এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাংলাদেশ,৩০ সেপ্টেম্বর : জামাত ইসলামি ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির (বিএনপি) মত ইসলামি জঙ্গি দলগুলি ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশে কট্টরপন্থী মানসিকতা ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে । পাকিস্তানের কায়দায় ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগে হিন্দুদের উপর প্রায় দিনই হামলার ঘটনা ঘটছে বাংলাদেশে । সম্প্রতি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সামনেই উৎসব মণ্ডল নামে ১৫ বছরের এক হিন্দু কিশোরের উপর প্রাণঘাতী হামলা চালায় জামাতের জঙ্গিরা । ওই ছোট্ট ছেলেটির রক্তাক্ত পোশাক খুলে উল্লাস প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও করে । এবারে ফেসবুকের একটা পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার শোভনদন্ডী গ্রামের বাসিন্দা পার্থ বিশ্বাস নামে এক হিন্দু ছেলের বিরুদ্ধে ধর্মনিন্দার মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বাংলাদেশের জঙ্গির দল । যদিও পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে গেলে তার প্রাণ বেঁচে যায় বলে জানা গেছে । এদিকে জঙ্গিদের দল থানা ঘেরাও করে ওই হিন্দু যুবককে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ প্রদর্শন করে । তার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে । বাংলাদেশ হিন্দু জাগরণ মঞ্চ জানিয়েছে, ‘পটিয়া থানার রাস্তায় চলাচলের সময় মাদ্রাসার ছাত্ররা হিন্দু বউদের দেখলেই বলছে ওদের হাতে “পার্থকে” তুলে দিতে, না দিলে শোভনদন্ডী গ্রামে একটা হিন্দু পরিবার ও থাকতে দিবে না। হিন্দুরা মহাভারতের প্রস্তুতি নিন।’
এদিকে ফেসবুকে যে পোস্ট ঘিরে বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গিরা ওই হিন্দু ছেলেটিকে গনধোলাই দিয়ে প্রাণে মারতে চেয়েছিল সেই পোস্টে ইসলাম বা ইসলামের নবির নামগন্ধ নেই । পার্থ বিশ্বাস নামে ওই ছেলেটি শুধু লিখেছিলেন,’প্রিয় হিন্দু ভাই বোন । ধর্মের জন্য রাজপথে নামতে পারছো না তো তুমি ফেসবুক বা অন্যান্য প্লাটফর্ম এ ধর্ম নিয়ে লেখো সেটাও পারছো না তো যারা ধর্ম নিয়ে আন্দোলন করছে তাদের সার্পোট করো সেটাও পারছো না তবে তুমি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকো, যা হচ্ছে তা দেখো। কিন্তু তোমায় কে বললো যারা ধর্ম নিয়ে আওয়াজ তুলছে তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার এই সাহস তুমি পাও কোথায় । এই ধর্মে অনেক ভাগ্য করে জন্ম নিয়েছি, ধর্মের অপমান তো মানবো না। আর যারা আমার ধর্ম নিয়ে উল্টা পাল্টা বলবি তাদের আমি আমার উত্তরে জবাব দিবো এতে যদি কেউ বলিস ভাই তুই খারাপ করতেছস এটা ভালো না তাহলে তোদের বলি তোদের জন্য আমার ভালো হওয়ার কোনো দরকার নাই আমি যেমন আছি এমনই থাকবো। জয় শ্রী রাম ।’
এই পোস্টের কারনে বাংলাদেশের ইসলামি জঙ্গিদের বিষনজরে পড়ল ওই হিন্দু যুবক তা স্পষ্ট নয় । ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস তার এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছে, ‘আরেক হিন্দু ছেলে পার্থ বিশ্বাসকে মব লিঞ্চিংয়ের চেষ্টা। মুহম্মদকে অপমান করার মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় জিহাদিরা তাকে পুলিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পটিয়ায়।’ ওই এক্স হ্যান্ডেলে একটা ভিডিও পোস্টও করা হয়েছে । যে ভিডিওতে পার্থ বিশ্বাসকে পুলিশ গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ইসলামি জঙ্গিদের ছুটে পিছু ধাওয়া করতে দেখা যায় । তারা গাড়িটিকে ঘিরে ফেলে । পুলিশের সামনেই জঙ্গিরা পার্থকে এলোপাথাড়ি কিল, চড় মারতে শুরু করে । পুলিশ গাড়িটি পিছিয়ে নিয়ে গেলে জঙ্গির দল পিছু ধাওয়া করে হামলা চালায় । যদিও ওই হতভাগ্য হিন্দু যুবকের কি পরিণতি হয়েছে তা জানা যায়নি । তবে ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাস জানিয়েছে পার্থ বিশ্বাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে । তাই আশা করা হচ্ছে যে ছেলেটি অন্তত বেঁচে আছে ।
