এইদিন ওয়েবডেস্ক,গাজা,০৬ অক্টোবর : ফিলিস্তিনের মধ্য গাজায় একটি মসজিদে ইসরায়েলি বোমা হামলায় কমপক্ষে ২৪ ফিলিস্তিনি নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হয়েছে। আজ রবিবার ভোরে ইসরায়েলি বাহিনী দেইর আল-বালাহ শহরের ওই মসজিদে বোমা হামলা চালায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দেইর আল-বালাহ শহরে অবস্থিত ‘শাহাদা আল-আকসা মসজিদে’ বোমা হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ২৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৯৩ জন। গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মসজিদটিতে অনেক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন। আর তাদের ওপরই ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বোমা হামলা করেছে। যদিও ইসরায়েল দাবি করেছে যে হতাহতরা সবকটাই হামাস সন্ত্রাসী । তারা মসজিদে ঘাঁটি করে ইসরায়েল বাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল । মসজিদটি হামাসের কমান্ড সেন্টার ছিল এবং বোমা হামলার আগে বেসামরিক লোকজনের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল বলেও জানিয়েছে আইডিএফ । এক্স পোস্টে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, মসজিদটি হামাসের ‘কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল কমপ্লেক্স’ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এদিকে হামলার পরের ফুটেজে দেখা গেছে, উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মৃতদেহ বের করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে অনেকের লাশ চাপা পড়ে রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। গত এক বছর ধরে টানা হামলায় ৪১ হাজার ৮৫০ জনের বেশি নিহত এবং ৯৭ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে। তার সিংহভাগই হামাস সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসীদের সহযোগী বলে দাবি আইডিএফের । ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় গাজার উপত্যকার ৯০ ভাগের বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছে গাজার ১৯ লাখের বেশি বাসিন্দা। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা থেকে রেহাই পায়নি হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, আশ্রয় শিবির, এমনকি জাতিসংঘ ভবনও। কারন ওই সমস্ত ভবনগুলিতে সাধারণ মানুষকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিল ফিলিস্তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হামাস ।
আজ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন,’আজ, ইসরাইল সভ্যতার শত্রুদের বিরুদ্ধে ৭ টি ফ্রন্টে আত্মরক্ষা করছে। আমরা গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, সেই বর্বর যারা ৭ই অক্টোবর আমাদের লোকদের খুন, ধর্ষণ, শিরচ্ছেদ ও পুড়িয়ে দিয়েছে ।’ তিনি বলেন,’আমরা লেবাননে যুদ্ধ করছি হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে, বিশ্বের সবচেয়ে ভারী সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন, যেটি আমাদের উত্তর সীমান্তে ৭ ই অক্টোবরের চেয়েও বড় গণহত্যার পরিকল্পনা করছিল, এবং এটি প্রায় এক বছর ধরে ইসরায়েলি শহর ও শহরগুলিতে রকেট হামলা করেছে ৷ আমরা ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে এবং ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যারা একসাথে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমরা জুডিয়া এবং সামরিয়াতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যারা আমাদের শহরের কেন্দ্রস্থলে বেসামরিক লোকদের হত্যা করার চেষ্টা করছে। এবং আমরা ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, যেটি গত সপ্তাহে সরাসরি ইসরায়েলে ২০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং যেটি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই ৭ ফ্রন্ট যুদ্ধের পিছনে দাঁড়িয়েছে।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ইসরায়েল যেহেতু ইরানের নেতৃত্বে বর্বরতার শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, সব সভ্য দেশকে ইসরায়েলের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানো উচিত। তবুও প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতারা এখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের জন্য লজ্জা।ইরান কি হিজবুল্লাহ, হুথি, হামাস এবং তার অন্যান্য প্রক্সিদের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে? অবশ্যই না। সন্ত্রাসের এই অক্ষ একসঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু যেসব দেশ এই সন্ত্রাসী অক্ষের বিরোধিতা করে তারা ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানায়। এটা অপমানজনক৷ ইসরায়েল তাদের সমর্থন সহ বা ছাড়াই জিতবে। কিন্তু যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পরও তাদের লজ্জা অব্যাহত থাকবে।এই বর্বরতার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার জন্য, ইসরায়েল তাদের বিরুদ্ধে সভ্যতাকে রক্ষা করছে যারা আমাদের সকলের উপর ধর্মান্ধতার অন্ধকার যুগ চাপিয়ে দিতে চায়। নিশ্চিন্ত থাকুন, ইসরায়েল যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত লড়াই করবে – আমাদের স্বার্থে এবং বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য।’
প্রসঙ্গত, এর আগে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করতে পশ্চিমা নেতাদের ডাক দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ । ম্যাক্রোঁ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গাজার সংঘাতে ব্যবহৃত ইসরাইলের অস্ত্রের চালান স্থগিত করে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথে অগ্রসর হওয়া উচিত। তাতে করে চলমান সংঘাত এড়ানো যাবে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, লেবাননে এ মুহূর্তে উত্তেজনা এড়ানো সবচেয়ে জরুরি। কারণ দেশটি নতুন গাজা হতে পারে না । যদিও ফরাসি প্রেসিডেন্টের মুখের উপর কড়া জবাব দিয়ে দিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ।।