শ্যামসুন্দর ঘোষ,পূর্বস্থলী(পূর্ব বর্ধমান),২৯ সেপ্টেম্বর : দিন ছয়েক আগে শ্বশুরবাড়িতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় এক মুসলিম গৃহবধূর । বাপের বাড়ির ইচ্ছার বিরুদ্ধে ময়নাতদন্ত না করেই শুশুরবাড়ির লোকজন তাড়াহুড়ো করে বধূর দেহ কবরস্থ করে দিয়েছিল বলে অভিযোগ । শেষ পর্যন্ত বধূর বাবার আবেদনের ভিত্তিতে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠালো পুলিশ । পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী-১ ব্লকের নাদনঘাট পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বড়ঢেক এলাকার ঘটনা । আজ রবিবার নাদনঘাট থানার পুলিশ গ্রামের কবরস্থান থেকে মৃত বধূ শবনম খাতুনের দেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে ।
জানা গেছে,মেমারী থানার সিদ্ধড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা সেখ নাসের আলির ছোট মেয়ে শবনম খাতুন। নাদনঘাট থানার অর্ন্তগত বড়ঢেক গ্রামের বাসিন্দা জুলহাস মোল্লার বড় ছেলে ফিরোজউদ্দিন মোল্লার সঙ্গে দেখাশোনা করে ২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী তার বিয়ে হয় । নাসের আলি বলেন,’৫,০০০ টাকার দেনমোহর ধার্য্যে মুসলিম শাস্ত্রমতে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। পাত্রপক্ষের দাবী মত আমি নগদ ১,০০,০০০ টাকা,৬ ভরি সোনার গহনা, খাট, বিছানা আলমারী ও সমস্ত দান সামগ্রী বরপন বাবদ দিয়েছিলাম । পরে আমার মেয়ে একটি কন্যাসন্তানের জন্মও দেয়। আমার নাতনি ফারহিনা খাতুন বর্তমান বয়স আড়াই বছর।’
তার অভিযোগ, ‘কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকেই আমার মেয়ের উপর অত্যাচার শুরু হয় । এনিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশিসভাও বসে । কিন্তু তাতেও মেয়ের উপর শারিরীক ও মানসিক অত্যাচার বন্ধ হয়নি ।’
জানা গেছে,গত ২৩ সেপ্টেম্বর সকাল প্রায় সাড়ে ১০ টা নাগাদ বধূর শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন করে জানানো হয় যে শবনম খাতুন খুব অসুস্থ, তাকে মন্তেশ্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । এরপর বাপের বাড়ির লোকজন তড়িঘড়ি মন্তেশ্বর হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় । কিন্তু তারা সেখানে শবনম বা তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের দেখতে পায়নি । সকাল প্রায় ১১টা নাগাদ ফের তাদের ফোন করে বলা হয় যে, শবনমকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়েছে । তারা বর্ধমান যাচ্ছে । এর কিছুক্ষন পরেই ফের ফোন করে বলা হয় বধূ মারা গেছেন।
মৃতার বাবা নাসের আলি বলেন,’একথা শোনার পর দুপুর প্রায় আড়াইটা নাগাদ আমরা মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে ছুটে যাই । কিন্তু আমাদের মৃতদেহ দেখতে দেওয়া হয়নি । কোনক্রমে আমার স্ত্রী রওসনা বিবি আমার কন্যার মৃতদেহ দেখে ফেলে, দেখা যায় যে আমার কন্যার মাথার পিছনের অংশ কোন ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত করার ফলে বেশ কিছুটা অংশ ফুলে আছে এবং সারাদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । মেয়ের কান ও নাক দিয়ে রক্তক্ষরন হয়েছে। এই দেখে আমরা দেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য বলি । কিন্তু আমাদের কথায় কোনো গুরুত্ব না দিয়ে দেহ দ্রুততার সঙ্গে কবর দিয়ে দেওয়া হয় । বাধ্য হয়ে আমরা বাড়ি ফিরে আসি ।’
তিনি আরও বলেছেন, পরে বেশ কিছু লোক মারফত আমরা জানিতে পারি যে, আমার মেয়ের মৃতদেহ গত ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পুনরায় কবর থেকে তোলা হয় । আমাদের সন্দেহ যে আমার মেয়েকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ।’ জানা গেছে,কবর থেকে মেয়ের দেহ তুলে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়ে শুক্রবার(২৭ সেপ্টেম্বর) নাদনঘাট থানায় একটা লিখিত আবেদন জানান মৃতার বাবা । সেই আবেদনের ভিত্তিতে আজ সকালে কবর থেকে দেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ । যদিও মৃতার শ্বশুরবাড়ির দাবি যে টেবিল ফ্যান চালাতে গিয়ে তড়িতাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বধূর । পুলিশ জানিয়েছে,ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারন জানা যাবে ।।