হিন্দু ভয়েস নামে আর এক এক্স হ্যান্ডেলে দাবি করা হয়েছে যে পার্থ বিশ্বাসকে কাল্পনিক ধর্মনিন্দার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে । তার নাম দিয়ে ভুয়া ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়।’
প্রসঙ্গত,দিন কয়েক আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি দিঘীনালায় চাকমা সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালিয়েছিল বাঙালি মুসলিমরা । বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে পক্ষপাতদুষ্ট ও একতরফা প্রেস রিলিজে বলা হয় যে,গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল জনগণের গণপিটুনিতে মোহম্মদ মামুন (৩০), পিতা মৃত নুর নবী নামক একজন যুবক নিহত হয় ।’ সাম্প্রদায়িক হিংসার যাবতীয় দায় চাকমা সম্প্রদায়ের উপর চাপিয়ে দেয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ।
অবশ্য পরে বাংলাদেশের একটা সংবাদ মাধ্যমে জানা যায় যে ঘটনার দিন মোহম্মদ মামুন নামে ওই দুষ্কৃতী দিঘীনালায় একটা দোকানে বসে ছিল । সেই সময় পূর্ব শত্রুতার জেরে অপর এক মুসলিম যুবক তাকে দোকান থেকে টেনে বের করে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারে । পরে মুসলিমদের এলাকার রটিয়ে দেওয়া হয় যে চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজনের গনধোলাইয়ে ওই দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে৷ এরপর চাকমা সম্প্রদায়ের উপর হামলা চালায় বাঙালি মুসলিমরা ।
হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশ হিন্দু জেনোসাইড এক্স-এ লিখেছে,’বাঙালি মুসলমান বসতি স্থাপনকারীরা লুটপাট ও ধ্বংস করছে উপজাতীয় পাহাড়ি দোকান! এর মধ্যে কিছু দোকান ছিল হিন্দুদের! এ পর্যন্ত ৪০ জন আদিবাসী নিহত!হিন্দুদের মতো উপজাতি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বিলুপ্ত হতে চলেছে!’ ভয়েস অফ বাংলাদেশি হিন্দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আদিবাসীদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং অফিসে হামলা চালাতে বসতি স্থাপনকারী সন্ত্রাসী ক্যাডারদের সরাসরি মদদ দিচ্ছে। বাংলাদেশের আর্মির সামনে বাড়ি, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জ্বলছে। তাদের জন্য লজ্জা।’
আজ চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার শোভনদন্ডী গ্রামের ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় শুভঙ্কর চক্রবর্তী নামে এক বাংলাদেশি হিন্দু জাগরণ মঞ্চের ফেসবুক পেজে লিখেছেন,’উৎসব মন্ডল এর মত ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম পটিয়া উপজেলায়………..প্রথমে উৎসব মন্ডল, তারপর শ্রেষ্ঠা হালদার, সর্বশেষ এবার পার্থ বিশ্বাস পিন্টুকে ধর্ম অবমাননার গুজব রটিয়ে চট্টগ্রাম পটিয়া উপজেলার থানার সামনে আন্দোলন চলছে। বাংলাদেশে সনাতন ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করলে কোন বিচার ব্যাবস্থা করা হয় না, কিন্তু অন্য ধর্মের চুল পরিমান কিছু হলেই তারা আন্দোলন এর ডাক দিয়ে দেশটাকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেয়।আসলে এগুলো সব হিন্দুদের টার্গেট করে করে জাতিকে ধূলিসাৎ করার মহা পরিকল্পনা চলছে।বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত হিন্দু ছেলেমেয়েদের মিথ্যা ধর্ম অবমাননা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য সকল হিন্দু সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন এর ডাক দেওয়া উচিত বলে মনে করি আমি। এরকম চক্রান্ত আর মেনে নেওয়া যায় না।’।