তত্রৈকস্থং জগৎ কৃৎস্নং প্রবিভক্তমনেকধা। অপশ্যদ্দেবদবস্য শরীরে পাণ্ডবস্তদা ।। ১৩ ।।
তখন অর্জুন পরমেশ্বর ভগবানের বিশ্বরূপে নানাভাবে বিভক্ত সমগ্র জগৎ একত্রে অবস্থিত দেখলেন।
ততঃ স বিস্ময়াবিষ্টো হৃষ্টরোমা ধনঞ্জয়ঃ।
প্রণম্য শিরসা দেবং কৃতাঞ্জলিরভাষত ।। ১৪ ।।
তারপর সেই অর্জুন বিস্মিত ও রোমাঞ্চিত হয়ে এবং অবনত মস্তকে ভগবানকে প্রণাম করে করজোড়ে বলতে লাগলেন।
অর্জুন উবাচ
পশ্যামি দেবাংস্তব দেব দেহে
সর্বাংস্তথা ভূতবিশেষসঙ্ঘান্।
ব্রহ্মাণমীশং কমলাসনস্থম্
ঋষীংশ্চ সর্বানুরগাংশ্চ দিব্যান্ ।। ১৫ ।।
অর্জুন বললেন হে দেব! তোমার দেহে দেবতাদের, বিবিধ প্রাণীদের, কমলাসনে স্থিত ব্রহ্মা, শিব, ঋষিদের ও দিব্য সর্পদেরকে দেখছি।
অনেকবাহৃদরবজ্রনেত্রং
পশ্যামি ত্বাং সর্বতোহনন্তরূপম্।
নান্তং ন মধ্যং ন পুনস্তবাদিং পশ্যামি বিশ্বেশ্বর বিশ্বরূপ ।। ১৬।।
হে বিশ্বেশ্বর! হে বিশ্বরূপ! তোমার দেহে অনেক বাহু, উদর, মুখ এবং সর্বত্র অনন্ত রূপ দেখছি। আমি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
কিরীটিনং গদিনং চক্রিণং চ
তেজোরাশিং সর্বতো দীপ্তিমন্তম্।
পশ্যামি ত্বাং দুর্নিরীক্ষ্যং সমস্তাদ্ দীপ্তানলার্কদ্যুতিমপ্রমেয়ম্ ।। ১৭ ।।
কিরীট শোভিত, গদ্য ও চট্টলারী, সর্বত্র দীপ্তিমান, তেজঃপুঞ্জ-স্বরূপ, দুনিদ্রিত। প্রদীপ্ত অগ্নি ও সূর্যের মতো প্রভাবিশিষ্ট এবং অপ্রমেয় স্বরূপ তোমাকে আমার সর্বত্রই দেখছি।
তুমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং
ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্।
তুমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা
সনাতনস্তুং পুরুষো মতো মে ।। ১৮।।
তুমি পরম ব্রহ্ম এবং একমাত্র জ্ঞাতব্য। তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয়। তুমি অব্যয়, সনাতন ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পরম পুরুষ। এই আমার অভিমত।
অনাদিমধ্যান্তমনন্তবীর্যম্
অনন্তবাহুং শশিসূর্যনেত্রম্।
পশ্যামি ত্বাং দীপ্তহুতাশবক্ত্রং
স্বতেজসা বিশ্বমিদং তপস্তম্ ।। ১৯ ।।
আমি দেখছি তোমার আদি, মধ্য ও অন্ত নেই। তুমি অনন্ত বীর্যশালী ও অসংখ্য বাহুবিশিষ্ট এবং চন্দ্র ও সূর্য তোমার চক্ষুদ্বয়। তোমার মুখমণ্ডলে প্রদীপ্ত অগ্নির জ্যোতি এবং তুমি স্বীয় তেজে সমস্ত জগৎ সন্তপ্ত করছ।
দ্যাবাপৃথিব্যোরিদমন্তরং হি
ব্যাপ্তং ত্বয়ৈকেন দিশশ্চ সর্বাঃ।
দৃষ্ট্বাদ্ভূতং রূপমুগ্রং তবেদং
লোকত্রয়ং প্রব্যথিতং মহাত্মন্ ।। ২০।।
তুমি একাই স্বর্গ ও মর্ত্যের মধ্যবর্তী অন্তরীক্ষ ও দশদিক পরিব্যাপ্ত করে আছ। হে মহাত্মন্! তোমার এই অদ্ভুত ও ভয়ংকর রূপ দর্শন করে ত্রিলোক অত্যন্ত ভীত হচ্ছে।
অমী হি ত্বাং সুরসঙ্ঘা বিশন্তি
কেচিদ ভীতাঃ প্রাঞ্জলয়ো গৃণস্তি।
স্বস্তীত্যুত্ত্বা মহর্ষিসিদ্ধসঙ্ঘাঃ
স্তবস্তি ত্বাং স্তুতিতিঃ পুষ্কলাভিঃ ।। ২১ ৷৷
সমস্ত দেবতারা তোমার শরণাগত হয়ে তোমাতেই প্রবেশ করেছেন৷ কেউ কেউ ভীত হয়ে জরজোড়ে তোমার গুণগান করছেন । মহর্ষি ও সিদ্ধেরা ‘জগতের কল্যাণ হোক’ বলে প্রচুর স্তুতি বাক্যের দ্বারা তোমার স্তব করছেন ।