এইদিন ওয়েবডেস্ক,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা,০৫ অক্টোবর : ফের একবার এরাজ্যের নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল । উঠছে রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন । আসলে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জয়নগরের মহিষমারি এলাকার চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রী শুক্রবার বিকেলে টিউশন পড়তে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি । আজ শনিবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে পুকুর থেকে উদ্ধার হয় তার নিথর ক্ষতবিক্ষত দেহ । পরিবারের দাবি, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে ৯ বছরের ওই শিশুকন্যাকে । অভিযোগ যে রাতেই স্থানীয় মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ জানাতে গেলেও পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে । ঠিক সময়ে পুলিশ তল্লাশি চালালে শিশুটিকে বাঁচানো যেত বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
এদিকে আজ ওই শিশুকন্যার মৃতদেহ উদ্ধারের পর গোটা এলাকায় জনরোষ ছড়িয়ে পড়ে । ক্ষিপ্ত জনতা মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালায় । প্রচুর মহিলাকেও দেখা যায় সেই দলে । ফাঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । পাশাপাশি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ । খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশবাহিনী সেখানে এলে পুলিশ-জনতা কার্যত খন্ডযুদ্ধ বেধে যায় । মহকুমা পুলিশ আধিকারিককে ঘেরাও করে রাখে উত্তেজিত জনতা। এক পুলিশ কর্মীকে ঝাঁটাপেটা করতে দেখা যায় স্থানীয় মহিলাদের । যদিও রাতেই সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্ত ১৯ বছরের এক যুবককে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে পুলিশ । কিন্তু তারপরেও অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে আজ শনিবার সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে ক্ষিপ্ত জনতা ।
এই ঘটনায় রাজ্য সরকার এবং রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিজেপি । সকালে মহিষমারিতে নিহত কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পালকে পুলিশ আটকে দেয় বলে অভিযোগ । এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে পথ অবরোধ করে তুমুল বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেত্রী । তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজে লিখেছেন, ‘জয়নগরের মহিষমারিতে মাত্র ৯ বছরের বালিকাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জয়নগর থেকে সরাসরি।পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে পুলিশের বাঁধার মুখে পড়তে হয়।মমতার দলদাস পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে ও চলবে।আর জি করের ঘটনার মতন প্রমাণ লোপাট করতে আমরা দেব না।’ তার আগে তিনি মমতা ব্যানার্জির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে লিখেছিলেন,’বাংলায় আবার আরেকটি নৃশংস ঘটনা! জয়নগরের মহিষমারিতে মাত্র ৯ বছরের বালিকাকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।গত এক বছরের বাংলায় একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রমাণিত যে মমতা ব্যানার্জীর শাসনে পুলিশ প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ। মমতা ব্যানার্জি নেতৃত্বে বাংলার আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে।বাংলার সাধারণ মানুষ এবং মহিলারা ঝাঁটা হাতে রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছে। বাংলার নারীদের রক্ষা না করে মমতার প্রশাসন অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করে। ব্যর্থ পুলিশমন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত।’
দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, ‘দেবীপক্ষেই ধর্ষিতা এবং মৃতা বাংলার মেয়ে৷ কুলতলীতে একটি ৯ বছরের মেয়েকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। টিউশন থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে গেলে বাড়ির লোক থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ। আজ সেই নাবালিকার দেহ পাওয়ার পর থানায় ভাঙচুর চালায় সাধারণ মানুষ।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার সর্বত্রই অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ শাসক দলের মদতে চলছে দেদার বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ। যার ফল ভোগ করছে সাধারণ মানুষ।’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আশঙ্কা যে ওই শিশুটি গনধর্ষণের শিকার । তিনি এই বর্বরোচিত ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পেজে লিখেছেন, ‘স্তম্ভিত! শিহরিত! কুলতলী থানা এলাকার কৃপাখালী এলাকায় টিউশন পড়ে ফেরার পথে বলপূর্বক তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হলো চতুর্থ শ্রেণীর একজন নাবালিকা ছাত্রীকে। পরে নদীর চর থেকে গ্রামবাসীরা উদ্ধার করলেন ছোট্ট মেয়েটির নিথর দেহ। মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ বাংলার অপদার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার প্রশ্ন, দেবীপক্ষের সূচনাতেও নিস্তার নেই বাংলার মেয়েদের! আপনার অপশাসনে আর কতগুলি বাংলার মেয়ের এই পরিণতি হবে!! ছিঃ ।’
তিনি নিজের সংসদীয় ক্ষেত্র বালুরঘাটে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিহত শিশুটির নামকরণ ‘বিজয়া’ হিসাবে করে জানান যে আজ যেমস্ত জায়গায় দুর্গাপূজার উদ্বোধন আছে সেখানে তিনি গেলেও পূজোর উদ্বোধন না করে প্রতিবাদ জানাবেন ।।