এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ অক্টোবর : আবারও বিতর্কে কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল । হাসপাতালের এক তরুনী পিজিটি চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সারা দেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। এখন এই হাসপাতাল থেকে আরও একটি গুরুতর খবর এসেছে, যেখানে ১০ জন ডাক্তার সহ মোট ৫৯ জন কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডাক্তার, ইন্টার্ন এবং হাউস স্টাফ। বহিষ্কৃতদের মধ্যে রয়েছে রেডিওথেরাপির হাউজ স্টাফ সৌরভ পাল । তাকে শনিবার বহিষ্কার করা হয় । তার এমডি-র থিয়োরির খাতা পুনর্মূল্যায়ন করা হবে বলে জানা গেছে । শুধুমাত্র সৌরভ নন,আরও অন্তত চারজন হাউজ স্টাফ গতবছর এমডি পাস করেছেন। আর জি করেই বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে কর্মরত তারা । তাদের খাতাও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে৷ গত বছর আর জি করে বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির ‘পিজিটি’দের এমডি পরীক্ষা হয়।অভিযোগ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ইনভিজিলেটর বিতর্কিত চিকিৎসক ডাঃ বিরূপাক্ষ বিশ্বাসের মদতেই এমডি-র বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির উত্তরপত্রে অবাধ গনটোকাটুকি হয়েছিল । ইতিমধ্যেই ওই সমস্ত বিতর্কিত ডাক্তারদের এমডি-র থিয়োরির খাতা পুনর্মূল্যায়ন করার যাবতীয় কাজ বর্তমান কলেজ অধ্যক্ষ ডাঃ মানস ব্যানার্জি সেরে ফেলেছেন বলে জানা গেছে।
সন্দীপ ঘোষের জমানাতে ব্যাপক অনিয়ম হয় আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে । তরুনী পিজিটি চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর থেকে একে একে সেই দুর্নীতি ফাঁস হতে থাকে । আরজি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তদন্ত কমিটি যাদের বহিষ্কার করেছে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে যৌন অসদাচরণ, হুমকি ও চাঁদাবাজির মত গুরুতর অভিযোগ । বলা হচ্ছে যে এই ব্যক্তিরা প্রাক্তন আরজি কর অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ ছিলেন । রিপোর্ট অনুসারে, এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অন্য ছাত্রদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে যে তারা না মানলে তারা পরীক্ষায় ফেল করবে বা তাদের হোস্টেল থেকে বের করে দেবে। এছাড়াও, জুনিয়র কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে বাধ্য করা, যৌন অসদাচরণ, চাঁদাবাজি, মিথ্যা এফআইআর দায়ের এবং শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে একজন অশোক পান্ডে নামে একজন হাউস স্টাফ রয়েছে, যিনি প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। এছাড়া আর জি করে ক্যানসার চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকলেও শহরের বড় হাসপাতালে নিয়ম করে রোগী পাঠানো হত বলে অভিযোগ । এই ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহার করা হয় । আরজি করের স্টু়ডেন্টস ডিন ডাঃ শান্তনু আচার্যর মদতেই এসব অনিয়ম চলত । শুধু তাইই নয়, সপ্তাহের নির্দিষ্ট শনিবারে হাসপাতালের আউটডোরে রীতিমতো প্রাইভেট প্র্যাকটিস চালানোর অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে । আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির মামলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) গ্রেফতার করেছে সন্দীপ ঘোষকে । বর্তমানে সে জেলে ।
বহিষ্কৃত চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন – সৌরভ পাল, আশিস পান্ডে (যারা সিবিআই গ্রেফতার করেছিল), অভিষেক সেন, আয়ুশ্রী থাপা, নিরঞ্জন বাগচি, শরীফ হাসান, নীলাগ্নি দেবনাথ, অমরেন্দ্র সিং, সাতপাল সিং এবং তানভীর আহমেদ কাজী। তাদের শনিবার থেকে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অভিযুক্তদের নাম রাজ্য মেডিকেল কাউন্সিলের কাছেও পাঠানো হবে, যাতে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করা যায় এবং তাদের ডাক্তারি নিবন্ধন বাতিল করা যায় ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জুনিয়র কর্মীদের গভীর রাতে মাদক ও মদ কিনতে বাধ্য করার এবং কমনরুমে অশ্লীল কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ইনস্টিটিউটের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির তদন্ত শেষে তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়াও, মহিলাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির “নির্দিষ্ট প্রমাণ” পাওয়া গেছে তাদের আরও তদন্ত এবং পদক্ষেপের জন্য অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি (ICC) এর কাছে রেফার করা হয়েছে।
এদিকে, আরেকটি ঘটনা, ধর্ষণ-হত্যা মামলার পর নিরাপত্তার দাবিতে অনশনে থাকা জুনিয়র চিকিৎসকদের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের ন্যায্য দাবিও মানছে না, তাই তারা অনির্দিষ্টকালের আমরণ অনশন শুরু করেছে।।