এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ অক্টোবর : ‘অভয়া’র ধর্ষণ-খুনের ন্যায়বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ছয় জন ডাক্তার ওই আন্দোলনে যোগ দেন । তাঁদের মধ্যে অনিকেত মাহাতো নামে একজন অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারের শারিরীক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল । আরজি করের চিকিৎসক সৈকত নিয়োগী বৃহস্পতিবার সকালে জানিয়েছিলেন যে অনিকেতের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁর মূত্রে কিটোন বডি পাওয়া গিয়েছে। তাঁকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার । শেষ পর্যন্ত অষ্টমীর রাতেই অনিকেত মাহাতোকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সে করে আরজি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সিসিইউতে রেখে তার চিকিৎসা চলছে। আরও এক জুনিয়র ডাক্তারের শারিরীক অবস্থা দ্রুত অবনতি হচ্ছে বলে জানা গেছে ।
এদিকে এই অচলাবস্থা কাটাতে ডাক্তারদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তিনি আজ শুক্রবার এক্স-এ এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘আমি মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছি যে অনিকেত মাহাতো, যিনি শনিবার সন্ধ্যা থেকে ‘আমরণ অনশনে’ সাতজন প্রখ্যাত জুনিয়র ডাক্তারের একজন, স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডর্নিয়া ক্রসিং-এ অনশন-ধর্মঘট চলছে। সপ্তম দিন, তবুও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার তাদের প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখায়নি বা তাদের ন্যায্য দাবি বিবেচনা করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের সাথে সত্যিই অনিকেত মাহাতোর স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বিগ্ন, যিনি আরজি কর-এর ধর্ষণ ও হত্যার শিকারের বিচার চেয়ে আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন। আমি অনিকেত মাহাতোর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমি আন্তরিকভাবে আশা করি যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিষয়টির সাথে যোগাযোগ করবে যাতে জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের অনশন শেষ করতে পারে এবং তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি পুনরুদ্ধার করতে পারে।’
শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। অনিকেত মাহাতো ছাড়া আর যে ডাক্তাররা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা হলেন :তনয়া পাঁজা, স্নিগ্ধা হাজরা, সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, অর্ণব মুখোপাধ্যায় এবং পুলস্ত্য আচার্য। তাদের মধ্যে স্নিগ্ধা হাজরার শারিরীক অবস্থা ভালো নেই বলে জানা গেছে । এদিকে পূজো মণ্ডপে মণ্ডপে ‘অভয়া পরিক্রমা’র জের। ত্রিধারা সম্মিলনী পুজো মণ্ডপের ভিতরে বিচার চেয়ে স্লোগান দেওয়ার অপরাধে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করে ফের বিতর্কে জড়িয়েছে কলকাতস পুলিশ । আসলে ষষ্ঠীর দিন থেকে জুনিয়র চিকিৎসকরা আর জি করের নির্যাতিতার একটি প্রতীকী মূর্তি নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ‘অভয়া পরিক্রমা’ করেন। শহরের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক মণ্ডপে তাঁদের এই পরিক্রমা চলে। বুধবার সন্ধ্যেবেলা জুনিয়র চিকিৎসকরা ত্রিধারা সম্মিলনীর মণ্ডপে প্রতীকী মূর্তি পরিক্রমার সময় পুজো দেখতে আসা বেশ কিছু মানুষ ‘বিচার চাই’ স্লোগান দেন। তাদের কেন গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ডাক্তাররা জানতে চাইলে পুলিশ কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি বলে অভিযোগ । তাঁদের নিঃশর্তে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভও দেখানো হয়। যদিও বৃহস্পতিবার ওই ৯ জনকে আলিপুর আদালতে তুলে আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ।
এদিকে রাজ্যের এই পরিস্থিতির কারনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে একটা কড়া চিঠি লিখেছে ৬৯ জন বিশিষ্ট চিকিৎসক নিয়ে গঠিত সংগঠন ফেডারেশন অফ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন বা ‘ফেমা’ । অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের শরীর খারাপ হলে গোটা ডাক্তার সমাজ কর্মবিরতিতে যাবে বলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন । পাশাপাশি আজ শুক্রবার রাজ্য সরকারকে বৈঠকে বসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে ।।