এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১১ অক্টোবর : মহাষ্টমীর দিন দুঃস্থ মানুষের হাতে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুরের বাসিন্দা সমাজসেবী ও পশুপাখি প্রেমী যুবক শেখ আমির । আজ শুক্রবার নিজের এলাকার বেশকিছু অসহায় মহিলাদের হাতে একটা করে নতুন শাড়ি ও মশারির পাশাপাশি ময়দা,সরিষের তেল এবং বিস্কুট প্রভৃতি খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে আসেন তিনি । আমির বলেন,’বর্তমানে শারদোৎসব চলছে ৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর দিন পাড়ায় ঘুরতে বেড়িয়ে দেখি খেটে খাওয়া হিন্দু পরিবারগুলির মহিলারা বছরের অন্যান্য দিনের মতই ছেঁড়া,নোংরা শাড়ি পরে গৃহস্থালির কাজকর্ম করছে । দেখে খুব কষ্ট হল । তাই আজ মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে তাঁদের হাতে নতুন শাড়িসহ যৎসামান্ন কিছু নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী তুলে দিয়ে এলাম ।’ কিন্তু ওই সমস্ত সামগ্রী কেনাকাটার খরচ কিভাবে জোগাড় হল ? এই প্রশ্নের উত্তরে আমির বলেন, ‘আমি কিছু দিয়েছি, আর বাকি টাকা বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছি ৷’
প্রসঙ্গত,ভাতার থানার মুরাতিপুরের বাসিন্দা শেখ আমির নিজেও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান । পারিবারিক অভাবের কারনে লেখাপড়া বেশি দূর হয়নি । খুব অল্প বয়স থেকেই মুরাতিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সরকারি জায়গায় ঘুমটিতে মোবাইলের যন্ত্রাংশের খুচরো ও পাইকারি ব্যবসা করছেন । পাশাপাশি পুরনো বাইক কেনাবেচার ব্যবসা ছিল তার । বর্তমানে তিনি দুই কন্যাসন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে পৃথক সংসারে থাকেন । দুই মেয়ের মধ্যে বড় কলেজের ছাত্রী এবং ছোট স্কুল পড়ুয়া ।
এলাকায় পশুপ্রেমী বলে পরিচিত শেখ আমির । দুর্ঘটনায় আহত বা রোগগ্রস্থ পথ কুকুর ও কোনো পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজের খরচে তিনি চিকিৎসা করেন । এলাকার পশু চিকিৎসকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে বর্তমানে নিজেই চিকিৎসা করেন বলে জানান আমির । একারণে কোথায় দুর্ঘটনায় পথ কুকুর আহত হলে বা পশুপাখি অসুস্থ হলেই তার ডাক পড়ে । পাশাপাশি সমাজসেবাও করেন তিনি । হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের উৎসবে চাঁদা সংগ্রহ করে পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়ে আসে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের দুঃস্থ মানুষের হাতে । তার তার এই প্রকার মানবিকতার জন্য কুমুদ সাহিত্য মেলায় ‘সমাজ রত্ন’ দিয়ে তাকে সম্মানিত করা হয় ।
শেখ আমির বলেন,’আমি নিজেও খুব কষ্ট করে সংসার চালাই । কিন্তু কোনো মানুষ বা পশুপাখিকে অসহায় অবস্থার দেখে থাকতে পারি না । তাদের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করি সর্বদা । আমার কিছু আর্থিকভাবে স্বচ্ছল বন্ধু আছে । তারাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সেই টাকায় কেনাকাটা ও পশুপাখির চিকিৎসার খরচ চালাই ।’ তিনি বলেন, ‘স্কুলে যখন পড়তাম তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কবিতা পড়েছিলাম । কবিতার নাম খেয়াল না থাকলেও শেষের পঙতি আজও আমার মনে আছে । সেটা হল : ‘আমার ভাণ্ডার আছে তোমা-সবাকার সামনের/ তোমরা চাহিলে এ পাত্র অক্ষয় হবে/ভিক্ষা-অন্নে বাঁচাব বসুধা-মিটাইব দুর্ভিক্ষের ক্ষুধা’ । কবিগুরু এই বাণীই আজ আমি আমার জীবনের আদর্শ করে নিয়েছি ।’।