কংগ্রেসের সৃষ্টি ‘ওয়াকফ বোর্ড আইন’ নিয়ে এখন দেশ জুড়ে জোর চর্চা চলছে । অনেকে এই আইনকে ভারতে ইসলামিকরণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম বলে অভিযোগ করেন । বিশেষ করে ‘ওয়াকফ বোর্ড আইন’ ভারতের হিন্দুদের অস্তিত্বের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক বলে দাবি করেন অনেক আইনজীবী । এই আইনে ওয়াকফ বোর্ডকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে । যেকোনো সম্পত্তি ওয়াকফ নিজের বলে দাবি করলে তা ফিরে পেতে সর্বশান্ত হয়ে যেতে হবে যেকোনো পরিবারকে ! এমনকি তামিলনাড়ুর ১,৫০০ বছরের অধিক প্রাচীন মন্দিরসহ একটা আস্ত হিন্দু গ্রামকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করেছে ওয়াকফ বোর্ড । বিহারের ৯০ শতাংশের অধিক হিন্দু অধ্যুষিত একটা আস্ত গ্রামকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করে অবিলম্বে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দিয়েছে বিহার ওয়াকফ বোর্ড । অথচ এত কিছুর পরেও কেন্দ্র সরকার যখন ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ এনেছে, তা নিয়ে বিরোধিতা শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস,বামপন্থী,তৃণমূল কংগ্রেস, আসাদউদ্দিন ওয়াইসির এআইএমআইএম-এর মত দলগুলি । নেটিজেনদের আশঙ্কা যে ওয়াকফ বোর্ডকে যদি কংগ্রেসের প্রনয়ন করা আইনের হিসাবে চলতে দেওয়া হয় তাহলে গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি বা মোতেরার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের উপর ওয়াকফ বোর্ড নিজেদের দাবি পেশ করে দেবে । পশ্চিমবঙ্গের কিছু মৌলবীকে প্রকাশ্যে দাবি করতে শোনা গেছে যে কার্যত গোটা কোলকাতা শহরটাই ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি । যা এককথায় খুবই বিপজ্জনক প্রবনতা বলে মনে করছেন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষরা ।
ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ নিয়ে বিতর্কের মাঝে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, কংগ্রেস ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য যা ‘মঙ্গল’ করেছে তার এক দশমাংশও করতে পারেনি খোদ মুসলমানরা । এই কারনে কংগ্রেস ও গান্ধী পরিবারকে নিজেদের ‘মসীহা’ ভাবে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ! উলটো দিকে শতাব্দী প্রাচীন ওই দলটি দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ হিন্দুদের কার্যত কবর খুঁড়ে রেখে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে । কিন্তু কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাদের সেই গভীর ষড়যন্ত্রে লাগাম পড়ে যায় ।
২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদী যখন দেশের সংসদ নির্বাচনের জন্য জোর প্রচারণা শুরু করেছিলেন, কংগ্রেস ইতিমধ্যে বুঝতে পেরে গিয়েছিল যে তাদের সরকারের বিদায় আসন্ন ।নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার মাত্র পাঁচ মাস আগে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে কংগ্রেস সরকারের এক মন্ত্রী কপিল সিব্বাল, যিনি একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত, সংসদে “ওয়াকফ বোর্ড আইন ধারা ৪০” নামে একটি অত্যন্ত বিপজ্জনক আইন পাস করিয়েছিলেন । দেশের সম্পত্তি নিয়ে এটা ছিল এক অদ্ভুত আইন… যেমন মনমোহন সিং বলতেন যে দেশের সম্পত্তিতে প্রথম অধিকার (আইন) মুসলমানদের। তাই আইনি রূপ দিতে ওয়াকফ বোর্ডকে এদেশের আইনের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ আদালতের ঊর্ধ্বে মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। কপিল সিব্বল এবং তার কংগ্রেস সরকার এই আইন আনার পর থেকেই…এই সংশোধনীর মাধ্যমে, যদি দেশের ওয়াকফ বোর্ডের যেকোন দু’জন ধর্মগুরু ঘোষণা করেন যে নির্দিষ্ট সম্পত্তির মালিকানা আমাদের ওয়াকফ বোর্ডের… তাহলে মন্দির হোক বা সরকারি বেসরকারি জমিজায়গা… তা কেড়ে নেওয়া রাজ্য সরকারের দায়িত্ব হয়ে যায়। তিন