাত্র ১৫,৯০২ টি ভোট । ভোট ভাগাভাগি হল কংগ্রেস ৫৯.৩ শতাংশ এবং বিজেপি পেয়েছে ১০.৩ শতাংশ ভোট । পুনাহানার ফলাফল হল ১,৪৬,২৭৯ ভোটের মধ্যে কংগ্রেস ৮৫,৩০০(৫৮.৩ শতাংশ) এবং বিজেপি মাত্র ৫,০৭২(৩.৫ শতাংশ) । ফিরোজপুর ঝিরকায় ১,৮১,১৬৬ ভোটের মধ্যে কংগ্রেস ১,৩০,৪৯৭(৭২%) এবং বিজেপি ৩২,০৫৬(১৭.৭%) । একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে মুসলিম অধ্যুষিত পালওয়াল জেলায় রয়েছে গুরুগ্রাম ও হাথিন বিধানসভা কেন্দ্রতেও । সবকটি আসনেই বিশাল ব্যবধানে জিতেছে কংগ্রেস প্রার্থীরা । নুহ জেলার সামগ্রিক চিত্র যদি লক্ষ্য করা যায় তাহলে ৪,৮২,৪০১ ভোটের মধ্যে কংগ্রেস ৩,০৭,৬৩০(৬৩.৮%) এবং বিজেপি ৫৩,০৩০(১১.০%) ভোট পেয়েছে ।
হরিয়ানার বাসিন্দা রাজপাল দুলার এক্স-এ লিখেছেন, মম্মন খান ৯৮ হাজার ভোটে, আফতাব আহমেদ ৪৭ হাজার ভোটে এবং মোহাম্মদ ইলিয়াস ৩২ হাজার ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। তিনটিই নুহের আসন, তিনটিই কংগ্রেসে গিয়েছে, এর মধ্যে দুটি আসনে বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দিয়েছিল । কিন্তু তারা পরাজিত হয়েছেন । উদারপন্থী দল বলছে, বিজেপির উচিত সম্প্রীতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়া। আপনি নুহানের নলহার শিব মন্দিরে হামলা করেছেন, তবুও বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে কিন্তু আপনি তাদের পরাজিত করেছেন। তারপরে আপনি জিজ্ঞাসা করবেন কেন বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দেয় না।’
‘
প্রসঙ্গত,হরিয়ানার মেওয়াত জেলায় ফিরোজপুর ঝিরকা আসনে ৯৮ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী মাম্মান খান। মাম্মান খান মেওয়াত জেলার মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তারা হিন্দু মুক্ত জেলা করবে । তিনি বলেছিলেন যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে সমগ্র মেওয়াত থেকে হিন্দুদের তাড়িয়ে দেওয়া হবে । তার এই প্রতিশ্রুতিতে ভোটব্যাঙ্কে আস্থাও রেখেছে এলাকার মুসলিমরা । নুহতে হিন্দু পূণ্যার্থীদের উপর হামলার ঘটনার বিষয় উল্লেখ করে রাজপাল দুলার লিখেছেন,’হাইকোর্টে এই গোটা সহিংসতার মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ঘোষিত সেই মম্মন খানই। হরিয়ানায় বিজেপি হয়তো জিতেছে, কিন্তু মেওয়াতে বিপদের ঘণ্টা বেজেছে। সম্পূর্ণ সংঘবদ্ধতা এবং মেরুকরণ হয়েছে। হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনের তিনটি মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র হল নূহ, ফিরোজপুর ঝিরকা এবং পুনহানা।এই তিনটি এলাকা আবারও মুসলিম রাজনৈতিক ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
এখানে বিজেপি মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে, কিন্তু দলটি তাদের জামানতও রক্ষা করতে পারেনি । প্রত্যেক মুসলমানই ভালো করে জানত কাকে ভোট দেবে!এটি স্পষ্ট করে যে মুসলিম সমাজ কতটা দৃঢ়ভাবে এবং স্পষ্টভাবে তার রাজনৈতিক এজেন্ডাকে আটকে রেখেছে। নির্ধারিত এজেন্ডায় তাদের সংহতি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা যে প্রাণশক্তি দেখায় তা অন্যদের শেখা উচিত ।’
তবে হরিয়ানার নুহ জেলায় কংগ্রেসের এই প্রকার ফলাফলের সম্পূর্ণ ক্রেডিট যায় দলের মুসলিম নেতাদের উপর । কারন তারা ব্যাপক হারে এলাকায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের বসতি গড়ে তুলেছে এবং তুলছে । বর্তমানে এলাকায় ৮০ শতাংশই মুসলিম । ভোটার তালিকায় তাদের নামও তুলে দিয়েছে কংগ্রেসের স্থানীয় মুসলিম নেতারা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের কেউ ১০ বছর তো কেউ ১৫ বছর ধরে বসবাস করছে ।শুধু তাই নয়, নুহের আদি বাসিন্দাদের সম্পত্তিতেও ভাগ বসাচ্ছে এই রোহিঙ্গারা। স্থানীয় হিন্দু মেয়েদের লাভ জিহাদে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তরিত করে রোহিঙ্গা মুসলিমরা তাঁদের ঘরবাড়ির দখল নিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে । অভিযোগ যে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীরা সব কিছু জেনে শুনেও ভোটব্যাঙ্ক বাড়াতে স্থানীয় মুসলিম নেতাদের এই প্রকার ষড়যন্ত্র গোপন করে যাচ্ছেন । এবারের হরিয়ানার বিধানসভার ভোটে কংগ্রেস জেতার বিষয়ে প্রায় একশ শতাংশ নিশ্চিত ছিল ওই সমস্ত রোহিঙ্গাদের ভরসাতেই । কংগ্রেসের সমীকরণ ছিল যে তারা হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক থেকে জাতপাতের অঙ্ক কষে জাঠেদের বিজেপি থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে । কিন্তু হরিয়ানায় জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটানোর কংগ্রেসের ষড়যন্ত্র বিজেপি ব্যাপকভাবে তুলে ধরার হিন্দু জাঠেরা কংগ্রেসের উপর আস্থা দেখায়নি । ফলশ্রুতিতে কংগ্রেসকে পরপর তিনবার হরিয়ানা বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে ।।