এইদিন ওয়েবডেস্ক,রাজস্থান,১০ অক্টোবর : নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ওয়াজিদ খান (Wajid Khan)নামে একজন ইসলামি সন্ত্রাসী সমর্থক তথা হিন্দু বিদ্বেষীকে গ্রেফতার করেছে রাজস্থান পুলিশ ধৃত যুবক রাজস্থানের আজমিরের গাগওয়ানার কায়দ রোড এলাকার বাসিন্দা ।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়শই হিন্দু বিদ্বেষী ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের সমর্থনে পোস্ট করত ওই মুসলিম যুবক৷ পুলিশ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের বিষয়বস্তু এবং তার কোথায় কোথায় যোগাযোগ আছে তা পরীক্ষা করছে। কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ ।
রাজস্থানের আজমির জেলার গাওয়ানার কায়দ রোডের বাসিন্দা ওয়াজিদ খান সোশ্যাল মিডিয়া সাইট এক্সে নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন । এর পাশাপাশি তিনি তার বায়োতে ‘আল জাজিরা ইংলিশ’ লিখছেন। তবে সে আদপেই ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের মুখপত্র কাতারের নিউজ আউটলেট আল জাজিরার জন্য কাজ করে কিনা স্পষ্ট নয় ।
আল জাজিরা তার হিন্দুফোবিক বিষয়বস্তু এবং ইসলামি সন্ত্রাসবাদের প্রচার করার জন্য কুখ্যাত । সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাসের হয়ে কাজ করতে গিয়ে ওই সংবাদমাধ্যমের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আইডিএফের হাতে খতমও হয়েছে । ওয়াজিদ খান কয়েকদিন আগে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর দ্বারা নিরীহ ইহুদি বেসামরিক নাগরিকদের উপর নৃশংস হামলার প্রথম বার্ষিকী স্মরণে একাধিক টুইট পোস্ট করেছিল । প্রসঙ্গত গত বছরের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে ব্যাপক নাশকতা চালায় হামাস । প্রায় ১,২০০ জন্য নিরীহ এবং নিরস্ত্র ইসরায়েলিকে বর্বরোচিত ভাবে খুন করে ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি । নৃশংসতায় হার মানিয়ে দেয় মধ্যপ্রাচ্যের আর এক কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ইসলামি স্টেটকেও । প্রায় ২৫০ জন ইসরায়েলিকে পনবন্দি করে গাজায় নিয়ে যায় । সেখানে বিভিন্ন বয়সী ইহুদি মেয়েকে গনধর্ষণ করে হামাস সন্ত্রাসীরা । এখনো শতাধিক বন্দি আছে হামাদের হাতে । গত ৭ অক্টোবর সেই নৃশংসতার বর্ষপূর্তিতে ওয়াজিদ খান তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ‘৭ই অক্টোবরের স্মরণীয় ছবি।’ এর সঙ্গে একটি ছবিও পোস্ট করেছেন সে ।
এই পোস্টে একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসী একজন ইসরায়েলি সৈন্যকে ট্যাঙ্কের উপরে ধরে রাখতে দেখা গেছে । ওয়াজিদ খান বিজয় ইমোজি সহ এই ছবি পোস্ট করে ইসলামিক সন্ত্রাসীদের মহিমান্বিত করেছিল । সে আরও লিখেছে, এই দিনটি কোনো উৎসবের চেয়ে কম নয়, যা ফিলিস্তিন থেকে ইসরায়েলের বিশাল পরাজয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। কয়েকটি পৃথক পোস্টে ওয়াজিদ খান লিখেছে,শুভ ৭ অক্টোবর। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের সুপার পাওয়ারের গর্ব ভেঙে দেয়। আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছে,ইসরায়েলের ওপর হামলার আজ এক বছর পেরিয়ে গেছে, তার শক্তিশালী হওয়ার ভ্রম ভেঙে গেছে। সে ইসরায়েলে হামলাকারী হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে ‘গাজার সিংহ’ বলে বর্ণনা করেছে ।
ওয়াজিদ খান শুধু ইহুদিদের প্রতি নয়, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিও বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। ইহুদি ও হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করতে সে প্রাণনাশের হুমকি পর্যন্ত দিতে দ্বিধা করে না। সে মুসলিম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো হিন্দুদের ঘৃণা করার প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল । ইয়েতি নরসিংহানন্দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ওয়াজিদ খান অন্যতম সোচ্চার সোচ্চার ব্যক্তি ছিল । ওয়াজিদ খান ৪ অক্টোবর নরসিংহানন্দ এবং তার অনুগামীদের মৃত্যুর হুমকি জারি করে বলেছিল,গতকাল আতি (তার নাম নিয়ে ঠাট্টা করার সময়) নরসিংহানন্দ নবী-ই-করিমকে অপমান করার সাহস দেখিয়েছিলেন… কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। আর এখন সেই বদমাশের শিষ্যরাও নবী ও হযরত আলীকে নিয়ে গর্ব করছে… তাদের জন্য একটাই চিকিৎসা আর তা হলো হযরত আলীর জুলফিকার! উল্লেখ্য, জুলফিকার মুসলিম নবী মহম্মদের জামাতা আলী ইবনে আবি তালিবের তরবারির নাম। ওয়াজিদ খান এই পোস্টের মাধ্যমে বলতে চেয়েছিলেন যে হিন্দু সাধক নরসিংহানন্দ এবং তার অনুসারীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, যা ইসলাম প্রত্যাখ্যানকারীদের মুসলিম খলিফা ও শাসকদের আমলে ভোগ করতে হয়েছিল।
অন্য একটি পোস্টে সে লিখেছে,ইসরায়েলের ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে শুনুন মূর্তি পূজা সম্পর্কে তাদের মতামত কী। তাদের মতে, ইহুদি গ্রন্থ তালমুড অনুসারে, যারা মূর্তি পূজা করে তাদের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার নেই। সারা বিশ্বের জন্য এই ৬ বিলিয়ন মানুষ বোঝা, যারা মূর্তি পূজা করে ভণ্ডামি করছে, এখন শুধু দুর্ভিক্ষ তাদের ধ্বংস করতে চায়, মূর্খেরা একবিংশ শতাব্দীতেও পাথরের ক্যালেন্ডার আর ভন্ডামীর পূজা করছে! এই ভিডিওতে এই ইহুদি ধর্মীয় নেতা ভারতের নামও লিখেছে ওয়াজিদ খান ।
বাংলাদেশে যখন শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হয়, তখন সে কট্টরপন্থীদের সমর্থনে মতামত প্রকাশ করেছিল । গত ৫ আগস্ট, বাংলাদেশে ইসলামিক পতাকার একটি ছবি পোস্ট করার সময়,সে লিখেছিল, সমস্ত মুকুট ছুড়ে ফেলা হবে, সমস্ত সিংহাসন ভেঙে ফেলা হবে। থাকবে শুধু আল্লাহর নাম! ইসলামী আন্দোলন। এটি কট্টর ইসলামপন্থী মোহাম্মদ ফয়েজের একটি কবিতার একটি অংশ। এই কবিতার মাধ্যমে সে ভারতেও অভ্যুত্থানের স্বপ্ন দেখে । শশাঙ্ক শেখর ঝাসহ বহু এক্স ব্যবহারকারী এই ইসলামি হিন্দু বিদ্বেষী ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এই মুসলিম যুবককে গ্রেফতারের দাবি তোলে । অবশেষে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে । আজমের পুলিশ এক্স-এ জানিয়েছে, উক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে ।।