দিনের মধ্যে ওয়াকফ বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য সরকার । এখানে রাজ্য সরকারের হাত-পা বেঁধে দিয়ে গেছে কংগ্রেস । অতঃপর, সম্পত্তির মালিক, যিনি সম্পত্তির প্রকৃত অধিকারী, তার মামলা কোনো আদালতে দায়ের করা যাবে না এবং তাকে কেউ রক্ষাও করতে পারবে না। তিনি বাধ্যতামূলক ওয়াকফ বোর্ড আদালতে তার মামলা দায়ের করবেন এবং যথারীতি মামলা হেরে যাবেন । দেশের কোনো জেলা আদালত, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার শুনানি করতে পারে না…অর্থাৎ কোনো আদালতে এই মামলা করা যাবে না।এই কারণে, মুসলিম ওয়াকফ বোর্ড এখন রেল ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সম্পত্তির অধিকারী বোর্ডে পরিণত হয়েছে।
অথচ হিন্দুরা এই আইন অসহায়ভাবে দেখছে। দেশের মাত্র ৩ শতাংশ হিন্দু এই আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বাকি হিন্দুরা গড্ডালিকা প্রবাহে চলছে । নিত্যদিনের চাহিদা মিটে গেলেই তারা খুশি ! অবশ্য সরকারি ভাতা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রভৃতি নিয়ে তারা যথেষ্ট আগ্রহী । ভাতা পেলে ভোট এবং রান্নার গ্যাস বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়লে ভোট নয়….ওয়াকফ বোর্ড আইন সংশোধনী আইন প্রণয়ন হল কি না হল তাতে তাদের কিছু যায় আসে না । কিন্তু তারা আজ এটা বুঝতে পারছে না যে কংগ্রেস সরকার চলে যাওয়ার সাথে সাথে হিন্দুদের কি সর্বনাশ করে দিয়েছে এই ওয়াকফ বোর্ড ৪০ নম্বর সংশোধনী এনে । এখনও এই আইন কার্যকর আছে । তবে অনুমান করা হচ্ছে যে নরেন্দ্র মোদী এই আইন সসংশোধন করতে সক্ষম হবেন ।
এদিকে কংগ্রেসেরও তার ষড়যন্ত্রের চক্র চালিয়ে যাচ্ছে । কৃষকদের আন্দোলনের নামে পাঞ্জাব থেকে সারা দেশে নৈরাজ্য ছড়িয়ে দেশকে কাঁপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে । ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ খুল্লামখুল্লা বিরোধিতা করছে তারা, যাতে এই আইন সংশোধন করে তাদের এবং মুসলমানদের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পরেশ ধানানি নামে এক গুজরাটি নেতার প্রতিদিনের ফেসবুক পোস্ট থেকে আপনি জানতে পারবেন কীভাবে কংগ্রেস গুজরাট ও দেশকে বিপর্যস্ত রাখতে চায়…! কংগ্রেসের এত বড় ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও, আজও দেশের সর্বত্র কংগ্রেসীরা হিন্দুদের শুভাকাঙ্ক্ষী হওয়ার ভান করে। যা হিন্দুদের জন্য বিশ্বাসঘাতকতার সামিল । নিজের ধর্ম পরিচয় প্রকাশ্যে আনতে অনিচ্ছুক রাহুল গান্ধী হিন্দু ভোট পেতে বিগত লোকসভার আগে ‘সাধুর অবতার’-এর রূপ নিয়েছিলেন । গলায় গৈরিক উত্তরীয়, মুখ ভর্তি দাঁড়ি গোঁফ, মন্দিরের সামনে ধ্যান মূদ্রায় বসে ছবি তুলিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে হিন্দু ভোটব্যাংক টানার মরিয়া চেষ্টা করেন । কিন্তু ভোট মিটতেই রাহুল গান্ধীর ‘অবতার’ রূপ গায়েব হয়ে গেছে । এরপরেও এক শ্রেণীর হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ গান্ধী নেহেরু পরিবারের তাঁবেদারি চালিয়ে যায় । বেশিরভাগ হিন্দুরা আজও তাদের শত্রু আর বন্ধুকে চিহ্নিত করতে পারেনি । আর কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মত কিছু কথিত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল আজ পর্যন্ত তাদের মূর্খতার পূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে । কংগ্রেসের প্রকৃত স্বরূপ জানতে হলে শুধু ওয়াকফ বোর্ড সম্পত্তি আইন ২০১৩ ধারা ৪০ পড়লেই স্পষ্ট হয়ে যাবে । এই ধারায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ওয়াকফ বোর্ডকে । আর ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৪ বিল পাশ করে কংগ্রেসের যুক্ত করা ওই ধারা বাতিল করার প্রস্তাব করেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার । আর তাতে বেজায় চটেছে কংগ্রেস, বামপন্থী,তৃণমূল কংগ্রেস, আসাদউদ্দিন ওয়াইসিসহ মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ সংখ্যক মানুষ ।।